বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল ২০২৩ সালে তোলা হাওয়াইয়ের পুরনো ছবি
বুম দেখে আমেরিকায় হওয়া সাম্প্রতিক দাবানলের সাথে ছবিটির সম্পর্ক নেই। ২০২৩ সালের ১০ অগাস্ট লাহাইনাতে এই ছবি তোলা হয়েছিল।
ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান (Quran) থাকার কারণে আমেরিকার একজন মুসলিমের বাড়ি দাবানলের (Wildfire) হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দাবিতে সম্প্রতি এক ছবি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
ভাইরাল ওই ছবিতে আশেপাশের বাড়িঘর পুড়ে গেলেও লাল ছাদের এক বাড়িকে কার্যত অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে লক্ষ্য করা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ২০২৩ সালে হাওয়াইতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ছবিটি তোলা হয়। আগুনের গ্রাস থেকে বাড়িটি এভাবে বেঁচে যাওয়ার পর অবাক হয়েছিলেন তার মালিক ট্রিপ মিলিকিন ও তার স্ত্রী ডোরা আটোয়াতের মিলিকিন।
ছবিটি পোস্ট করে এক ফেসবুক পেজের তরফ থেকে লেখা হয়, "বলা হয় যে, আমেরিকার এই বাড়িটি একজন মুসলিমের ছিল এবং এতে পবিত্র কোরআন ছিল, তাই দাবানল আগুনে এর কোনও ক্ষতি হয়নি। সুবহানাল্লাহ"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ছবিটির উৎস জানতে তাকে টিন আইয়ের মাধ্যমে রিভার্স সার্চ করে। এর মাধ্যমে আমরা ২০২৩ সালের ২৭ অগাস্ট প্রকাশিত সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের পরেও এক বাড়ির অক্ষত থাকার ভাইরাল ছবিটিকে খুঁজে পাই।
ওই প্রতিবেদনে ছবিটি তোলার কৃতিত্ব আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা এএফপির চিত্রগ্রাহক প্যাট্রিক টি ফালনকে দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, সেবছর ১০ অগাস্ট তোলা ছবিটিতে হাওয়াইয়ে লাল ছাদের বাড়িটি লাহাইনার পশ্চিম মাউইতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরেও অক্ষত থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা আশেপাশের অন্যান্য বাড়িকে ভস্মীভূত করলেও ওই বাড়িটিকে গ্রাস করতে পারেনি।
সিবিএস নিউজের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, অগাস্টের প্রথম দিকে এই দাবানল শুরু হওয়ার পর মাউইতে হাজার হাজার একর এলাকা পুড়ে ছারখার হয়ে যায় বলে জানায় সেখানকার প্রশাসন। মাউই প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে আনুমানিক ২,১৭০ একর পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় রিপোর্টটিতে।
গেটি ইমেজেসের ওয়েবসাইটেও একই তথ্যের উল্লেখ করে এই একই ছবি ১৮ অগাস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশ করা হয়েছিল।
ভয়াবহ এই আগুনের গ্রাস থেকে বাড়িটির অদ্ভূতভাবে রক্ষা পেয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সেসময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নানা সংবাদমাধ্যমও। ২২ অগাস্ট ২০২৩ প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অত্যাশ্চর্য এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বাড়িটির মালিক ট্রিপ মিলিকিন ও তার স্ত্রী ডোরা আটোয়াতের মিলিকিন।
১৯ অগাস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হনুলুলু সিভিল বিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শোচনীয় অবস্থায় পড়ে থাকা এই সম্পত্তি ২০২১ সালে কেনে মিলিকিন দম্পতি। এরপর বাড়িটি সংস্কারের সময় তাতে বাণিজ্যিক-গ্রেডের এক ইস্পাতের ছাদ লাগান মিলিকিন যা উড়ন্ত অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে মোটের উপর ঠিকঠাকভাবে বাড়িকে রক্ষা করে। অগ্নিকাণ্ডের পর মিলিকিন প্রথমে তাই ধারণা করেছিলেন, মূলতঃ সেকারণেই হয়তো আগুনের গ্রাস থেকে রক্ষা পেয়েছে বাড়িটি।