বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্ষণ দাবিতে ছড়াল ভারতে পুরনো যৌন নির্যাতনের দৃশ্য
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২১ সালে বেঙ্গালুরুতে ২২ বছর বয়সী একজন মহিলাকে ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিকের যৌন নির্যাতনের ঘটনার।
সম্প্রতি এক টেলিগ্রাম চ্যানেলের স্ক্রিনশটে একজন মহিলার যৌন নির্যাতনের দৃশ্যের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয় বাংলাদেশে (Bangladesh) কোটা আন্দোলন চলাকালীন এক হিন্দু মহিলাকে সংবদ্ধভাবে ধর্ষণ (Gangrape) করেছেন উগ্র মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ওই দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। ঘটনাটি ২০২১ সালে বেঙ্গালুরুতে এক মহিলার উপরে হওয়া যৌন নির্যাতনের, যার সাথে জড়িত থাকার কারণে সেসময় ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চলতি কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নতুন করে ফের অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের পরিস্থিতি। শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ চেয়ে সেদেশে হিংসাত্মক সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ এর বেশি মানুষ। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দাবি নাশকতায় যুক্তরা ছাত্র নন বরং জঙ্গি। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কার্ফু, বিভিন্ন অংশে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
মহিলার উপর নির্যাতনের সেই দৃশ্য পোস্ট করে এক গ্রাফিকে লেখা হয়, "কোটা আন্দোলন চলাকালে এক হিন্দু মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও তার ভিডিও করে উগ্র মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। দেওয়া হচ্ছে সরকার বদলের পর হিন্দু মেয়েদের রাস্তায় ফেলে ধর্ষণ করার হুমকি!! হিন্দুদের উপর অত্যাচার আর কত?"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে দেখে ইসলামিক আর্মি: লেটেস্ট ভার্সন নামক এক টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে ২৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল। মহিলার উপর হওয়া সেই যৌন নির্যাতনের দৃশ্য ২০২৩ সালে অন্য এক ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল হলে সেসময় তার তথ্য যাচাই করেছিল।
আমরা সেসময় ভিডিওটি শুনে দেখি সেখানে উপস্থিত নির্যাতনকারীরা বাংলায় কথা বলছেন। অতঃপর, আমরা প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড অনুসন্ধান চালিয়ে নিউজ বাংলা ২৪ নামের এক সংবাদ প্রতিবেদন পাই যেখানে ওই ভিডিওতে থাকা দৃশ্যের এক অংশ প্রকাশ করা হয় এবং সেটি বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি নাগরিকের উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের ঘটনা বলে রিপোর্ট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান এক পাচার চক্রের মূল হোতা আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফি ও আবদুর রহমান ঢাকার আদালতে তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনে ভয়ঙ্কর সেই ভিডিওর কথাও উল্লেখ করা হয়, যেখানে পাঁচজন পুরুষ একজন মহিলার পোশাক খুলে ফেলে তাকে যৌন হেনস্থা করতে দেখা যায়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভিডিওটি সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর ক্ষোভ তৈরি হয়। ভিডিওতে থাকা দৃশ্যতে "একজন মহিলাকে অভিযুক্তদের নির্যাতন এবং এমনকি তার গোপনাঙ্গে একটি বোতল ঢোকাতেও দেখা" যায়।
২২ বছর বয়সী ওই তরুণীকে পরে গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। 'পাঁচ সপ্তাহের অল্প সময়ের মধ্যে' বেঙ্গালুরু পুলিশ সেই তদন্ত সম্পন্ন করে নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার করে। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্তও সেই সময় ঘটনাটির বিষয়ে পোস্ট করেন।
মামলাটির দায়িত্বে ছিল হোয়াইটফিল্ড পুলিশ যারা অভিযুক্ত ছয়জনকে খুঁজে বের করে। বাকি পাঁচ অভিযুক্তকে পরে গ্রেফতার করে রামমূর্তিনগর পুলিশ। ঘটনাটি ২০২১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব বেঙ্গালুরুর রামমূর্তিনগরে ঘটেছিল।
২২ বছর বয়সী সেই তরুণীকে হেনস্থা ও ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ তিন মহিলা সহ ১২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন সবুজ শেখ, রফিক, রিদয় বাবু, রকিবুল ইসলাম সাগর, মহম্মদ বাবু শাইক, হাকিল, আজিম, জামাল, ডালিম, নাসরথ, কাজল এবং তানিয়া। এদের মধ্যে অভিযুক্ত রিদয় বাবু বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত টিকটকার হওয়ার পাশাপাশি নারী পাচারের সাথেও জড়িত ছিলেন। বাবু, রফিক ও সবুজ মিলে বাংলাদেশ থেকে নারীদের চাকরি দেওয়ার অজুহাতে ভারতে নিয়ে আসত এবং পরে তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রফিক ও সবুজ গণধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া মহিলার উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন কারণ ওই মহিলা তাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য মহিলাদের সেই চক্র থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। তারই প্রতিশোধ নিতে অভিযুক্তরা ওই মহিলার উপর নির্যাতন চালায়।
২১ মে ২০২২ তারিখে বেঙ্গালুরুর এক আদালত ঘটনায় জড়িত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের শাস্তি ঘোষণা করে।