টিটাগড়ের কাউন্সিলর বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লা খুন: যা জানা গেল
মনীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় টিটাগড় থেকে এখনও পর্যন্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবারের ঘটনা
টিটাগড়ের কাউন্সিলর বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লা রবিবার রাত ৯ টা নাগাদ টিটাগড়ের পুরানি বাজারের এপি দেবী রোড স্থিত তাঁর অফিসে ঢোকার মুখে আততায়ীদের হাতে খুন হন। পেশায় আইনজীবী বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাহুবলি এই নেতা দলীয় কর্মসূচি সেরে হওড়া থকে ফিরছিলেন। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, ১৪ টি গুলির চিহ্ন মিলেছে মনীশ শুক্লার শরীরে।
ঘটনার দিন তাঁর দুই ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছুটিতে থাকায় মনীশের সঙ্গে সে সময় কেউই ছিলেন না বলে খবরে প্রকাশ। স্থানীয় এক হাসপাতাল থেকে মহানগরের এক বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা করে।
মনীশ শুক্লার খুনের ঘটনা রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সহ একধিক বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা টুইট করেন। পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আর্জি জানান কৈলাশ।
সোমবার সারাদিন উত্তপ্ত পরিস্থিতি
সোমবার বিজেপির তরফে ১২ ঘন্টা বন্ধ ডাকা হয় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ, বিক্ষোভ, ইঁটবৃষ্টি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। রবিবার রাত থেকেই এলাকায় প্রচুর পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সোমবার এনআরএস হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর ৬ টা নাগাদ পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়। সকাল থেকেই হাসপাতালে ভিড় বাঁধে বিজেপি নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা রাজ্যপালের কাছে দেহ নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধুন্ধুমার বাঁধে। জান বাজারের কাছে পুলিশ দেহ আটকায়। রাজ্যপাল ভবনের কাছে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বিজেপি-কর্মী সমর্থকদের আটকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বাতিল হওয়া প্লেনের টিকিটের মূল্য ফেরত: আপনার যা জানা প্রয়োজন
তার আগে মনীশের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না বলে রাজ্যপালের কাছে নালিশ জানিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয় বর্গীয়।
রবিবার খুন হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেই টুইট করে রাজ্যপাল জগদীপ ধানখড় তলব করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। সোমবার তাঁরা কেউই রাজভবনে যাননি। রাজীব সিনহার অবসরের পর মুখ্যসচিব হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নেওয়ার পর সোমবার প্রথম দেখা করতে যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিআইডি ডিজি প্রণব কুমাররে নেতৃত্বে গোয়েন্দাদের একটি দল মনীশের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে। সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। ভিডিওগ্রাফিও করা হয় ঘটনাস্থলে। বাইক চেপে আসা দুস্কৃতীরা ৫ রাউন্ড গুলি চালায়। খুন করতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র।
রবিবার রাজ্য পুলিশের তরফে টুটট করে বলা হয়, "পুলিশ অপরাধের তদন্ত করছে এবং ব্যক্তিগত শত্রুতা সহ সম্ভাব্য সমস্ত কারণ খতিয়ে দেখছে কারণ মৃতব্যক্তি কয়েকটি হত্যা ও হত্যার চেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।"
ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকবৈঠক করে বলেন, 'মণীশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আজকের নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক খুন। কিন্তু অর্জুন সিংহ ওকে গুণ্ডা দিয়ে বিজেপি করতে বাধ্য করায়। কিন্তু বিজেপিতে আর থাকতে পারছেন না মণীশ। তাই তৃণমূলে ফিরতে চাইছিলেন।'
অর্জুন সিংহের অভিযোগ দুস্কৃতী লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুকুল রায় মনীশের বাড়ি দেখা করতে যান। সঙ্গে ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
সোমবার অবশ্য রাজ্য সভাপতি বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ সংবাদিকদের কাছে বেঁফাস মন্তব্য করে বসেন, ''পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। দিন দিন এই রাজ্য বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো মাফিয়ারাজ চলছে।"
সিআইডি সূত্রে খবর মহম্মদ খুররম ও গুলাব সেখ নামে দুই ব্যক্তিকে টিটাগড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনেই ওই এলাকার বাসিন্দা। পুরনো শত্রুতা নাকি রাজনৈতিক কারণ রয়েছে তদন্ত করছে সিআইডি।
মনীশের উত্থান সিপিএম আমলে তড়িৎ তপাদারে ঘনিষ্ট সহযোগী হিসাবে। দল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয় পরে। আর অর্জুন সিংহের দল বদলের সাথে সাথে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ট হয় মনীশ।
আরও পড়ুন: মৃতের অধিকার ও শেষকৃত্য: যা জানা প্রয়োজন