না, যোগী আদিত্যনাথ বিশ্নোইয়ের কাছে সলমন খানকে ক্ষমা চাইতে বলেননি
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিও যোগী আদিত্যনাথের একটি সাক্ষাৎকারের অংশ যেখানে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে সংবিধানের সম্মান করতে বলেছেন।
এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) নেতা বাবা সিদ্দিকীর হত্যা এবং গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের (Lawrence Bishnoi) নাম প্রকাশ্যে আসার পর, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেন যোগী আদিত্যনাথ সলমন খানকে (Salman Khan) বিশ্নোই সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বুম দেখে যোগী আদিত্যনাথের ভাইরাল ভিডিওটি লোকসভা নির্বাচনের আগে মার্চ মাসে এবিপি নিউজকে দেওয়া তার এক সাক্ষাৎকারের অংশ। মূল ভিডিওতে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে ভারতের সংবিধানকে সম্মান করার এবং দেশের আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যোগী আদিত্যনাথকে বলতে শোনা যায়, "সলমনের কেন চিন্তা হচ্ছে না? ওরা বাড়ি পাচ্ছেন, খাবার পাচ্ছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু ওরা ভারতের আইনতো মানবেন। আইন ভারতের মতো মানবেন, ভারতের সংবিধানকে সম্মান করবেন। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। শরীয়ত আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে, কিন্তু তা সংবিধানের চেয়ে বড় হতে পারে না। আর ওরা এই কথাটা মেনে চলুক।" (হিন্দি থেকে অনূদিত)
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, "সিএম যোগী সালমান খানকে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন?"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাইঃ সলমন খানকে ক্ষমা চাইতে বলেননি যোগী আদিত্যনাথ
বুম ভাইরাল ভিডিওয় যোগী আদিত্যনাথের হাতে এবিপি নিউজের লোগোসহ একটি মাইক লক্ষ্য করে এবং দেখে সাংবাদিক রোহিত সাভাল তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
এই সূত্রধরে, আমরা গুগলে এবিপি নিউজকে যোগী আদিত্যনাথের দেওয়া সাক্ষাৎকার সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ২৫ মার্চ, ২০২৪-এর এবিপি নিউজের একটি প্রতিবেদন পাই। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আদিত্যনাথ তার সাক্ষাৎকারে মুসলিম সমাজের কথা বলছিলেন।
এরপর, আমরা এবিপি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ আপলোড করা যোগী আদিত্যনাথের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখি। দেখুন এখানে। নীচে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটের সঙ্গে এবিপি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি তুলনা দেওয়া হল।
ইউটিউব ভিডিওর ৩৮:৪৯ মিনিটে, সাংবাদিক রোহিত সাভাল যোগী আদিত্যনাথকে জিজ্ঞাসা করেন, "বিরোধীরা বলে আপনি বসুধৈব কুটুম্বকমের কথা বলেন, সকলের জন্য চিন্তা করেন, কিন্তু এই দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের সম্পর্কে আপনি ততটা চিন্তিত নন?"
প্রশ্নের উত্তরে যোগী বলেন, "মুসলমানের কেন চিন্তা হচ্ছে না? ওরা বাড়ি পাচ্ছেন, খাবার পাচ্ছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু ওরা ভারতের আইনতো মানবেন। আইন ভারতের মতো মানবেন, ভারতের সংবিধানকে সম্মান করবেন। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। শরীয়ত আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে, কিন্তু তা সংবিধানের চেয়ে বড় হতে পারে না। আর ওরা এই কথাটা মেনে চলুক। তখন ভারতের মানুষ ওদের সম্মান করবে।" (হিন্দি থেকে অনূদিত)
মূল ভিডিও থেকে স্পষ্ট হয় যোগী আদিত্যনাথ 'সলমন' নয়, 'মুসলমানদের' কথা বলছেন।
এছাড়াও, আমরা দেখি সংবাদমাধ্যম অমর উজালা, দৈনিক ভাস্কর এই সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সংবাদ প্রতিবেদনগুলিতেও উল্লেখ করা হয়, যোগী আদিত্যনাথ মুসলিম সম্প্রদায়কে ভারতের সংবিধান মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাবা সিদ্দিকীর হত্যা, লরেন্স বিশ্নোই ও সলমন খান
মুম্বাইয়ে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) নেতা বাবা সিদ্দিকিকে ১২ অক্টোবর গুলি করে হত্যার দায় শিকার করে বিশ্নোই গ্যাং একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। বিশ্নোই গ্যাং বাবা সিদ্দিকিকে হত্যার কারণ হিসাবে তার সলমন খান এবং দাউদ ইব্রাহিমের সাথে ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে।
'হাম সাথ সাথ হ্যায়' ছবির শ্যুটিংয়ের সময় যোধপুরের একটি গ্রামে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ করা হয় সলমন খানের বিরুদ্ধে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের যোধপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষ্ণসার হরিণ ও চিঙ্কারা শিকারে অভিযুক্ত হন সলমন খান। বিশ্নোই সম্প্রদায় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য খ্যাত। তারা হরিণকে তাদের বংশধর হিসাবে গণ্য করে। এবং এর থেকেই লরেন্স বিশ্নোই এবং সলমন খানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রপাত বলে জানা যায়।