একটা ভুয়ো ছবি গোধরা-র ২০০২ সালের জ্বলন্ত ট্রেনের ছবি হিসাবে ভাইরাল হয়েছে
এটি ২০০২ সালে গোধরার ট্রেন পোড়ানোর ঘটনার ছবিই নয় l ছবিটি আসলে ২০১০ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর একটি বিস্ফোরণের ঘটনার, যাতে ২৩০ জন নিহত হয়েছিল
পুড়ে যাওয়া এক সারি মৃতদেহকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের একটি বীভত্স ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখা হচ্ছে—“যারা কংগ্রেস দলকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছে, তারা যেন এটা দেখে সতর্ক হয়” । দাবি করা হচ্ছে, ২০০২ সালে গোধরায় ট্রেনের কামরার ভিতর হিন্দুদের পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করে মুসলমানরা যারা কংগ্রেস সরকারের সমর্থক ।
ক্যাপশনে হিন্দিতে লেখা হয়েছে, “কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আগে হিন্দু ভাইরা যেন গোধরার ঘটনাটা স্মরণ করেন, যেখানে কংগ্রেস সরকারের মুসলিমরা হিন্দু যাত্রীতে বোঝাই ট্রেনের দুই কামরায় আগুন লাগিয়ে দেয় । যদি দেশের হিন্দুদের প্রতি আপনাদের বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা থাকে, তাহলে দেশকে কংগ্রেস-মুক্ত করুন ।”
ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল একই দাবি সহ। "2002 সালে 27 শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটে কংগ্রেসের মুসলিমপন্থী চলন্ত S5, S6 সাবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে দুটি অযোধ্যা হিন্দু পূর্ণার্থীদের ভরা বগীতে প্রথমে পাথর দিয়ে বাহিরে থেকে ঢিল ছোড়ে পরে পেট্রল ঢেলে দরজা বাহিরে থেকে তার দিয়ে বেধে বন্ধ করে দিয়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে। কারন এক জন মুসলিম ফেরিওআলা হিন্দু অযোধ্যা পূর্ণাথীদের S5, S6 বগীতে ঢুকতে বারন করার কিছুখন পরেই এই এই ঘটনা টি ঘটে। এটাই কংগ্রেসের আসল চিত্র। যদি হিন্দুদের প্রতি দয়া থাকে তাহলে কংগ্রেস মুক্ত ভারত গরুন ।"
এখানে পোস্ট টি দেখুন এবং আর্কাইভ এখানে।
বুম আগেও এই লেখা ও সঙ্গের ছবির একটি স্ক্রিনশট পেয়ে বুঝতে পারে, এটি হোয়াট্স্যাপে ভাইরাল হয়েছে । হোয়াট্স্যাপের স্ক্রিনশটটিতে বিজেপিভাজপা নামে একটি গোষ্ঠীর নাম রয়েছে, যারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওই লেখা ও ছবি ভাইরাল করেছে ।
বুম ফেসবুকে খোঁজ নিয়ে দেখেছে, ওই ছবি ও বিবরণী গোধরা কাণ্ডের আরও দুটি ছবি সহ ভাইরাল হয়েছে ।
সেই পোস্টটির আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইট স্নোপস ২০১৬ সালেই পোস্টটিকে ভুয়ো বলে নস্যাত্ করে লিখেছিল, এই ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নানা জনে এটির ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আসছে ।
ছবিটির নিহিত সত্য
এই ছবিটি ২০১০ সালে আফ্রিকার দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত একটি বিস্ফোরণের ছবি, যাতে ২৩০ জন নিহত হয় । সে সময়েই সংবাদসংস্থা রয়টার রিপোর্ট করেছিল যে, একটি জ্বালানি-বোঝাই ট্যাংকার উল্টে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে, যা থেকে সৃষ্টি হওয়া এক বিরাট আগুনের গোলা আশপাশের ঘরবাড়ি ও সিনেমা হলকে ধ্বংস করে দেয়, যেখানে তখন বহু মানুষ বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখছিলেন ।
রিপোর্টে আরও জানানো হয় যে, কিছু লোক ট্যাংকারের চুঁইয়ে পড়া তেল চুরি করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়, তবে অধিকাংশই বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখার সময় ঘরের ভিতর কিংবা সিনেমা হলে বসেই অগ্নিদগ্ধ হন ।
পোস্টটিতে গোধরা কাণ্ডের সময় কংগ্রেস দল ক্ষমতায় ছিল বলে যে দাবি করা হয়েছে, সেটিও ভুয়ো । বরং ২০০২ সালে কেন্দ্রে এবং গুজরাটেও ভারতীয় জনতা পার্টিরই সরকার ছিল । বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে সময় ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আর কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ক্ষমতাসীন ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী ।