যুবকের কপালে 'জয় ভোলেনাথ' লেখা ভিডিও সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল
বুমকে বরেলি পুলিশ নিশ্চিত করে জানায় অভিযুক্ত ও আক্রান্ত উভয়ই একই সম্প্রদায়ের।
উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বরেলিতে বিশেষভাবে সক্ষম মুসলিম (Muslim) একজন ব্যক্তির কপালে হিন্দুরা (Hindu) জোর করে 'জয় ভোলেনাথ' লিখে দিয়েছে দাবি করে এক ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন মহিলা অভিযোগ করে বলছেন এক ব্যক্তি বিশেষভাবে-অক্ষম ছেলেটির উপর বলপূর্বক এমন কাজটি করে এবং তাকে এবিষয়ে অন্যরা প্রশ্ন করলে ওই ব্যক্তি কাজটি মজার ছলে করেছে বলে জানায়।
বুম যাচাই করে দেখে এই ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িক হিংসার সম্পর্ক নেই। বরেলি পুলিশ এবিষয়ে আমাদের নির্যাতিত এবং অভিযুক্ত উভয়ই একই সম্প্রদায়ের বলে নিশ্চিত করে।
ভিডিওটি হিন্দি দাবিসমেত শেয়ার করা হয় যার অনুবাদ, "উত্তরপ্রদেশ - লোহার রড গরম করে প্রতিবন্ধী এক মুসলিম যুবক "শাদাব" এর কপালে "জয় ভোলেনাথ" চিহ্ন লিখে দেওয়া হয়। সনাতনীরা এতটাই জঘন্য হয়ে গেছে যে তারা প্রতিবন্ধীদের উপর তাদের নোংরা কৌশল দেখাচ্ছে। এখন পুলিশ বলবে যে এটা করেছে তার দোষ নয়, যে ভিডিও ভাইরাল করেছে তার দোষ।”
(হিন্দিতে মূল লেখা: उत्तरप्रदेश - विकलांग मुस्लिम युवक "शादाब" के पेशानी पर लेहे के छड़ गरम करके दाग दिया "जय भोलेनाथ" इतने घिनौने हो गए हैं सनातनी के अब विकलांग लोगों पर अपनी घटिया पाना दिखाने लगे हैं, अब पुलिस ये कहेगी के जिसने किया उसकी गलती नहीं हैं जिसने वीडियो वायरल किया उसकी गलती है।)
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বাংলাতেও একই দাবি করে ঘটনাটি সম্পর্কে লেখা হয়, "ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের এক মুসলিম যুবকের কপালে লোহার রড গরম করে ছ্যাকা দিয়ে "জয় ভোলেনাথ" লিখে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা... এতোদিন চুল, দাড়ি কেটে দিতো। এখন থেকে কপালে লোহার রডের ছ্যাকা দিয়ে লিখেও দেয়া হচ্ছে... বাহ্.... সিএম যোগী 🐂 লোকটা দেখছি গোটা বিশ্বে ভারতের ইমেজটাকে নষ্ট করে ফেলবে...।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ঘটনাটির বিষয়ে হিন্দিতে সম্পর্কিত এক কীওয়ার্ড অনুসন্ধান চালিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে সাংবাদিক উৎকর্ষ সিংয়ের এক পোস্ট খুঁজে পাই যেখানে এই একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
সিং এক্সে (পূর্বে টুইটার হিসেবে পরিচিত) ভিডিওটি পোস্ট করে আক্রান্তের নাম দানিশ ও অভিযুক্তের নাম শাদাব হিসাবে উল্লেখ করেন।
বরেলি পুলিশও ওই পোস্টের উত্তরে একই তথ্য নিশ্চিত করে। তারা লেখে, "মামলার তদন্তে জানা গেছে, প্রায় ৫ দিন আগে শাদাব খান নামে এক ব্যক্তি মার্কার পেন দিয়ে তার মামাতো ভাইয়ের কপালে এক ধর্মীয় বাক্য লেখেন যা বর্তমানে হালকা হয়ে গেছে। নির্যাতিতার মা কোনও ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি ও এবিষয়ে কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা উত্তরপ্রদেশের বরেলি জেলার শাহাবাদ এলাকায় হওয়া এই ঘটনার বিষয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনও পাই।
২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এবিপি লাইভের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দানিশ বাড়িতে পৌঁছে তার পরিবারের সদস্যদের ঘটনাটি বললে তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয় কিন্তু আক্রান্তের পরিবার পরে তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে।
এবিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা প্রেম নগর থানার এসএইচও রাজেশ সিংয়ের সাথে যোগাযোগ করি। সাম্প্রদায়িক দাবিটি অস্বীকার করে নির্যাতিত ও অভিযুক্ত একই সম্প্রদায়ের বলে সিং আমাদের জানান।
সিং বুমকে বলেন, "বেশ কয়েকদিন আগে এই ঘটনাটি ঘটে। শাদাব নামে এক ব্যক্তি মার্কার পেন দিয়ে তার মামাতো ভাই দানিশের কপালে এই ধর্মীয় জিনিসগুলি লিখেছিল। যখন দানিশের অন্যান্য আত্মীয়রা ঘটনাটি জানতে পারেন, তখন তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসেন। তবে নির্যাতিতর মা কোনও অভিযোগ করতে রাজি হননি।"