ভুয়ো দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রির ভিডিও
বুম দেখে ভিডিওতে বাংলাদেশের এমএইচ টেকনোলজি লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যানকে এক সম্পত্তি বিক্রি করতে দেখা যায়।

পিতার মৃতদেহকে দিয়েই সম্পত্তির কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার দাবিতে সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, একজন ব্যক্তির মৃত্যুর (Death) পর তার সন্তানরা সম্পত্তির (Property) লোভে মৃতদেহকে দিয়েই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চেয়ারে দৃশ্যতঃ প্রায় অচেতন অবস্থায় বসে থাকা এক ব্যক্তির আঙুল ধরে আরেকজন ব্যক্তি একটি কাগজে ছাপ নিচ্ছে।
বুম দেখে, ভিডিওটি বাংলাদেশের ঢাকার এমএইচ টেকনোলজি লিমিটেড তথা উইনম্যাক্স মোবাইলের সাথে সম্পর্কিত। ভিডিওতে উপস্থিত ব্যক্তিটি হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান; তিনি জীবিত কিন্তু অসুস্থতায় ভুগছেন। ভিডিওটিতে চেয়ারম্যানের একটি সম্পত্তি এক আবাসিক প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত, যেখানে কাগজপত্র হস্তান্তরের সময় তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছিল।
ভাইরাল দাবি
ফেসবুকে পোস্ট করে ভিডিওটিতে ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়, "মৃত্যুর পরও বাবাকে রেহাই দিলো না শান্তির ধর্মের মানুষেরা,এতো সম্পত্তির লোভ। খুবই দুঃখজনক।"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম: ভিডিওটি বাংলাদেশের; সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার দাবিটি ভুল
বুম ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওর কীফ্রেমকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। সার্চের সময় আমরা ইনস্টাগ্রামে ১৪ অগাস্ট ২০২৫ তারিখের এক পোস্ট পাই, যেখানে বাংলাদেশের স্থানীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর মেসেজ ও মন্তব্যের ভিত্তিতে ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী রবিউল আলম রবিন এক পোস্টে জানান, ভিডিওর সাথে করা দাবিকে সত্যি মনে করে তার অ্যাকাউন্ট থেকে সেটি তিনি শেয়ার করেছিলেন। পরে ভিডিওটির আসল ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত হয়ে তা মুছে ফেলে দুঃখ প্রকাশ করেন।
রবিউল প্রমাণস্বরূপ যে স্ক্রিনশট শেয়ার করেন তাতে বলা হয়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি হলেন উইনম্যাক্স কোম্পানির মালিক। তিনি মাইলস্টোন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে জমি বিক্রি করেছেন।
জীবিত মোহাম্মদ হোসেনকে মৃত বলা হয়েছিল
এরপর আমরা বাংলাদেশ ভিত্তিক ফেসবুক ব্যবহারকারী শা মাসুদ জামিলের আপলোড করা গত ১৪ অগাস্টের এক ভিডিও দেখতে পাই। তিনি লেখেন, ভুল দাবিতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তিনি উইনম্যাক্সের অফিসে পৌঁছান, তিনি নিজে উইনম্যাক্সের স্বত্বাধিকারীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
উইনম্যাক্স মোবাইলের ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওতে উপস্থিত ব্যক্তি আদতে এমএইচ টেকনোলজি (উইনম্যাক্স মোবাইল) এর চেয়ারম্যানের নাম মোহাম্মদ হোসেন খান, যাকে কোম্পানির ফেসবুক পেজে ১৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ফেসবুক পেজ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছিল।
উইনম্যাক্স মোবাইল কোম্পানি আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে
এর থেকে সূত্র ধরে, আমরা বাংলায় সংশ্লিষ্ট কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে উইনম্যাক্স মোবাইলের ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৩ অগাস্ট করা এক পোস্ট দেখতে পাই। পোস্টে ভাইরাল দাবি খণ্ডন করে কোম্পানিটি লেখে , "সম্প্রতি আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের সম্পর্কিত একটা ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারী অসত্য তথ্য প্রচার করেছে যা একেবারেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং সম্পূর্ণ দন্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। এম এইচ টেকনোলজি লিমিটেড এর সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে অবহিত করিতেছি যে এই মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।"
ভিডিওটি এক আবাসিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত
বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশ এমএইচ টেকনোলজির অফিসেও যোগাযোগ করে। ওই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বুম বাংলাদেশকে বলেন, সমাজমাধ্যমে ভাইরাল এই দাবির বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি ইতিমধ্যেই ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে। ভাইরাল দাবিটি ভুল বলে তিনি জানান, ভিডিওটি চেয়ারম্যানের কিছু সম্পত্তি একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠানকে বিক্রির প্রক্রিয়া সংক্রান্ত।
(বুম বাংলাদেশের তরফে রিপোর্টিং করেছেন তৌসিফ আকবর)