প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যোগীর পদত্যাগ করতে বলার ভিডিও AI দ্বারা সম্পাদিত
বুম দেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পদত্যাগের দাবি জানানো যোগীর ভিডিও এআই দিয়ে সম্পাদিত।

উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) মুখ্যমন্ত্রী (chief minister) যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) বিধানসভায় ভাষণ দেওয়ার এআই (artificial intelligence) দ্বারা সম্পাদিত একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যেখানে ভারতের বাংলাদেশ (Bangladesh) না আক্রমণ করার কারণে যোগী তার পদত্যাগ (resignation) দাবি করেছে। ব্যবহারকারীদের একাংশ ভিডিওটি আসল দাবি করে পোস্ট করেছেন।
বুম যাচাই করে দেখে যোগী আদিত্যনাথ এধরণের কোনো মন্তব্য করেননি। ভাইরাল ভিডিওটি বিধানসভায় দেওয়া যোগী আদিত্যনাথের মূল ভাষণ এআই-এর সাহায্যে পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়েছে। এআই যাচাইকারী টুল ডিপফেক-ও-মিটার এবং এআই ভয়েস যাচাইকারী টুল হিয়া-তে পরীক্ষা করে আমাদের এবিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
দাবি
একটি ফেসবুক পেজের তরফ থেকে এই ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে দাবি করে, "মোদিকে বাংলাদেশ আক্রমণের কথা বললেন সংসদে দাঁড়িয়ে! উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী "যোগী আদিত্যনাথ"। তার বক্তব্যে সে বলে "প্রধানমন্ত্রী মোদি যদি আপনি বাংলাদেশ আক্রমণ করতে না পারেন, তাহলে আপনি প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন"। আমরা ধর্মসেনারা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে, বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের হিস্যা বানাবো"। আমরা ধর্মসেনারা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে, বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের হিস্যা বানাবো। কতোবড় ঔদ্ধত্য, তাও একটা সংসদে দাঁড়িয়ে! যদিও এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক নীতি নয়। তবে বাংলাদেশ কে এবার অন্তত নিজেদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নেয়া জরুরি।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
১. মূল ভিডিওয় যোগী এধরণের কোনও মন্তব্য করেননি: বুম দাবিটি যাচাই করতে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে তবে, কোনও এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পায়নি যা দাবিটিকে সমর্থন করে।
আমরা অনুসন্ধানে মাধ্যমে জানতে পারি যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বাজেট ২০২৫-২৬ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫-এ রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আইন-শৃঙ্খলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ ভিডিও ছাড়াও সংবাদ সংস্থা ANI Bharat-এর ইউটিউব চ্যানেলেও যোগী আদিত্যনাথের সম্পূর্ণ ভাষণ শোনা যায়। তবে, কোথাও তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করতে শোনা যায় না।
এএনআই ভারতের আপলোড করা ভিডিওয় ৫৯:৫৭ মিনিট থেকে যোগী আদিত্যনাথকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু যুবকের হত্যার নিয়ে কথা বলেন এবং ঘটনাটি বিরোধী দলের তোষণ নীতির ফল বলে অভিযোগ করেন। যোগী বলেন, "যদি বাংলাদেশ পাকিস্তান না হতো তবে, এইভাবে হিন্দুদের পুড়িয়ে মারা হতো না এবং যদি পুড়িয়ে মারা হতো তবে তার কি পরিনাম হতো সে জানতো, এটা সুরক্ষার গ্যারান্টি। আপনারা গাজা পট্টিতে কিছু ঘটলে কাঁদেন। কিন্তু পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে হিন্দু মারা গেলে আপনারা মুখ বন্ধ করে থাকেন কারণ মারা যাওয়া হিন্দু দলিত।" এর পর যোগী বলেন এই ঘটনার সমালোচনা হওয়া উচিত এবং বিরোধী দলের নেতাদের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আসা উচিত।
এএনআই তাদের এক্স হ্যান্ডেলে যোগীর ভাষণের এই অংশ পোস্ট করে।
আমরা দেখি ভাইরাল ভিডিওয় যোগীর মূল বক্তব্যের থেকে শুধুমাত্র "যদি বাংলাদেশ পাকিস্তান না হতো তবে এইভাবে হিন্দুদের পুড়িয়ে মারা হতো না এবং যদি পুড়িয়ে মারা হতো তবে তার কি পরিনাম হতো সে জানতো, এটা সুরক্ষার গ্যারান্টি" অংশটি রয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও এআই দ্বারা পরিবর্তিত: অনুসন্ধান থেকে ইঙ্গিত নিয়ে আমরা ভাইরাল ভিডিওটি এএই যাচাইকারী টুল ডিপফেক-ও-মিটার এবং হিয়ার ডিপফেক ভয়েস যাচাইকারী টুলে পরীক্ষা করি। হিয়া ভিডিওর অডিও অংশ ডিপফেক বলে শনাক্ত করে।
এরপর, ভিডিওটি আমরা ডিপফেক-ও-মিটারের বিভিন্ন এআই যাচাইকারী সরঞ্জামে পরীক্ষা করি যেখানে নয়টির মধ্যে ছয়টি টুলই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্দিমত্তা দ্বারা নির্মিত বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য বিষয়, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫-এ বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে একদল জনতা পিটিয়ে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়া ২৫ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশে সাতটি হিন্দু পরিবারের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার কথা জানা যায়।
ভারত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও দীপু চন্দ্র দাসের নির্মম হত্যার নিন্দা করার পর, আমেরিকাও এই ঘটনার নিন্দা করে এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করে।






