ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল শ্রীলঙ্কায় সন্ন্যাসীকে মারধর করার ভিডিও
বুম দেখে ঘটনাটি শ্রীলঙ্কার এবং ভিডিওতে যে সন্ন্যাসীকে মারধর করতে দেখা যায় তিনি হলেন একজন বৌদ্ধ।
সম্পাদিত এক ভিডিওতে সম্পর্কহীন দুটি ক্লিপ দেখিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মিথ্যা দাবি করে বলা হয় ওই ভিডিওতে একজন হিন্দু (Hindu) পুরোহিতকে দুই মহিলার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়তে দেখা যায়।
বুম দেখেছে ভাইরাল ভিডিওটিতে দুজন আলাদা আলাদা ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে - ভিডিওর প্রথম অংশে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিটি হলেন শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পাল্লেগামা সুমনা থেরা যাকে দুই মহিলা সহ উলঙ্গ করে মারধর করা হয়েছিল। ভিডিওর পরবর্তী অংশে একজন হিন্দু সাধু স্বামী আনন্দ স্বরূপ মহারাজকে দেখা যায় যিনি ভারতকে একটি হিন্দু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলছেন।
ভিডিওটি একটি হিন্দি ক্যাপশনের সাথে শেয়ার করা হচ্ছে যার অনুবাদ, "একটি হিন্দু জাতি বানানোর জন্য সাধু অনুশীলন করছেন।"
(হিন্দিতে আসল লেখাটি: हिन्दू राष्ट्र बनाने का अभ्यास करते हुए सन्त जी)
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওটির কীফ্রেমগুলি রিভার্স সার্চ করে ৯ জুলাই, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত তামিল হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় যেখানে এই ভাইরাল ভিডিওর কিছু অংশ উপস্থিত রয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদনে এই সন্ন্যাসীকে শ্রীলঙ্কার একজন বৌদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যার নাম পাল্লেগামা সুমনা থেরা। শ্রীলঙ্কার নাওয়াগামুওয়াতে দুই নারীসহ সন্ন্যাসী থেরাকে আক্রমণ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশকারী দুই মহিলা বেরিয়ে আসতে কিছুক্ষণ সময় নেওয়ার পরে একদল লোক নাভাগামুয়ার মন্দিরে হানা দেয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক দল লোক ঘরে ঢুকে পড়েছে এবং দুই মহিলা আর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে আক্রমণ করছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ঘটনা এবছরের জুলাই মাসের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কায় ভাইরাল হয়েছে।
ডেইলি নিউজ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত ১০ জুলাই, ২০২৩ তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী," শনিবার নাওয়াগামুওয়া পুলিশ আট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে যারা নগ্ন করে দু'জন মহিলা এবং একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে আক্রমণ করেছে। ইহলা বোমিড়িয়া ভেনের শ্রী সুমানারামা মন্দিরের প্রধান পদাধিকারীর অভিযোগ দায়ের করার পরে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পাল্লেগামা সুমনা থেরা নাওয়াগামুওয়া পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।" সিংহলী-ভাষার দৈনিক সংবাদমাধ্যম দিভাইনার ১৩ জুলাই, ২০২৩ তারিখের প্রতিবেদনেও এই ভাইরাল ভিডিওর এক দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছে এবং আট সন্দেহভাজনকে ওই হামলার জন্য শ্রীলঙ্কার একটি আদালতে হাজির করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও, বুম ভিডিওর সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিল যে ভারতকে হিন্দু দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলছেন।
"হিন্দু স্বামী সেক্যুলার ইন্ডিয়া" কীওয়ার্ডগুলি ব্যবহার করে আমরা স্বামী আনন্দ স্বরূপ মহারাজের একটি চিত্র খুঁজে পাই যাকে ভিডিওর পরবর্তী অংশে দেখা যাচ্ছে। ১ জুলাই, ২০২১ প্রকাশিত সনাতন প্রভাত নামের একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে স্বামী আনন্দের ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।
ওয়েবসাইটটি স্বামী আনন্দ স্বরূপকে উদ্ধৃত করে বলেছে, "ভারত সর্বদা একটি 'হিন্দু রাষ্ট্র' ছিল এবং থাকবে, কিন্তু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ষড়যন্ত্র করে সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি যোগ করেছে"।
তারপরে আমরা ভাইরাল ভিডিওর একটি ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ২৮ জুন, ২০২৩ তারিখে ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিও খুঁজে পেয়েছি যেখানে ওই ভিডিওর একটি দীর্ঘ সংস্করণ উপস্থিত রয়েছে।
আমরা লক্ষ্য করি, ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের পর থেকে ভিডিওটিতে জন দূত সংবাদমাধ্যমকে উল্লেখ করে একটি প্রতীক রয়েছে। এর থেকে সূত্র ধরে আমরা লক্ষ্য করি, ওই একই ভিডিও ২০ জুন, ২০২৩ তারিখে জন দূত নিউজ নামক একটি ফেসবুক পেজ আপলোড করেছিল।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।