ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল কেদারনাথ তীর্থযাত্রীদেরকে মারধরের ভিডিও
গুপ্তকাশির ডিএসপি বিমল রাওয়াত বুমকে নিশ্চিত করে বলেন এই ঘটনার পিছনে সাম্প্রদায়িক কোনও কারণ নেই।
উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে (Kedarnath) একদল লোক এবং কিছু ঘোড়া ও খচ্চর চালকদের মধ্যে ঝগড়ার এক ভিডিও শেয়ার করে সম্প্রতি এক ভুয়ো দাবি করে বলা হয় মুসলমানরা (Muslim) তীর্থস্থানে হিন্দু ভক্তদের উপর আক্রমণ করছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো এবং ডিএসপি গুপ্তকাশী বিমল রাওয়াতের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয় যে ঘটনাটির সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। রাওয়াত আমাদের জানান ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের কেউই মুসলমান নন।
ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা যায় একদল ঘোড়া এবং খচ্চরওয়ালা উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ ধামের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী কয়েকজন তীর্থযাত্রীর সাথে ঝগড়া করছে। ভিডিওর পরের অংশে ঝগড়া বেড়ে গেলে তাদের তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ করতে দেখা যায়।
ভিডিওটি শেয়ার করে হিন্দিতে লেখা হয়, "কেদারনাথে জিহাদিদের আতঙ্ক! বলা হচ্ছে ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরাখণ্ড দেবভূমি কেদারনাথ ধামের। কেদারনাথে যাত্রীদের সাথে থাকা মুসলিম জিহাদি ঘোড়া-খচ্চরওয়ালারা লাঠি এবং রড দিয়ে যাত্রীদের মারধর করছে।"
টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
একই ধরণের মিথ্যা ও সাম্প্রদায়িক দাবি করে ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ঘটনাটি সম্পর্কে টুইটারে একটি সম্পর্কিত কীওয়ার্ড অনুসন্ধান করে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশের উদ্ধৃতি সহ ভিডিওটি নিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর করা এক টুইট দেখতে পায়।
টুইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
জুনের ১৩ তারিখের সেই টুইটে রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশের নাম করে বলা হয়, "কেদারনাথ ধামে যাওয়ার পথে ভক্তদের লাঞ্ছনাকারী ঘোড়া ও খচ্চরওয়ালাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি সোনপ্রয়াগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে"।
রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশের নাম করে বলা হলেও ওই টুইটে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এর থেকে ধারণা করে আমরা উত্তরাখণ্ড পুলিশের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে গিয়ে দেখতে পাই তারা জুনের ১৩ তারিখে অভিযুক্তদের ছবিসহ ঘটনাটির বিষয়ে টুইট করেছে।
১৩ জুন রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশ ফেসবুকে ঘটনাটির বিষয়ে এক বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, দিল্লির বাসিন্দা তনুকা পাউন্ডার এক অভিযোগ দায়ের করে বলেন ১০ জুন তিনি গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথের পথে হাঁটার সময় ভীমবলি ব্রিজের কাছে একটি ঘোড়াকে খারাপ অবস্থায় দেখতে পান। সেসময় তিনি ঘোড়াটির জন্য কিছু সাহায্য খোঁজার চেষ্টা করেন এবং লক্ষ্য করে দেখেন এক ব্যক্তি সেখানে নিষ্ঠুরভাবে কয়েকটি প্রাণীকে মারছে।
এই নিয়ে তিনি প্রতিবাদ করলে একদল ঘোড়াওয়ালা সেখানে জড়ো হয় এবং প্রায় ৫ জন তনুকা ও তাকে উদ্ধার করতে আসা লোকজনের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তনুকাকে রাজ্য ছাড়ার হুমকিও দেয়। পরে রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশের তদন্তে জানা যায়, মামলার পাঁচ অভিযুক্ত হলেন অঙ্কিত সিং, সন্তোষ কুমার, রোহিত কুমার, গৌতম এবং একজন নাবালক।
১৪ জুন রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশ ঘটনার বিষয়ে আরও একটি টুইট করে জানায় কেদারনাথ যাত্রার পথে ভক্তদের লাঞ্ছনার জন্য ঘোড়াওয়ালাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গুপ্তকাশী পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট তথা ডিএসপি বিমল রাওয়াতের সাথে যোগাযোগ করে। ভাইরাল পোস্টগুলিতে থাকা সাম্প্রদায়িক দাবির বিষয়ে রাওয়াতকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তা নস্যাৎ করেন।
"ভুক্তভোগী বা অভিযুক্ত কেউই মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়," বুমকে জানান রাওয়াত।