গাজায় শিশুদের দুরবস্থা বলে ছড়াল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি ছবি
বুম যাচাই করে দেখে এই ছবি এআইয়ের প্রয়োগে তৈরী করা হয়।
সম্প্রতি তাঁবুর ভিতরে কাদাজলের মধ্যে দুই শিশুর শুয়ে ঘুমোনোর এক ছবি পোস্ট করে দাবি হয় ভাইরাল এই ছবিতে যুদ্ধবিদ্ধস্ত প্যালেস্টাইনের (Palestine) গাজার সাম্প্রতিক দুরাবস্থার চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল এই ছবি ভুয়ো। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইজরায়েলের উপর আচমকা আঘাত হানে প্যালেস্তিনীয় গোষ্ঠী হামাস। এর প্রত্যুত্তরে ইজরায়েল পাল্টা আক্রমণ করে প্যালেস্টাইন, শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ। ইজরায়েলি সেনার লাগাতার বোমাবর্ষণে ধূলিসাৎ হয় প্যালেস্টাইনের বহু বাড়িঘর, প্রাণ হারান ২০,০০০ এরও বেশি মানুষ। যুদ্ধের এই ভয়াবহতায় রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আবেদন করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
ছবিটি পোস্ট করে এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লেখেন,"কি ভাবছেন? এটি কোনো আঁকা ছবি কিনা? একদম না! ছবিটা কোনো শিল্পীর আকাঁ নয়। এই তীব্র শীতে আমাদের দুনিয়ারই আরেক প্রান্তে থাকা আরেক নগরী গাজার ছবি এটি। রাতে ঘুমাতে গেলে আমরা আমাদের বাচ্চাদের গায়ে আরেকটা কম্বল তুলে দেই। জানালার গ্লাসটা ঠিক মতো আটকানো আছে নাকি দুইবার উঠে গিয়ে চেক করি। বাচ্চার গায়ে যেন একটু কুয়াশা না লাগে। আচ্ছা এই ঠান্ডায়, তীব্র শীতের বৃষ্টিতে এই শিশু গুলোর কেমন লাগছে? ওদের কি এই কাদামাটির ভেজা বিছানায় থাকার কথা ছিল? এই পৃথিবী যেন নীরব দর্শক! প্রচন্ড শক্ত একটা মন নিয়ে সবাই মিলে একখানা হৃদয়বিদারক ক্রমশ চলন্ত সিনেমা দেখছি।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল এই ছবিতে দৃশ্যগত কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে যা মূলতঃ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা তথা এইআইয়ের প্রয়োগে তৈরি ছবিতে লক্ষ্য করা যায়।
আমরা লক্ষ্য করি এই ছবিতে কিছু বিশেষ অস্বাভাবিকতা রয়েছে যা আসল কোনও ছবিতে দেখতে পাওয়া যায় না। প্রথমতঃ, এই ছবিতে থাকা জলের মধ্যে কোনও তরঙ্গের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, আমরা ছবিতে শুয়ে থাকা এক শিশুর অস্বাভাবিকভাবে বড় কান লক্ষ্য করি এবং ওই শিশুর দুই পায়ের জড়ো থাকা অংশে এক অস্বাভাবিক মসৃণতা দেখতে পাই।
ভাইরাল ছবিতে দেখতে পাওয়া এই বিশেষ অংশগুলি নিচের ছবিতে দেখান হল।
এছাড়াও আমরা এই ছবিতে ঘুমন্ত শিশুদের পিছনে থাকা অংশগুলি অস্বাভাবিক রকমের অস্পষ্ট বলে লক্ষ্য করি। এই ধরণের সমস্যা মূলতঃ এআই তথা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি ছবিতে উপস্থিত থাকে কারণ তারা শব্দ বিবরণের ভিত্তিতে ছবি তৈরি করে এবং তাতে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবিকতার অভাব লক্ষ্য করা যায়।
এরপর আমরা ছবিটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে তৈরি কিনা সেবিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেটনে পরীক্ষা করি। উক্ত পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে ছবিটি ৯৯.৯ শতাংশ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে তৈরির সম্ভাবনা বলে উল্লেখ করা হয়।