শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কোটা বাতিলের ঘোষণা দাবিতে ছড়াল ২০১৮ সালের ভিডিও
বুম দেখে শেখ হাসিনার বক্তব্যের এই ভিডিও প্রায় ৬ বছরের পুরনো। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে এর সম্পর্ক নেই।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছেন দাবি করে তার এক বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, "কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই। কোটা-টোটার দরকার নেই, ঠিক আছে, বিসিএস যেভাবে পরীক্ষা হবে - মেধার মাধ্যমে সব নিয়োগ হবে।"
বুম যাচাই করে দেখে শেখ হাসিনার বক্তব্যের এই ভিডিও সাম্প্রতিক নয়। ২০১৮ সালের এই ভিডিওর সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সম্পর্ক নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বর্তমানে উত্তাল বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি সম্প্রতি অনমনীয় মনোভাব দেখালে আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে সেদেশের পরিস্থিতি। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই সেদেশের বিভিন্ন অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা। ১৮ জুলাই প্রকাশিত ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে পরিস্থিতির মোকাবিলায় সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের কথা ঘোষণা করে শেখ হাসিনা সরকার।
এমতাবস্থায় 'এইমাত্র পাওয়া খবর - সব কোটা বাতিল করলেন' হাসিনা দাবিতে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করলে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির এক ভিডিও প্রতিবেদন ইউটিউবে খুঁজে পায়।
ওই প্রতিবেদনে হাসিনাকে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ বেশভূষায় একই বক্তব্য রাখতে শোনা যায়।
১৩ মিনিটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিও প্রতিবেদনের ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে ৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া শেখ হাসিনার সেই বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়।
১১ এপ্রিল ২০১৮-তে এবিষয়ে প্রকাশিত বাংলা ট্ৰিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে কোটা বাতিলের ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু কন্যা সেসময় বলেন, "কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনও কোটারই দরকার নেই।"
বর্তমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি
২০১৮ সালে সংসদ অধিবেশনে হাসিনা কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা করলেও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ ফের জিইয়ে ওঠে বাংলাদেশ হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়কে কেন্দ্র করে।
২০ জুলাই ২০২৪-এ প্রকাশিত বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, "এর আগে চলতি বছরের পাঁচই জুন হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকারের ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। তাৎক্ষণিকভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে প্রতিবাদ করতে শুরু করে। এরপর কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিক প্রতিবাদের মধ্যেই এক পর্যায়ে তারা সরকারকে স্থায়ীভাবে কোটা সংস্কারের জন্য আলটিমেটাম দেয়।"
অতঃপর, শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠলে পরিস্থিতি ক্রমশঃ জটিল আকার নেয়।
১৪ জুলাই ২০১৪-তে প্রকাশিত সময় টিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসিনা ২০১৮ সালে বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণার কথা জানান বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে হাসিনাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "আওয়ামী লীগের অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত, কিছু জ্ঞানীগুণী আছেন যারা ঘরের মধ্যে বসে মিথ্যা অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিচ্ছেন—এসব দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে বলি কোটা বাদ দিলাম।"
কোটার বিষয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের সরকারের কিছু করার নেই বলে জানান। প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসিনার বক্তব্য ছিল, "কোটার ব্যাপারে এখন সরকারের কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে।"
বিবিসি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী ২১ জুলাই ২০২৪-এ কোটা নিয়ে বাংলাদেশ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া কোটা পুর্নবহালের আদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হবে বলে জানায়। বাকি সাত শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এবং অন্য এক শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা হিসাবে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে।