
ফেসবুক নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ঘিরে ভারতে রাজনৈতিক তরজা
ওই প্রতিবেদনে দাবি ভারতের ফেসবুক জননীতি নির্দেশক বিজেপি সদস্যদের বিদ্বেষী কথার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ না নিতে সুপারিশ করেন।

ঘৃণা উদ্রেককারী পোস্ট নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ফেসবুক তার নিজস্ব নীতিই ভারতীয় শাসক দল বিজেপির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ফেসবুক লঙ্ঘন করে চলেছে, এই মর্মে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ভারতের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবেদনটির শিরোনাম: "ফেসবুকের ঘৃণাসঞ্চারী পোস্ট সংক্রান্ত নীতি ভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে সংঘাতে।" ১৪ অগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, ফেসবুক ইন্ডিয়ার নীতি বিষয়ক আধিকারিক আঁখি দাস পরামর্শ দিয়েছেন, বিজেপির সদস্যদের পোস্ট করা ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া চলবে না, কেননা "তাতে ভারতে সংস্থাটির ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।"
স্বভাবতই বিষয়টি ভারতীয় রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে, যাতে বিরোধী নেতারা এবং শাসক মন্ত্রিসভার সদস্যরা পরস্পরের বিরুদ্ধে টুইটারে কামান দাগছেন।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ফেসবুকের মুখপাত্র কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বুম ফেসবুকের থার্ড-পার্টি তথ্য-যাচাইকারী প্রকল্পের অংশ, এটি ফেসবুকের কন্টেন্ট নীতি থেকে আলাদা যা নিয়ে ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
"সংস্থার ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়া"
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রীমতি দাস ফেসবুকের ভারতীয় কর্মচারীদের নির্দেশ দেন, "বিদ্বেষমূলক পোস্ট করে ফেসবুকের নীতি লঙ্ঘন করার দায়ে শ্রীযুক্ত মোদীর দলের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে সেটা সংস্থার ভারতে ব্যবসার স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করবে l"
উদাহরণস্বরূপ প্রতিবেদনে লেখা হয়, টি রাজা নামে তেলেঙ্গানা থেকে নির্বাচিত এক বিজেপি বিধায়ক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে ফেসবুকে একটি বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেন, যেটাকে ফেসবুকের কর্মচারীরা হিংসায় উৎসাহ দেওয়া বলে বিবৃত করেন, যাতে তিনি সংস্থার "বিপজ্জনক ব্যক্তি ও সংগঠন"-এর আওতায় চলে আসেন, নীতি অনুযায়ী যাকে বরাবরের জন্য ফেসবুকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনও ওই রাজনীতিকের পোস্ট বহাল তবিয়তে জারি রয়েছে।
প্রতিবেদনের অভিযোগ, যখন ফেসবুক-কে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হয়, কেবল তখনই তরা রাজার ওই পোস্টটি মুছে দেয়। আর টি রাজা নিরীহ ভাব করে বলেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি এবং তাঁর অ্যাকাউন্ট নাকি ২০১৮ সাল থেকে 'হ্যাক' হচ্ছে।
বিজেপির কর্নাটকের সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে এবং দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বেশ কিছু পোস্টও ফেসবুক তখনই মুছতে উদ্যোগ নেয়, যখন তার কাছে নেটিজেনরা কৈফিয়ত চাইতে থাকে। অথচ হেগড়ে এবং মিশ্র, উভয়েরই সোশাল মিডিয়ায় অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে কপিল মিশ্র দিল্লিতে আইনরক্ষকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে তোপ দাগেন যে, তিন দিনের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন বন্ধ না হলে তিনি নিজেই তা গায়ের জোরে বন্ধ করে দেবেন। তাঁর এই বক্তব্যের কিছু পরেই পূর্ব দিল্লিতে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে যাতে অন্তত ৪০ জনের প্রাণ যায়।
তাঁর ওই বক্তৃতার ভিডিও অনেক পরে ফেসবুক সরিয়ে নেয়।
মোদী এবং বিজেপির প্রতি আঁখি দাসের ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের দৃষ্টান্তও প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট হয়, তাঁর মতো উচ্চপদস্থ একজন ফেসবুক কর্তার নিজের রাজনৈতিক মতামত কী ভাবে মোদীর দলের নেতাদের বিদ্বেষমূলক প্রচারে সোশাল মিডিয়াকে ব্যবহৃত হতে দিয়েছে। তিনি এর আগে মোদীকে প্রশংসা করে একটি প্রবন্ধও লিখেছেন এবং একটি পোস্টও শেয়ার করেছেন, যেখানে মুসলিমদের একটি "অধঃপতিত সম্প্রদায়" বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আর রবিবার সেই আঁখি দাস দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল-এ অভিযোগ দায়ের করলেন যে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর তাঁকে নাকি সোশাল মিডিয়ায় ভয় দেখানো সহ, হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে!
রাজনৈতিক চাপানউতোর
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি খুব দ্রুতই ভারতীয় রাজনীতিতে হৈ-চৈ ফেলে দেয় এবং বিরোধী নেতারা ফেসবুকের সঙ্গে বিজেপির অশুভ আঁতাতের তদন্ত দাবি করতে থাকেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী তো এমনও অভিযোগ করেন যে, বিজেপি এবং আরএসএস ভারতে ফেসবুকের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
BJP & RSS control Facebook & Whatsapp in India.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) August 16, 2020
They spread fake news and hatred through it and use it to influence the electorate.
Finally, the American media has come out with the truth about Facebook. pic.twitter.com/Y29uCQjSRP
কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ জবাবে রাহুলকে "হেরো" আখ্যা দেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ব্রিটিশ উপদেষ্টা সংস্থা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে কংগ্রেসের যোগসাজশের কথা উল্লেখ করেন।
Losers who cannot influence people even in their own party keep cribbing that the entire world is controlled by BJP & RSS.
— Ravi Shankar Prasad (@rsprasad) August 16, 2020
You were caught red-handed in alliance with Cambridge Analytica & Facebook to weaponise data before the elections & now have the gall to question us? https://t.co/NloUF2WZVY
সরকার অবশ্য এখনও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত খুঁটিনাটি এবং ফেসবুকের সঙ্গে তার সম্পর্ক বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি।
ইতিমধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শশী থারুর জানিয়েছেন, কমিটি ফেসবুকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবে।
আম আদমি পার্টির বিধায়ক এবং দিল্লির শান্তি ও সম্প্রীতি কমিটির সভাপতি রাঘব চাড্ডা জানিয়েছেন, ফেসবুকের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের কমিটি ডেকে পাঠাবে এবং "দিল্লি দাঙ্গায় তাদের ভূমিকা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবে।"
Delhi Legislative Assembly's Committee on Peace & Harmony has received complaints against officials of Facebook for their alleged deliberate & intentional inaction to contain hateful content in India with respect to scathing revelations made by a report in The Wall Street Journal pic.twitter.com/087DPhd6R2
— Raghav Chadha (@raghav_chadha) August 17, 2020
Updated On: 2020-08-18T17:12:55+05:30
Next Story