বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের উপর আক্রমণের ভিডিও সাম্প্রদায়িক দাবিসহ ভাইরাল
বুম দেখে দাবিটি ভুয়ো এবং ঘটনাটির কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই।
বাংলাদেশে (Bangladesh) একজন ব্যক্তির অন্তত দুজন যৌনকর্মীকে আক্রমণ করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় ব্যবহারকারীদের একাংশ ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিসহ (Communal Claim) শেয়ার করেছে। ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এক মুসলিম যুবক রাস্তায় বোরখা না পরার জন্য হিন্দু মহিলাদের উপর বাংলাদেশে এভাবে হামলা করেছে।
বুম দেখে এই ঘটনায় কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই এবং ভিডিওটি বাংলাদেশে মহিলা যৌনকর্মীদের উপর বিনা প্ররোচনায় হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর, বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার খবর প্রকাশ করে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে জানান বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবর 'অতিরঞ্জিত'। তিনি মোদীকে আশ্বস্ত করেন যে তার সরকার সমস্ত নাগরিককে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভিডিওতে নীল টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে ব্যস্ত রাস্তায় একটি সবুজ লাঠি দিয়ে অন্তত দুজন মহিলাকে তাড়া করতে এবং মারধর করতে দেখা যায়। অন্য এক ব্যক্তি হামলার ঘটনাটি রেকর্ড করে। হামলাকারীকে বাংলায় বলতে শোনা যায়, সে ইতিমধ্যে যৌনকর্মীদের একটি দলকে আক্রমণ করেছে এবং অন্য একটি দলকে আক্রমণ করবে। পরে ভিডিওতে, এক নির্যাতিতা মহিলাকে অনুরোধ করে প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায় যে সে আর এই ধরনের কাজে জড়িত হবে না।
ট্রিগার সতর্কতাঃ ভিডিওটির দৃশ্যগুলি বিব্রতিকর। দর্শকদের বিচক্ষণতার পরামর্শ দেওয়া হল।
ভিডিওটি শেয়ার করে ইংরেজিতে ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়, "বাংলাদেশে হিন্দু মেয়ে ও মহিলাদের অবস্থা দেখুন, জিহাদি ইসলামপন্থী যুবকরা রাস্তায় টহল দিচ্ছে। এবং হিন্দু মেয়েরা বা হিন্দু মহিলারা যারা বোরখা ছাড়া রাস্তায় হাঁটছে তাদের খারাপভাবে মারধর করা হচ্ছে। দেখুন কিভাবে এক উগ্রপন্থী জিহাদি মুসলিম যুবক রাস্তার মাঝখানে হিন্দু মহিলাদের মারধর করছে। আপনারা সবাই চুপ করে আছেন কেন?"
পোস্টটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পায় যেখানে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট দেখা যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার শ্যামলী এলাকায় যৌনকর্মীদের লক্ষ্য করে এই হামলা করা হয়।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটগুলিতে 'এইচ এম রাসেল সুলতান' নামটি দেখা যায়। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায় ভিডিওটি ওই নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করেন এবং পোস্টটির মাধ্যমে যৌনকর্মীদের উপর আক্রমণকে উৎসাহিত করেন।
প্রতিবেদনটি থেকে ইঙ্গিত নিয়ে আমরা এইচ এম রাসেল সুলতানের ফেসবুক প্রোফাইলটি খুঁজে পাই যেখানে ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ তিনি একটি পোস্টে স্বীকার করেছেন তিনি লেখক তসলিমা নাসরিনের সমালোচনার জবাবে হামলাগুলি করেন।
পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে।
২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ, নাসরিন ভিডিওটি পোস্ট করে মহিলাদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন মুর্শিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, "যৌনকর্মীদের উপর হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। আমরা অবিলম্বে পুলিশকে জানাই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং পরবর্তীতে এধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে। এই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করব। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।"
২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের 'সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক' মহিলাদের উপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন তাদের পেশা দেশের বর্তমান সংবিধানে নিষিদ্ধ নয়।
আমরা রাসেল সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করি যিনি সাম্প্রদায়িক দাবিগুলি অস্বীকার করেন। সুলতান বুমকে বলেন, "তারা যৌনকর্মী ছিল এবং তারা সবাই মুসলমান ছিল। তারা প্রায়শই রাস্তায় পুরুষদের হেনস্থা ও জ্বালাতন করত। এমনকি এই জায়গাটি পুনর্বাসনের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকাও ছিল না। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম কারণ তাদের কার্যকলাপ প্রকাশ্যে ছিল।"