ভোটার তালিকায় ৪২ সন্তানের পিতা রামকমল দাস? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে তালিকাটি ২০২৩ সালের বারাণসীর পুরসভা নির্বাচনের। তালিকাটি রাম জানকি মঠ মন্দিরের অধিবাসীদের, সেখানকার শিষ্যরা পিতার জায়গায় গুরুর নাম লিখেছিল।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভোটার তালিকার (voter list) ছবিতে দেখা যাচ্ছে রামকমল দাস (Ramkamal Das) নামের এক ব্যক্তি মোট ৪২ জন সন্তানের পিতা হয়েছেন।
বুম যাচাই করে দেখে ভোটার তালিকাটি ২০২৩ সালের বারাণসী পুরসভা নির্বাচনের। তালিকায় ভোটারদের ঠিকানা বারাণসীর রাম জানকি মঠ মন্দিরের, যার মহন্ত স্বামী রামকমল দাস বেদান্তীজি এবং তালিকার নামগুলি মঠের শিষ্যদের। সেখানকার প্রথা অনুযায়ী মঠের গুরু শিষ্যদের পিতার মতো এবং সব নথিতেও পিতার স্থানে গুরুর নামই লেখা হয়।
ভাইরাল দাবি
ভাইরাল ছবিতে একটি ভোটার তালিকায় দেখা যায় যেখানে বি ২৪/১৯ ঠিকানায় বসবাসকারী ৪২ জনের পিতার নামই রামকমল দাস হিসাবে দেখা যায়। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেন, “B-24/19 নাম্বার বাড়ি নিবাসী শ্রীমান রাম কমল দাস মহাশয় অনেক পরিশ্রম করে সর্বমোট 42 জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন,, সেটাও আবার 14 বছরের মধ্যে।। সরল গণিত অনুসারে তার স্ত্রী প্রতি বছর গড়ে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন…রামকমল দাসের স্ত্রী যে সমস্ত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাদের মধ্যে তিন সন্তানের বয়স 35 বছর।। 2 সন্তানের বয়স 36 বছর।। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো তাদের 37 বছর বয়সী 13 জন সন্তান রয়েছে।। এছাড়া 1 সন্তানের বয়স 38,, 5 সন্তান 39 বছর,, 3 সন্তান 40,, 3 জনের বয়স 41,, 4 জনের বয়স 42,, 43 আর 45 বছরের 1 জন করে সন্তান রয়েছে।। এছাড়া 46 বছরের 2 জন,, 47 বছর বয়সী 3 জন,, আর 49 বছর বয়সী 1 সন্তান রয়েছে…”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে কী পাওয়া গেল
বুম গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ছবিটি ২০২৩ সালের বারাণসী পুরসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকার।
আমরা ২০২৩ সালের মে মাসের একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে দেখি, বারাণসী পুরসভা নির্বাচনের সময় B24/19 ঠিকানার ৪৮ ভোটারের পিতার নামের জায়গায় 'রামকমল দাস' উল্লেখ করাছিল।
এবিপি নিউজের ৫ মে ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে ওয়ার্ড নম্বর ৫১, ভেলুপুরের ভোটার তালিকায় রামকমল দাসের নামে ৪৩-এরও বেশি সন্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকায় সোশ্যাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
দৈনিক জাগরণের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, স্বামী রামকমল দাস বেদান্তি বারাণসীর B24/19 ঠিকানায় অবস্থিত রাম জানকি মঠ মন্দিরের মহন্ত। মঠের ম্যানেজার রামভরত শাস্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে জানানো হয়, গুরু-শিষ্য সন্ত প্রথায় যুক্ত হওয়ার পর শিষ্যদের নাম পরিবর্তন করার পর পিতার স্থানে গুরুর নাম লেখা হয়।
ইটিভি ভারতের প্রতিবেদন অনুসারে, অল ইন্ডিয়া সেইন্ট কমিটির মহামন্ত্রী স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ সরস্বতীর জানিয়েছেন উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী গুরু-শিষ্য প্রথায় শিষ্যের স্থান পুত্রের মতো হয়। ড. রাম কমল দাস বেদান্তী আশ্রমের ভোটার, তাই তার শিষ্যরাও সেই ভিত্তিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
এরপর, আমরা উত্তরপ্রদেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখি বারাণসী নগর নিগম ২০২৩-এর নির্বাচনের সময়ের ওয়ার্ড ৫১, ভেলুপুরের ভোটার তালিকায় B-24/19 এর ঠিকানায় মোট ৫১ ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ ভোটারের পিতার নাম হিসেবে রামকমল দাসের নাম লেখা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের স্পষ্টীকরণ
আমরা এক্সে এই ভাইরাল তালিকা সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার ১২ মার্চ ২০২৫-এর একটি স্পষ্টীকরণ পোস্টও পাই। পোস্টে জানানো হয়, ধর্মীয় মঠ বা আশ্রমের ক্ষেত্রে সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বা সন্ন্যাসীদের পরিচয় তাদের পিতার পরিবর্তে তাদের গুরুর নাম দিয়ে করার প্রথা রয়েছে।
রাম জানকি মঠের স্পষ্টীকরণ
আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা বারাণসীর রাম জানকি মঠের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মঠের ম্যানেজার রামভরত শাস্ত্রী বুমকে বলেন, "ভাইরাল তালিকার ব্যক্তিদের নাম মঠের শিষ্যদের। মঠের প্রথা অনুযায়ী গুরু-শিষ্য প্রথায় যুক্ত হওয়ার পর শিষ্যদের পিতার স্থানে গুরুর নামই লেখা হয়।"
রামভরত শাস্ত্রী আমাদের বলেন, "যেসব শিষ্যরা পরিবার ছেড়ে চিরকালের জন্য মঠে আসেন এবং আজীবন মঠে থাকেন তারা গুরুকেই তাদের পিতা মনে করেন। তাদের মার্কশিট এবং অন্যান্য সব ধরনের নথিতেও পিতার স্থানে গুরুর নামই লেখা হয়।"