সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল বাংলাদেশে ছাত্রলীগ কর্মী হেনস্থার পুরনো ভিডিও
ভাইরাল ভিডিওতে এবছর জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা কলেজে ছাত্রলীগ কর্মীদের বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জুলাই মাসে একদল মহিলার দুজন মহিলাকে একটি থামের সাথে বেঁধে রাখার ভিডিও ভুয়ো সাম্প্রদায়িক (communal) দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দু (Hindu) মহিলাদের উপর অত্যাচারের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের হলেও তা সেদেশের বর্তমান বিশৃঙ্খল ও হিংসাত্মক পরিস্থিতির নয়। ভিডিওটিতে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী ছাত্র লীগের সদস্যদের সংঘর্ষ দেখা যায়।
আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন এবং তার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র নেতৃত্বাধীন আন্দোলন গত সোমবার শেষ হয়। হাসিনার প্রস্থান উদযাপন করা হলেও, বর্তমানে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সহ আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপর হিংসাত্মক আক্রমণ করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলি জানায়, বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৭ জেলায় হিন্দুদের উপর নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে একদল মহিলাকে অন্য মহিলাদের একটি থামের সঙ্গে বেঁধে তাদের গালিগালাজ করতে ও হুমকি দিতে শোনা যায়। ভিডিওটি বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুদের দৃশ্য দাবি করে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুদর্শন বাংলা তাদের এক্স পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখে, "মুসলিম নারী হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে'... বাংলাদেশে হিন্দুরা ভীত..."।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের হলেও তা সেদেশের বর্তমান বিশৃঙ্খল ও হিংসাত্মক পরিস্থিতির নয় এবং তাতে কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা দেখা যায় না যেমনটা ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে।
আমরা প্রথমে ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ১৭ জুলাই ২০২৪-এ প্রকাশিত বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদনগুলি থেকে জানা যায় ভিডিওতে ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীদের তাদের সহপাঠী বাংলাদেশ ছাত্র লীগের কর্মীদের বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজ ২৪-এর একটি প্রতিবেদনে ওই ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট দেখা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে শিক্ষার্থীদের বেঁধে রাখা হয়েছে তারা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সদস্য। জাগো নিউজ২৪-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রীরা কলেজে এবং তারপর তাদের আবাসিক ছাত্রাবাসে ছাত্র লীগের সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। তারা বিসিএল সদস্যদের বেঁধে রাখে এবং পরে জনসমক্ষে তাদের শাস্তি হিসাবে ওঠবস করায়।
এর থেকে সুত্র নিয়ে, আমরা ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করে এই ঘটনা সম্পর্কিত স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাই।
ঢাকা এজ এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে অন্য ছাত্রীদের তাদের সহপাঠীদের বেঁধে ফেলতে দেখা যায়। ঢাকা এজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বেঁধে রাখা ছাত্রীদের মধ্যে একজনের পড়নে বোরখা দেখা যায়, যা মুসলিমদের ধর্মীয় পোশাক।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই ছাত্রীদের কেবলমাত্র ছাত্রলীগের সাথে সংযোগের জন্য বেঁধে রাখা হয়েছিল; প্রতিবেদনে কোনও সাম্প্রদায়িক কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও, আমরা জুলাই মাসে সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখি যেখানে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে সমর্থনকারী এবং সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে এই ধরনের সংঘর্ষের বেশ কয়েকটি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।