গোমাংস বিতর্কের বহু আগেই সুদীপার সাথে কাজ শেষ হয় জি বাংলার
বুমকে এবিষয়ে জি বাংলার তরফে জানানো হয় ২০২২ সাল অর্থাৎ গোমাংস নিয়ে বিতর্কের অনেক আগেই চ্যানেলের সাথে কাজ শেষ হয় সুদীপার।
বাংলাদেশের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে গোমাংস (Beef) রান্নায় অংশগ্রহণ করে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একাংশের রোষানলে পড়েন সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায় (Sudipa Chatterjee)। ক্ষুদ্ধ নেটিজেনরা দাবি করেন হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতেই গরুর মাংসের রান্না প্রণালী প্রচার করেছেন সুদীপা।
সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেওয়া এবং সঞ্চালিকাকে বয়কটের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ভাইরাল পোস্টগুলিতে দাবি করা হয় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার কারণে জি বাংলা তাদের রান্নার অনুষ্ঠান থেকে বাদ দিয়েছে সুদীপাকে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জি বাংলায় চলা রান্নার অনুষ্ঠান "রান্নাঘর" থেকে পরিচিতিতে অন্যতম মাত্রা পান প্রযোজক-পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ঘরণী।
এমনই এক ভাইরাল পোস্টে লেখা হয়, "সুদীপাকে বয়কট করল জি বাংলা, সুদীপা চট্টোপাধ্যায় একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক চ্যানেলের সঙ্গে সহযোগিতায় বিফ (গোরুর মাং শের) প্রচার করছেন। এর আগে দীর্ঘ ৯ বছর সুদীপা সামলেছিলেন জি বাংলার রান্নাঘর-এর দায়িত্ব। এরপর সেই রান্নার শোটি বন্ধ করে জি বাংলা নিয়ে আসে নতুন একটি শো ‘ঘরে ঘরে জি বাংলা’। কিন্তু পরবর্তীতে সেটিও টিআরপি না পেলে, ফের কুকিং শো ফিরিয়ে আনে এই বাংলা চ্যানেল। তবে এবারে আর ডাকা হয়নি সুদীপাকে"।
পোস্টটি দেখতে করুন ক্লিক করুন এখানে।
অন্য এক ব্যবহারকারী এবিষয়ে ফেসবুকে লেখেন, ""Zee বাংলার" রান্নাঘর থেকে বাদ দেওয়া হল "সুদীপা চ্যাটার্জী" কে। জয় সনাতনী ঐক্যের জয়।"
পোস্টটি দেখতে করুন ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে সুদীপা তার ফেসবুক পেজে ৪ জুন ২০২৪ তারিখে এই সময় পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ছবি পোস্ট করেছিলেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়কে সুদীপা জানান, বাংলাদেশের অভিনেত্রী তারিন জাহানের সাথে এক রান্নার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে ৩ জুন তিনি ঢাকা রওনা হন।
সুদীপা বলেন, ঈদ উদযাপনের কথা মাথায় রেখেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভারতীয় হয়ে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভারতের বিভিন্ন রান্নাও তিনি ওপার বাংলায় করবেন বলে এই সময়কে জানান সঞ্চালিকা।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
আমরা দেখতে পাই বিতর্কিত সেই অনুষ্ঠানটি রাঁধুনি বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেলে ২৮ জুন ২০২৪ তারিখে আপলোড করা হয়।
এরপর আমরা সুদীপা ও তার জি বাংলার 'রান্নাঘর' অনুষ্ঠানটি সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করে বেশ কয়েকটি পুরনো সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘ ১৭ বছরের যাত্রায় ইতি টেনে শেষ পর্বের শুটিং সম্পন্ন হয় জি বাংলার 'রান্নাঘর'-এর। ৩১ ডিসেম্বর শেষ বারের মতো অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
আনন্দবাজার অনলাইনকে সেসময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুদীপা জানান, এত বছরের অভ্যাস বদলে ফেলতে হবে বলে মনখারাপ তার। সেই কষ্ট কমাতে সুদীপার জন্য তার প্রিয় খাবার, শুটিং ফ্লোরের বাইরে বিশেষ আয়োজন করা হয় তখন। এছাড়াও রান্নাঘরের শেষ এপিসোড শুটিংয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এবিষয়ে লাইভও করেন সঞ্চালিকা।
তাছাড়াও আমরা খুঁজে পাই ২৮ মে ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইনের প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুদীপা জানান, জি বাংলায় রান্নার অনুষ্ঠান শুরু হলেও তাতে ডাক না পাওয়ায় প্রচণ্ড দুঃখ পান তিনি। অতঃপর, তিনি বন্ধু শেফ রণবীর ব্রার, স্বামী অগ্নিদেব ও তার বড় ছেলে আকাশ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে ডিজিটাল মাধ্যমে নিজের নতুন অনুষ্ঠান ‘সুদীপার সংসার’ শুরু করতে চলেছেন বলে জানান।
নিজের আধিকারিক এক্স হ্যান্ডেল থেকে সেই অনুষ্ঠানের বিষয়ে সেসময় পোস্টও করেন তিনি।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
এরপর আমরা ভাইরাল দাবির বিষয়ে জি বাংলার প্রতিক্রিয়া জানতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। চ্যানেলের তরফে দাবিটি নস্যাৎ করে বলা হয়, সুদীপা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ জি বাংলার সাথে কাজ করেছিলেন। বহু আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সুদীপার অনুষ্ঠানটির সাথে কোনও বিতর্কের সম্পর্ক নেই বলেই তারা জানান।