বাংলাদেশে আয়নাঘর নিয়ে হাসিনার স্বীকারোক্তির ভাইরাল ভিডিও আসলে ডিপফেক
বুম দেখে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে আয়নাঘর তৈরি নিয়ে করা স্বীকারোক্তির ভিডিওটি ভুয়ো এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে তৈরি।



সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরা একটি ভিডিওতে বাংলাদেশের (Bangladesh) বহিষ্কৃত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina) "আয়নাঘর" (aynaghor) তৈরি করেছেন বলে স্বীকার করতে দেখা যায়। 'আয়নাঘর' গোপন আটক কেন্দ্র (centre) বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত একটি স্থানীয় শব্দ।
বুম দেখে ভাইরাল দাবি ভুয়ো। আমাদের তদন্তে শেখ হাসিনার পাঁচ বছর আগে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে সম্পাদনা করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বুমের সহকারী ডিপফেকস অ্যানালাইসিস ইউনিট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের মাধ্যমে আমাদের নিশ্চিত করেছে ভাইরাল ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয়েছে। ভিডিওটি এআই ভয়েস ক্লোন ও লিপ সিংক দিয়ে হাসিনার ঠোঁটের নড়াচড়া মেলানো হয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থায় ভিন্নমত পোষণকারীদের গোপন আটক কেন্দ্রে বলপূর্বক অন্তর্ধান ও কারাবাস করানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলিতে আটক ব্যক্তিদের উপর অত্যাচার করা হত।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, 'আইডিয়াটা দিয়েছিল আমার বেয়াই তারিক সিদ্দিকী'। ক্রসফায়ার দিলে বেশি লোক জানাজানি হচ্ছে, সমালোচনা বেশি হচ্ছে। সেদিন থেকে শুরু এ নতুন পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা; একটা ছোট ঘর তিন বাই সাড়ে তিন ফিট। আমরা প্রথমে কিছু বিরোধী নেতাকে তুলে আনলাম, বিএনপি, জামাত, ছাত্রশিবির, কিছু সাংবাদিক ওদের রাখা হল আয়নাঘরে।" ভিডিওতে হাসিনাকে আয়নাঘর নিয়ে আরও মন্তব্য করতে শোনা যায়।
ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে একটি পেজের তরফ থেকে ক্যাপশনে লেখা হয়, "হাসিনার স্বীকারোক্তি—কীভাবে আয়নাঘর তৈরি হলো, কীভাবে নির্যাতন ও ভয়ের মাধ্যমে আয়নাঘরে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই: পুরনো সাক্ষাৎকারের ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি ডিপফেক
বুম ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটি জায়গায় ভিডিও কাট করে দৃশ্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করে যা ক্লিপটি সম্পাদিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। আমরা গুগলে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বিবিসি নিউজ বাংলাকে শেখ হাসিনার দেওয়া ২০১৯ সালের একটি সাক্ষাৎকার পাই।
এরপর, আমরা বিবিসির সাক্ষাৎকারের ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর তুলনা করে দেখি শেখ হাসিনার পোশাক ও পটভূমি উভয়ই এক। এই পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা নিশ্চিত হই বিবিসির সাক্ষাৎকারটির দৃশ্য ভাইরাল ভিডিও তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিবিসির পোস্ট করা ২২মিনিটের মূল সাক্ষাৎকারে হাসিনা আয়নাঘরের কথা উল্লেখ করেননি।
উপরন্তু, ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের সার্চ করে আমরা ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ তারিখে ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিও পাই যেখানে ইউটিউবের তরফ থেকে 'পরিবর্তিত বা সিন্থেটিক মিডিয়া' লেখা একটি ট্যাগ ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি বা কারসাজি করা বিষয়বস্তুতে ইউটিউব সাধারণত এই সতর্কীকরণ/বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে থাকে।
এর থেকে বোঝা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পাদিত এবং সম্ভবতঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সম্পাদনা করা হয়েছে।
বুম তাদের সহকারী ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাথেও পরামর্শ করে, যারা বিভিন্ন শনাক্তকরণকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করে ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে। এছাড়াও, তারা Contrails AI-এর বিশেষজ্ঞদের সাথেও পরামর্শ করে এবং উভয়ই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে অডিও এবং ভিডিওটি এআই ব্যবহার করে সম্পাদিত।
অডিও বিশ্লেষণে সেটি বাস্তব হওয়ার মাত্র এক শতাংশ সম্ভাবনা পাওয়া হয়েছে, যা অডিওটি ভয়েস ক্লোন হওয়ার খুব উচ্চ সম্ভাবনার ইঙ্গিত করে।
এছাড়াও বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব হওয়ার ৩১ শতাংশ সম্ভাবনা পাওয়া গেছে এবং এক্ষেত্রেও এআই ব্যবহার করে সম্পাদনার বেশ উচ্চ সম্ভাবনার ইঙ্গিত করে। Contrails AI-এর বিশেষজ্ঞরা ডিএইউকে আরও জানায় "ঠোঁটের কাছে সম্পাদনা হওয়ার প্রমাণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, যা বোঝা যায়, যখন অডিও নীরব থাকাকালীনও ঠোঁটের জায়গা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে।"