ওরকা প্রশিক্ষকের মর্মান্তিক পরিণতি বলে ছড়াল AI-এর তৈরি কাল্পনিক দৃশ্য
বুম দেখে AI দিয়ে তৈরি কিছু ভিডিও কাল্পনিক এক ওরকা প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফের নাম করে ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।

ওরকা (Orca) তথা আক্রমণাত্মক প্রজাতির এক তিমির (whale) প্রশিক্ষণের সময় জেসিকা র্যাডক্লিফ (Jessica Radcliffe) নামের একজন প্রশিক্ষকের (trainer) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি ভুয়ো কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে।
বুম দেখে, ভিডিওগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। ওরকার আক্রমণে তার প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফের প্রাণ হারানোর দাবিটিও সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই কাল্পনিক গল্প অনুযায়ী, একটি ওরকাকে ১২ বছর ধরে জেসিকা র্যাডক্লিফ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এবং তার সাথেই খেলা দেখাতেন। তবে, আচমকাই একদিন ওরকাটি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে জেসিকার মৃত্যুর কারণ ঘটায়।
সুইমিং পুলে একজন তরুণীকে হঠাৎই এক ওরকার আক্রমণ করার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়, "মেয়েটার জীবনটা শেষ করে দিলো। যাকে ১২ বছর ধরে খাওইয়ে লালন পালন করল, আজ নিজেই তার খবার হয়ে গেলো।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই কাহিনী সমেত ছড়ান আরও কয়েকটি ভিডিও দেখুন এখানে ও এখানে।
কী পেলাম আমরা অনুসন্ধানে: ওরকার ভিডিওগুলি AI দিয়ে তৈরি
ভিডিওয় দৃশ্যমান অসঙ্গতি
বুম ভাইরাল দাবির সত্যতা যাচাই করতে ওরকা প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফের উপর হামলা সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে। সার্চের মাধ্যমে আমরা জেসিকা র্যাডক্লিফ নামের তিমি প্রশিক্ষক মহিলার অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাইনি।
উপরন্তু, পুরো ভিডিও জুড়েই ওরকা এবং জেসিকা, দুজনেরই নড়াচড়ার মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওয় দৃশ্যমান সুইমিং পুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা ক্রমাগতই পালটাতে থাকে; কখনও একটি দৃশ্যে অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায় যা পরের দৃশ্যে থাকে না, আবার কয়েকটি দৃশ্য পর অ্যাম্বুলেন্স ফের দেখা যায়।
এছাড়াও, সুইমিং পুলের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের পোশাকের রঙও প্রত্যেক দৃশ্যে বদলাতে দেখা যায়; কখনও কালো আবার কখনো কমলা।
লক্ষণীয় বিষয়, জেসিকা র্যাডক্লিফের পরিণতি দাবি করে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিভিন্ন সংস্করণগুলিতে শুধু ঘটনাক্রমই আলাদা আলাদা নয়, কখনও কখনও তার চেহারার মধ্যেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এর থেকে, ইঙ্গিত পাওয়া যায় চরিত্রটি কাল্পনিক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাচাইকারী ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফলাফল
আমাদের পর্যবেক্ষণগুলি থেকে ইঙ্গিত নিয়ে আমরা ভিডিওটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যাচাইকারী টুল হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করি। হাইভ মডারেশন জানায়, ভিডিওতে অন্তত ৭৭% কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া যায়।
আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ভিডিওটিকে ডিপফেক-ও-মিটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাচাইকারী সরঞ্জামগুলিতে পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও ভাইরাল ভিডিওয় AI-এর প্রয়োগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।