ইন্টারনেট স্বাধীনতায় কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?
কম্পারিটেকের স্কোরিং সিস্টেম শুধু দেখেছে যে কত লোকের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছেছে। বিভিন্ন সময় যে ভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এই পরিসংখ্যানে তা ধরা পড়েনি।
ব্রিটিশ টেক রিভিউ সংস্থা কম্পারিটেক বিভিন্ন দেশে ইন্টেরনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা এবং সরকারি নজরদারির একটি তুলনামূলক সমীক্ষা করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ভারতের স্কোর তার বেশির ভাগ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ভাল।
প্রতিটি দেশকে এক থেকে দশের মধ্যে একটি স্কোর দেওয়া হয়েছে। যে দেশের স্কোর এক, সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা সর্বোচ্চ। যে দেশের স্কোর দশ, সেখানে সরকারি নজরদারি ও বিধিনিষেধের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারের মতোই ভারতের স্কোরও চার। স্কোরটি সন্তোষজনক। সবচেয়ে খারাপ স্কোর করেছে চীন। চিনের স্কোর নয়। তার পর রয়েছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপাল। এদের স্কোর যথাক্রমে সাত, ছয় এবং পাঁচ।
কম্পারিটেক এই স্কোর তৈরী করার সময় পাঁচটি বিষয়ের উপর নজর দিয়েছিল। প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য দুই পয়েন্ট বরাদ্দ ছিল। এই পাঁচটি বিষয় হল— টরেন্ট, পর্নোগ্রাফি, নিউজ মিডিয়া, সোশাল মিডিয়া এবং ভিপিএন। যদি ইন্টেরনেট পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকে কিন্তু পরিষেবা ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তবে এক পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। পরিষেবা একেবারে নিষিদ্ধ হলে দেওয়া হয়েছে দুই পয়েন্ট।। অতএব, যে দেশ যত বেশি স্কোর করবে, সেখানে বিধিনিষেধের পরিমাণও তত বেশি বলেই ধরে নিতে হবে।
স্টাডিটা দেখা যাবে এখানে।
বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে সেন্সরশিপ
এই সমীক্ষা অনুসারে, ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে খারাপ ১০ টি দেশ হল—উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, তুর্কেমেনিস্তান, ইরান, বেলারুস, তুরস্ক, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং এরিট্রিয়া।
উত্তর কোরিয়ায় সর্বাধিপত্যকামী শাসন চালু। সেখানে সাধারণ মানুষের সংযোগের সব মাধ্যমের ওপরই কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইন্টারনেটও তার ব্যতিক্রম নয়। স্থানীয় ভাবে তৈরি স্মার্টফোন উত্তর কোরিয়ার সর্বত্রই পাওয়া যায়, কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা ততটুকুই পাওয়া যায়, যতটা সরকার ছাড় দেয়। সেই ছাড়ের পরিমাণ অতি সামান্য। ভিপিএন, টরেন্ট, পর্নোগ্রাফি, রাজনৈতিক বিষয় এবং সোশাল মিডিয়ার মতো পরিষেবা যা অন্য জায়গায় সহজলভ্য, এ দেশে তা একেবারেই অনুপস্থিত।
চীনে ভিপিএন এবং পর্ন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সোশাল মিডিয়ার ব্যবহারও সীমিত। চীনে শুধুমাত্র স্থানীয় সংস্থার মালিকানাধীন সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করা যায়, এবং সেই পরিসরেও রাষ্ট্রের কড়া নজরদারি থাকে। তার ফলে গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মত পশ্চিমি ইন্টারনেট সংস্থাগুলি চীনে নিষিদ্ধ। চীনের বিদেশি ইন্টারনেট সংস্থাগুলিকে আটকে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল নামে পরিচিত। কম্পারিটেক আরও লক্ষ্য করেছে যে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক সংবাদ সংস্থার উপস্থিতি খুব কড়া ভাবে নিয়ন্ত্রিত। ইন্টারনেটে সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ করার জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
আর আমাদের প্রতিবেশী পাকিস্তানে সোশাল মিডিয়ায় সহজেই প্রবেশ করা যায় কিন্তু পর্নোগ্রাফি এবং রাজনৈতিক মাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
সংবাদে প্রকাশ, ইন্টারনেট বন্ধ করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ভারতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের স্কোর রীতিমতো ভাল। কম্পারিটেকের এই তুলনামূলক সমীক্ষাটি শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার বিচার করে। ইন্টারনেট শাটডাউন, অর্থাৎ একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া, এই সমীক্ষার মাপকাঠিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার পরিপন্থী, অথবা সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। তার ফলে এই সমীক্ষাটিতে বড় ধরনের খামতি থেকে গিয়েছে।
সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শাটডাউন হওয়া স্বত্ত্বেও ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা খুবই সহজলভ্য, এবং এ দেশে মোবাইল ডেটার দাম দুনিয়ায় সবচেয়ে কম। এ ছাড়া টরেন্ট, ভিপিএন এবং পর্নোগ্রাফির মত বিষয়, যেগুলি অন্য অনেক দেশেই নিষিদ্ধ, তা ভারতে আইন সম্মত ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।