নির্মলা সীতারামন কি বলেছেন—আমি নিজে পেঁয়াজ খাই না, তাই আমার কিছু যায় আসে না?
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার উপভোক্তারা, এই প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য অসংবেদী বলে সমালোচিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের একটি ভিডিও ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি কাটা-কাটা ভাষায় বলছেন যে, তিনি তত পেঁয়াজ খান না এবং তাঁর পরিবারে পেঁয়াজ-রসুনের তত চল নেই। গত বুধবার অন্য এক সাংসদের সঙ্গে বাক্য-বিনিময়ের সময় সীতারামনকে লোকসভায় এ কথা বলতে শোনা যায়।
বেশ কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে অসংবেদী আখ্যা দিয়েছেন, বিশেষত বর্তমানে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং উপভোক্তা ও উত্পাদকদের সমূহ দুর্গতির প্রেক্ষিতে।
২০সেকেন্ডের ভাইরাল ক্লিপটিতে সীতারামনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "আমি তত পেঁয়াজ-রসুন খাই না। তাই চিন্তা করবেন না। আমি এমন একটা পরিবার থেকে এসেছি, যেখানে পেঁয়াজ-রসুন নিয়ে তত মাথা ঘামানো হয় না।"
এ সময় একজন সাংসদকে চিত্কার করে এও বলতে শোনা যায় যে বেশি পেঁয়াজ খেলে ক্যান্সার হয়। সীতারামন অবশ্য ওই সাংসদের বক্তব্য অগ্রাহ্য করেন, বরং তাঁকে এনসিপি-র সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের নাম করতে শোনা যায়, আর তারপরেই ভিডিওটি থেমে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌরব পান্ধী সরকারের সমালোচনা করে টুইট করেছেন, "সারা দেশে পেঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁযেছে, গরিব ও মধ্যবিত্তদের খাবারের থালায় টান পড়েছে, আর অর্থমন্ত্রী বলছেন, তিনি পেঁয়াজ খান না, তাই এতে তার কিছু যায় আসে না। জন-বিরোধী এবং অসংবেদী সরকার!"
The Onion prices across the country is skyrocketing, basic meals of the poor & the middle class is affected and Finance Minister's response: "I don't eat onions, so it doesn't matter to me"
— Gaurav Pandhi (@GauravPandhi) December 4, 2019
Anti-people and insensitive Govt! pic.twitter.com/cGnffB4s9u
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিবিসি ইন্ডিয়ার ডিজিটাল সম্পাদক মিলিন্দ খান্ডেকর সীতারামনের বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করেই তার টুইটটি সাজিয়েছেন, "পেঁয়াজ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী—আমি খুব একটা পেঁয়াজ-টেয়াজ খাই না, তাই চিন্তা করবেন না। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, সেখানে পেঁয়াজ-রসুনের তত চল নেই।"
प्याज़ पर वित्त मंत्री जी
— Milind Khandekar (@milindkhandekar) December 4, 2019
"मैं इतना लहसन,प्याज़ नहीं खाती हूँ जी So Don't worry मैं ऐसे परिवार से आती हूँ जहाँ onion प्याज़ मतलब नहीं रखते "
pic.twitter.com/vDzS419vpG
নিউজ এক্স একটি প্রতিবেদন ছাপে, যার শিরোনাম, "অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি পেঁয়াজ খান না, তাই পেঁয়াজের দর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।"
প্রতিবেদনও শিরোনামের কথাটিই উল্লেখ করেছেন সীতারামনের বক্তব্য হিসেবে।
সংসদে সীতারামনের বক্তব্যের প্রেক্ষিত কী ছিল
দেশে পেঁয়াজের উত্পাদন হ্রাস পাওয়া নিয়ে সুপ্রিয়া সুলের একটি মন্তব্যের জবাবে সীতারামন ওই মন্তব্যটি করেন। তিনি সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই একজন সাংসদ চিত্কার করে জানতে চান, তিনি মিশরের পেঁয়াজ খেয়েছেন কিনা, যেহেতু সরকার ঘাটতি মেটাতে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে।
এই বিশেষ ও নির্দিষ্ট প্রশ্নটির জবাবেই সীতারামন মন্তব্য করেন যে, তিনি পেঁয়াজ তত খান না, ইত্যাদি। তাই তার বক্তব্যের প্রেক্ষিত থেকে বিচ্ছিন্ন করে মন্তব্যটি বিচার করলে যা মনে হয়, সীতারামন আদৌ সে ধরনের কথা কিন্তু বলেননি। তিনি কখনওই বলেননি যে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে উপভোক্তা ও চাষিদের যতই কষ্ট হোক, তাতে তার কিছু যায় আসে না, কেননা তিনি নিজে পেঁয়াজ বিশেষ খান না। ঠিক যে ভাবে সংসদের বাইরে তার মন্তব্যটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হচ্ছে।
