উত্তরপ্রদেশের দাবি করে ছড়াল রাজস্থানে খুনে অভিযুক্তদের ভিডিও
বুম দেখে ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের আম্বেদনগরে এক নাবালিকার শ্লীলতাহানি ও হত্যার ঘটনার সাথে জুড়ে মিথ্যে দাবিতে ভাইরাল হয়েছে।
ব্যান্ডেজ বাঁধা পা নিয়ে তিনজন আহত ব্যক্তির হামাগুড়ি দিয়ে চলার এক ভিডিও সম্প্রতি শেয়ার করে দাবি করা হয় একজন মেয়েকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার সময় হত্যা করার জন্য উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) তিনজন মুসলিম (Muslim) পুরুষকে এমন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওর সাথে করা দাবিটি ভুয়ো। ভাইরাল এই ভিডিওতে দেখতে পাওয়া তিনজন ব্যক্তি হলেন রাজস্থানের ভরতপুরে এক ব্যক্তির হত্যা মামলার অভিযুক্ত যারা গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ পায়ে গুলি করলে আহত হন।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরে মোটরবাইকে থাকা দুজন ব্যক্তি এক ছাত্রীর দোপাট্টা ধরে টান মারলে মেয়েটি পড়ে যায় এবং তাকে অন্য এক মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে চলে গেলে সে তার প্রাণ হারায়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন মহিলাদের যারা হয়রানি করে তাদের জন্য "যমরাজ" অপেক্ষা করবে। এরই প্রেক্ষাপটে ভাইরাল হয় তিন আহত ব্যক্তির হামাগুড়ি দেওয়ার এই ভিডিও।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "উত্তর প্রদেশে এই অপরাধীরা সেহবাজ,আরবাজ এবং ফয়জল তাদের মোটর সাইকেলে তিন জন মিলে যাওয়ার সময় একটি কিশোরী ছাত্রীর ওড়না টেনে ছিল যে তার সাইকেলে করে যাচ্ছিল। ওড়না টানার ফলে কিশোরী ছাত্রী সাইকেল থেকে পড়ে যায়। অন্য একটি মোটরসাইকেল তার ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনা স্থলে ছাত্রী টি মারা যায়। অপরাধীদের বর্তমানে অবস্থা দেখুন..... যোগী জী হ্যায় তো সব মুনকিন হ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে এমন হলে তৃনমূল সরকার অপরাধীদের বাড়ীতে চাল,ডাল পৌঁছে দিয়ে আসতো......"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ক্যাপশন থেকে পাওয়া সূত্র ধরে কিছু কীওয়ার্ড অনুসন্ধান করে এই মাসের শুরুর দিকে উত্তরপ্রেদেশের আম্বেদকরনগরে ঘটে যাওয়া শ্লীলতাহানি ও হত্যার এক মামলা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ওই প্রতিবেদনগুলিতে অভিযুক্ত হিসেবে তিনজনের নাম তথা শাহবাজ, তার ভাই আরবাজ এবং ফয়জলের কথা উল্লেখ করা হয়।
ইন্ডিয়া টুডে ও দৈনিক ভাস্করের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, দুই ভাই একাদশ শ্রেনীর এক ছাত্রীর দুপাট্টা (স্কার্ফ) ধরে টান দিলে সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার সাইকেল থেকে পড়ে যায় এবং এরপর তার ঠিক পিছনে থাকা তৃতীয় অভিযুক্ত ফয়জল এক মোটরসাইকেলে মেয়েটিকে ধাক্কা দেয়। তিন অভিযুক্তই ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের গুলি করে এবং পরে গ্রেপ্তার করে।
তিন অভিযুক্তকে থানায় আনার ভিডিও সমেত প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন (এখানে এবং এখানে) আমরা খুঁজে পাই। ভাইরাল ভিডিওতে থাকা তিনজনের মুখের সাথে আমরা এই অভিযুক্তদের মুখমন্ডলের তুলনা করে কোনও মিল খুঁজে পাইনি।
এরপর আমরা ভাইরাল ভিডিওর কিছু কীফ্রেমকে রিভার্স সার্চ করে নিউজ এক্সপ্রেস নামের এক ফেসবুক পেজে নামে এই একই ভিডিওটি খুঁজে পাই।
ভিডিওটির ক্যাপশন হিসাবে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া তিনজন হলেন অজয় ঝামরি নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।
এই তথ্যকে সূত্র হিসাবে গ্রহণ করে আমরা কীওয়ার্ড সার্চ করে রাজস্থানের ভরতপুরে অজয় ঝামরির হত্যাকাণ্ডে রাজস্থান পুলিশ ও তিন অভিযুক্তের মধ্যে এক এনকাউন্টার সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাই।
দৈনিক ভাস্করের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, পুলিশ তিন অভিযুক্ত তেজবীর, যুবরাজ ও বান্টিকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের গুলি করে। দৈনিক ভাস্কর ও ইটিভি ভারতের রিপোর্টেও ওই তিন অভিযুক্তের ছবি রয়েছে।
বুম ভাইরাল ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিদের সাথে এই প্রতিবেদনগুলিতে থাকা ব্যক্তিদের মুখের তুলনা করেছে।
আমরা দেখতে পেয়েছি যে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিদের সাথে অজয় ঝামরি হত্যার অভিযুক্তদের মুখের হুবহু মিল ছিল।
বুম এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভরতপুর পুলিশের কাছে যোগাযোগ করলেও তাদের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।