সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভুয়ো দাবি: প্রয়াত সিপিআইএম নেতা ইয়েচুরি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী
ভাইরাল ভুয়ো ধারণাটি জন্মায় কারণ দাহ করার পরিবর্তে ইয়েচুরির শবদেহ একটি কফিনে রাখা হয়েছিল কারণ তার দেহ গবেষণার জন্য এইমসে দান করা হয়।
মার্কসবাদী নেতা এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র (CPIM) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির (Sitaram Yechury) মৃত্যুর পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি ছড়ায় যে তিনি খ্রিস্টান (Christian) ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ইয়েচুরির ধর্ম সম্বন্ধে এই ধারণার জন্ম হয় কারণ তার শবদেহ দাহ করার পরিবর্তে, তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় একটি কাঠের বাক্সে সংরক্ষণ করা ছিল যা খ্রিস্টান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত একটি কফিনের সমতুল্য।
বুম দেখে এই দাবিটি ভুয়ো; ইয়েচুরি বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন তিনি একজন নাস্তিক, অর্থাৎ তিনি কোনও ধর্ম অনুসরণ করতেন না। সুজন চক্রবর্তী ইয়েচুরির নাস্তিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বুমকে বলেন, "তিনি একটি হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন তবে তিনি নিজে একজন নাস্তিক ছিলেন।" এছাড়াও, নয়া দিল্লির এইমসের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় তার দেহ হাসপাতালে দান করা হয়, যার কারণে দেহটি সংরক্ষণ করে একটি বাক্সে রাখা হয়েছিল। উপরন্তু, তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভিডিও ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা শেষকৃত্য করা হয়নি।
শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ইয়েচুরি ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দিল্লির এইমসের ৭২ বছর বয়সে মারা যান।
তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকজন ডানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দাবি করেন ইয়েচুরিকে হিন্দু রীতিনীতি অনুসারে দাহ করা হয়নি এবং তার দেহ একটি কফিনে রাখা হয়েছিল। যার ভিত্তিতে, এই ব্যবহারকারীরা অনুমান করেন ইয়েচুরি খ্রিস্টান ছিলেন।
উপরের এক্স পোস্টগুলি দেখুন এখানে ও এখানে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একই দাবি করে ক্যাপশনে লেখেন, "নাম: সীতারাম ইয়েচুরি ধর্ম: খ্রিস্টান---- ভেবে দেখুন কত মানুষকে সে তার হিন্দু নাম দিয়ে বোকা বানিয়েছে,, ভারতবাসী হাজার বছর আগেও বিদেশিদের কাছে বোকা হয়েছে, ভারতবাসী আজও বিদেশিদের কাছে বোকা হচ্ছে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল দাবির সত্যতা যাচাই করতে সিপিআইএমের সদস্য সুজন চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি ইয়েচুরির নাস্তিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বুমকে বলেন, "তিনি একটি হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন তবে তিনি নিজে একজন নাস্তিক ছিলেন।"
বুম দেখে ভাইরাল দাবি করা অ্যাকাউন্টগুলির পোস্ট করা ছবি ইয়েচুরির আলমা ম্যাটার, নয়া দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলা হয়েছিল। ইয়েচুরির দেহ জেএনইউতে আনা হয়েছিল তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তার প্রতি জ্ঞাপন করেন।
আমরা জেএনইউর বেশ কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি দেখি যেখানে ইয়েচুরির কফিনের চারপাশে ছাত্র ও শিক্ষকদের একত্রিত হয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল দাবি করা ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা ছবি বা জেএনইউর পোস্ট করা ছবি বা ভিডিওগুলির কোনওটিই খ্রিস্টান মতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনও ইঙ্গিত মেলেনা।
ইয়েচুরির ধর্মীয় বিশ্বাস
যদিও ইয়েচুরি চেন্নাইয়ের একটি তেলেগুভাষী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি অসংখ্য অনুষ্ঠানে জানান তিনি একজন নাস্তিক এবং কোনও রকম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করতেন না।
২২ এপ্রিল, ২০১৭-র একটি এক্স পোস্টে ইয়েচুরি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন তিনি একজন নাস্তিক। তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন বিশ বছর বয়স থেকেই তিনি নাস্তিক।
কেন তার দেহ একটি কফিনে রাখা হয়েছিল?
ভাইরাল হওয়া এক্স পোস্টে ইয়েচুরির খ্রিস্টান হওয়ার দাবির একমাত্র ভিত্তি হল, মৃত্যুর পর হিন্দু মত অনুযায়ী শেষকৃত্যের সময় তাকে দাহ করার পরিবর্তে একটি কফিনে রাখা হয়েছিল।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একটি এক্স পোস্টে বলেন ইয়েচুরির বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং অনুরাগীরা তাকে বিদায় জানানোর পর তার দেহ "চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য দিল্লির এইমসকে হস্তান্তর করা হয়েছে।"
দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত ভাবে জানা যায়, মৃত্যুর পর তার দেহকে সংরক্ষণ করে একটি কফিনে রাখা হয়, যা পরে গবেষণার জন্য দিল্লির এইমসে দান করা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কোনও ধরণের ধর্মীয় আচার বা অনুষ্ঠান পালন করা হয়নি।