সংসদে এই মন্তব্যটির পরেই সীতারামন সুপ্রিয়া সুলের প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেন, যাতে তিনি জানান সরকার এ ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ করছে-- যেমন রফতানি নিষিদ্ধ করা, মজুত করার সীমা বেঁধে দেওয়া, পেঁয়াজ আমদানি করা এবং উদ্বৃত্ত এলাকা থেকে ঘাটতির এলাকায় পেঁয়াজের সরবরাহ করা। সেই সঙ্গে উত্পাদনের ঘাটতিকেও তিনি সমস্যার কারণ হিসাবে শনাক্ত করেন।
৭.৪৯.২৪ সময় থেকে এটা শোনা যাবে।ইতিমধ্যে সীতারামন একটি টুইট মারফত তার জবাবও দিয়েছেন, যাতে তিনি লোকসভায় তার বিবৃতির ৪ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপও আপলোড করেছেন।
Here is the full video of Smt @nsitharaman explaining in detail the steps taken by the govt. to control onion prices and provide relief to the common man. A part of this video clip is being quoted out of context and is misleading. pic.twitter.com/56MLd1gKpU
— NSitharamanOffice (@nsitharamanoffc) December 5, 2019
সংসদীয় আলোচনার প্রতিলিপি:
সুপ্রিয়া সুলে: আপনি যা কিছু বলছেন, আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু মুদ্রা ঋণ নিয়ে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। তাই আপনাকে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা—আমাদের কাছে যা পরিসংখ্যান রয়েছে, তা প্রায় ৫৩ শতাংশ। আপনাদের শুরু করা ঋণের এই ৫৩ শতাংশ এনপিএ-তে গেছে, যার পরিমাণ ৪ লক্ষ কোটি... (বাধা দান)...মহিলা সক্ষম আছেন, কাউকে আমার সমর্থনে আসতে হবে না... আর একটা ছোট ব্যাপার... যেহেতু আপনি পেঁয়াজের কথাও তুলেছেন...আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন আছে। আমি আপনার প্রশংসা করছি যে, আপনি মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার ব্যবস্থা করেছেন। আমি মহারাষ্ট্রের মেয়ে, যেখানে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত ও সংগৃহীত হয়। প্রশ্ন হলো ১) হঠাৎ করে পেঁয়াজের উত্পাদন কমে গেল কেন? ২) ভারতী পাওয়ার, যিনি এই সভায় উপস্থিত রয়েছেন এবং নাসিকের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনিও আমার সঙ্গে একমত হবেন...পেঁয়াজের দাম যখন একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল...আপনি নিজেও যে সময়টার কথা বলেছেন.. তখন চাষিরা সঠিক দাম পায়নি, কেননা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পর্যাপ্ত ছিল না। আর তাই পেঁয়াজের উৎপাদনও কমে যায়। মিশরের পেঁয়াজ খেতে আমার মোটেই ভাল লাগছে না। আর কেনই বা ভারতকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে? আমরা তো কত কিছু রফতানি করি....চাল থেকে দুধ থেকে কত জিনিস... আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদক, গমের উৎপদনেও আমরা পিছিয়ে নেই। তাহলে এরকম অবস্থা কেন হচ্ছে? এটা কি পিছিয়ে পড়া নয়? আপনি যদি অনুগ্রহ করে মুদ্রা ঋণের ব্যাপারটা স্পষ্ট করেন, আর এনপিএ-র বিষয়টাও। এবং পেঁয়াজের বিষয়টাও। পেঁয়াজ চাষি কিন্তু ক্ষুদ্র চাষি, তার ২০-৩০ একরের জোত নেই, ছোট-ছোট জমিতে চাষ করে, যে জন্য তার জল দরকার। তার সত্যিই সুরক্ষার প্রয়োজন। এটাই আমার অনুরোধ...
নির্মলা সীতারামন: আমি আপনার সঙ্গে একমত। সত্যি বলতে কি...
মাঝপথে এক সাংসদের চিৎকার: আপনি মিশরের পেঁয়াজ খাচ্ছেন?
নির্মলা সীতারামন: আমি অত পেঁয়াজ-রসুন খাই না। সুতরাং চিন্তা করবেন না, আমি এমন এক পরিবারের মেয়ে যেখানে পেঁয়াজ-রসুনের তত চল নেই।
আর এক সাংসদের চিৎকার: পেঁয়াজ বেশি খেলে ক্যান্সার হয়...
নির্মলা সীতারামন: না, মাননীয় সদস্যা সুপ্রিয়াজি। আমি বলতে চাই, ২০১৪ সাল থেকেই আমি বেশ কয়েকটি মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য থেকেছি, যারা বাজারে পেঁয়াজের দামের ওঠাপড়ার উপর নজরদারি চালিয়েছেন। যখন উদ্বৃত্ত ফলন হয়েছে, তখনও যাতে উত্পাদকরা রফতানি করতে পারেন, সে জন্য তাদের সহায়তা দিয়েছি। রাতারাতি ৫ থেকে ৭ শতাংশ সহায়তা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাঁদের রফতানিতে সাহায্য করতে। কিন্তু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর কাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে....