সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি সহ ছড়াল বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির পোস্টার
বুম যাচাই করে দেখে "বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি" সে দেশের একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। দলটি নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত নয় এখনও।
বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির (Bangladesh Trinamool Party) পোস্টার (Poster) ছড়িয়ে সোশাল মিডিয়ায় বিভান্তিকর দাবি করা হচ্ছে জয় বাংলা বলে পশ্চিমবঙ্গকে (West Bengal) বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে বুম বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি সে দেশের একটি স্বতন্ত্র একটি রাজনৈতিক দল, ভারতের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টারটিতে দেখা যায় জয় বাংলা শ্লোগান সহ বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির চেয়ারপার্সন জুলিয়া আক্তার ও মহাসচিব হাসান খালেদ তালুকদার এর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পোস্টরটিতে লেখা রয়েছে, "বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি জনগণের ন্যায্য দাবী আদায়ের পার্টি। গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টিতে দলে দলে যোগ দিন। প্রচারে: বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন ঢাকা ১০০০।"
ফেসবুকে ওই পোস্টারটি সহ ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে যাতে লেখা, "বন্ধুরা কিছু কি বুঝতে পারছেন? জয় বাংলা করে পুরো বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে।"
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: তৃণমূল কংগ্রেস বিকল্প— সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্যের গ্রাফিক ভুয়ো
তথ্য যাচাই
বুম গুগলে "বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি" কিওয়ার্ড সার্চ করে একাধিক প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারী একুশে সংবাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আখরাম খাঁ হল মিলনায়তনে "বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি" রাজনৈতিক দলটি আত্মপ্রকাশ করে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির চেয়ারপার্সন জুলিয়া আক্তার, মহাসচিব হাসান খালেদ তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক এসকে কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
৩০ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে নথিভুক্তকরণের জন্য যে সব রাজনৈতিক দলের তালিকা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টিরও নাম। বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত দল ৩৯ টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে নাম নথিভুক্তকরণের সুপারিশ করেছে প্রায় ৮০ টি রাজনৈতিক দল। ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনের খবর।
বুম বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির চেয়ারপার্সন জুলিয়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, "তৃণমূল কংগ্রেস ভারতীয় এবং বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি বাংলাদেশের, ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা নেই আগামী দিন গুলোতেও থাকবে না।"
বুম বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক এসকে কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির পথচলা শুরু হয়। সারা দেশেই তাদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ চলছে।
বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে সে দেশে রাজনৈতিক দলটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের হদিস পাওয়া যাবে।
"জয় বাংলা" স্লোগান
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে কোনও রাজনৈতিক দলের নথিভুক্তকরণ প্রক্রিয়া হয়, ১৯৫১ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্টের ২৯ এ ধারা অনুযায়ী। ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে "জয় বাংলা" স্লোগান নতুন করে ব্যবহার করতে দেখা যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একই স্লোগানের ব্যবহার হতে দেখা যায়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্লোগানের ইতিহাস অবশ্য পরাধীন ভারতের স্বাধীবতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আরও পড়ুন: গণেশের ছবি দেওয়া ইন্দোনেশীয় নোট ২০০৮ সালেই বাতিল হয়