না, হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক জাগরণ বকরিদের জন্য এই বিজ্ঞাপন প্রচার করেনি
বুম দেখে মূল সংস্করণটিতে পরিবেশ বান্ধব হোলিকা দহন উৎসব পালনের জন্য দৈনিক জাগরণ ‘এক মহল্লা, এক হোলিকা’ নামে প্রচার চালায়।
ফোটোশপে তৈরি হিন্দিতে প্রকাশিত দৈনিক জাগরণ-এর (Dainik Jagaran) নামে একটি সংবাদপত্র ক্লিপিং সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবিতে শেয়ার করে বলা হচ্ছে ইদুজ্জোহা (Eid Al Adha) উৎসবের সময় ছাগল কুরবানি (goat sacrifice) কমানোর উদ্দেশ্যে ‘এক মহল্লায়, একটি ছাগল’ নামের প্রচারণা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র।
বুম দেখে আসল ছবিটিতে দৈনিক জাগরণের ওই বিজ্ঞাপনী প্রচারের নাম, ‘এক মহল্লা, এক হোলিকা’। পরিবেশ বান্ধব হোলি (Holi) উদযাপন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ওই মর্মে প্রচার করা হয়।
হোলির আগের দিন হোলিকা দহন পালন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে কাঠকুটো দিয়ে আগুন (চাঁচড়) জ্বালানো হয়ে থাকে। হোলিকা পশ্চিমবঙ্গে ন্যাড়া পোড়া নামে পরিচিত।
ছবিটির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা বিবরণে বলা হয়, “সম্ভব হলে, এ বারের বকরিদে (ইদ-উল-আজহা), একটি মহল্লায় একটি ছাগলই বলি দিন। তার ফলে একাত্মতা বাড়বে, রক্তপাত কম হবে, জল খরচ কমবে এবং বর্জ্য কম ছড়াবে।”
(হিন্দিতে লেখা বিবরণ: इस बार बकरीद पर हो सके तो पुरे मोहल्ले मे एक ही बकरे की कुर्बानी दे इससे अपनापन बढेगा खून खच्चर कम होगा पानी की बर्बादी कम होगी गन्दगी कम फैलेगी)
“দৈনিক জাগরণ-কে পূর্ণ সমর্থন” – ছবিটি এই ক্যাপশন সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
‘এক মহল্লা, এক বকরা’ – এই কিওয়ার্ড দিয়ে আমরা ভাইরাল ছবিটি সার্চ করি। তার ফলে, ৫ মার্চ ২০২৩-এ করা কয়েকটি টুইট দেখতে পাই আমরা। সেগুলিতে দক্ষিণপন্থী ব্যবহারকারীরা ওই সংবাদ সংস্থাকে আক্রমণ করেন এই বলে যে, বকরি ঈদের আগেও তাদের একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত যাতে লেখা থাকবে, “একটি মহল্লা, একটি ছাগল”। মূল বিজ্ঞাপনে হোলিকা জ্বালানো কম করার আবেদন করা হয় বলে, দৈনিক জাগরণকে কটাক্ষ করা হয় ওই টুইট গুলিতে।
ওই টুইটগুলি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
এই সূত্র ধরে আমরা সার্চ করলে, হোলি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনটি দেখতে পাই। তাতে পরিবেশ-বান্ধব হোলিকা দহন পালন করার জন্য একটি পাড়ায় একটি হোলিকা জ্বালানোর আবেদন করা হয়।
সুদর্শন টিভির সাংবাদিক জীতেন্দ্র প্রতাপ সিংহ খবরের আসল ক্লিপটি টুইট করে দৈনিক জাগরণকে বয়কট করার ডাক দেন। দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়া একটি মতামত ধর্মী লেখা প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, বিজ্ঞাপনটি হল হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিডিয়া প্রোপাগান্ডার অঙ্গ।
তুলনা করে আমরা দেখি, জোড়াতলি দিয়ে তৈরি ছবিটি ও একজন ব্যবহারকারীর টুইট করা দৈনিক জাগরণ-এর আসল বিজ্ঞাপনটির মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। মিলিয়ে দেখার জন্য, দু’টি ছবি নীচে দেওয়া হল।
আমরা দেখি, বিজ্ঞাপনটি দৈনিক জাগরণ-এর মোরাদাবাদ সংস্করণে ৪ মার্চ ২০২৩ ছাপা হয়। ওই কাগজের একটি ক্লিপিংয়ের ছবি নীচে দেওয়া হল। ‘এক মহল্লা, এক হোলিকা’ শিরোনামে দৈনিক জাগরণের বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়, “এই হোলিতে, খুব কাছাকাছি একাধিক চাঁচড় না জ্বালানোর চেষ্টা করুন। বরং একটি পাড়ায় একটি হোলিকা জ্বালান। এর ফলে, দূষণ কমবে, একাত্মতা বাড়বে। গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটাবেন না, যা আমার ও আপনার অসুবিধে সৃষ্টি করতে পারে। হাইটেনশন (ভারী বিদ্যুৎবাহী) তারগুলির যেন কোনও ক্ষতি না হয়। কাঠের বদলে ঘুঁটে ব্যবহার করুন যাতে গাছ বাঁচানো যায়। এমন কিছু জ্বালাবেন না যা থেকে পরিবেশে দূষণ ছড়ায়।”
এ ছাড়া, ওই প্রচার সম্পর্কে দৈনিক জাগরণ-এর সাংবাদিক বৈভব তিওয়ারিরএকটি প্রতিবেদন ও টুইটও আমরা দেখতে পাই।
৭ মার্চ, ২০২৩ উত্তরপ্রদেশের হারদৈ পুলিশ একটি টুইটার পোস্টে দৈনিক জাগরণ-এর ওই উদ্যোগের প্রশংসা করে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
ভাইরাল ছবিটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমরা দৈনিক জাগরণ-এর উত্তরপ্রদেশের সম্পাদক আশুতোষ শুক্লার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, ‘এক মহল্লা, একটি ছাগল’ এই রকম কোনও স্লোগান দিয়ে দৈনিক জাগরণ কোনও বিজ্ঞাপন করেনি, যদিও তেমটাই দাবি করা হচ্ছে।
শুক্লা বুমকে বলেন, “দৈনিক জাগরণ-এর প্রচার ছিল, ‘এক মহল্লা, এক হোলিকা’। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যই ওই প্রচার। আগেও অনেক বার আমাদের প্রচারের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।”