ভুয়ো ‘লোকনীতি’ সমীক্ষায় অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশমের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে
এই ভুয়ো সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, গবেষণা সংস্থা ‘লোকনীতি সিএসডিএস’-এর সমীক্ষায় নাকি অন্ধ্রে তেলুগু দেশমের ব্যাপক জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যা চন্দ্রবাবু নাইডুর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির ফলে সম্ভব হতে চলেছে
২০১৯-এর লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা একটি প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা লোকনীতি সংস্থার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে । এটি ভুয়ো । লোকনীতি সিএসডিএস একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, এ ধরনের কোনও সমীক্ষা তারা করেনি ।
অন্ধ্রপ্রদেশের দুটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এই ভুয়ো সমীক্ষাটি বিশ্বাস করে বসে আছে । তা ছাড়া, এটি অনেক ফেসবুক পেজও শেয়ার করেছে ।
এই ভুয়ো সমীক্ষা লোকনীতি এবং সিএসডিএস-এর লোগো ব্যবহার করে বলেছে, অন্ধ্রে আসন্ন সমান্তরাল বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে তেলুগু দেশম বিপুল ব্যবধানে জয় পেতে চলেছে । বিধানসভায় এই দল ১২৬ থেকে ১৩৫টি আসন পেতে চলেছে আর লোকসভায় ১৮ থেকে ২২টি আসন । সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে, ওয়াই এস আর জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াই এস আর কংগ্রেস তেলুগু দেশমের কাছে ভোটে পর্যুদস্ত হতে চলেছে, এই দল বিধানসভায় ৪৫ থেকে ৫০টি এবং লোকসভায় ৩ থেকে ৫টির বেশি আসন পাবে না ।
সিএসডিএস-এর পুরো কথাটি হল— সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন ডেভেলপিং সোসাইটিজ ।
এই ভুয়ো সমীক্ষায় তেলুগু দেশমের বিপুল সাফল্যের চারটি কারণও উল্লেখ করা হয়েছেঃ নেতৃত্বের উপর আস্থা, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি, উন্নয়ন এবং দুর্বল বিরোধী পক্ষ । প্রথম তিনটি কারণের ব্যাখ্যায় চন্দ্রবাবু নাইডুর শুরু করা কল্যাণমূলক কর্মসূচি, রাজধানী অমরাবতীর নির্মাণ, নদীগুলির সংযুক্তিকরণ এবং রাজ্যে বিনিয়োগ আমন্ত্রণ করার মতো উন্নয়নমূলক কাজের উল্লেখ করা হয়েছে । বিরোধীদের সম্পর্কে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জগন্মোহন রেড্ডির দলের জনসাধারণের মধ্যে কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই । তা ছাড়া, জগন্মোহনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে এবং পবন কল্যাণও এখনও রাজনীতিক হিসাবে তেমন দাগ কাটতে পারেননি ।
সংবাদমাধ্যম ভুয়ো সমীক্ষাই ছাপছে
সংবাদসংস্থা এবিএন অন্ধ্রজ্যোতি তার সংবাদ চ্যানেল এবিএন তেলুগু এবং সংবাদপত্র অন্ধ্রজ্যোতি ভুয়ো সমীক্ষাটিই হুবহু, গ্রাফিকস সহ প্রকাশ করেছে ।
৩১ মার্চ ওই চ্যানেল খবরটি আপলোড করে বলে লোকনীতি-সিএসডিএস-এর সমীক্ষায় অন্ধ্রের নির্বাচনে তেলুগু দেশমের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে । এবং চ্যানেলের সংবাদ-সঞ্চালক একেবারে ভোটের আগাম ফলাফলও অঙ্ক দিয়ে কষে দেখিয়ে দিয়েছেন । একই দিনে তাদের সংবাদপত্রেও সংস্থাটি ওই ভুয়ো সমীক্ষা ছেপে দিয়েছে—
ভুয়ো সমীক্ষার ফলাফল ফেসবুকেও শেয়ার হচ্ছে এই ক্যাপশন দিয়ে—“টিডিপি সমর্থকদের জন্য সুসংবাদ! সিএসডিএস-লোকনীতি সমীক্ষা!” সিএসডিএস-টিডিপি লিখে খোঁজ লাগালে সোশাল মিডিয়ায় অনেক পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলি ওই ভুয়ো সমীক্ষা উদ্ধৃত করেছে ।
তথ্য যাচাই
সিএসডিএস-লোকনীতি আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, সমীক্ষাটি ভুয়ো এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে তারা এ ধরনের কোনও সমীক্ষাই করেনি ।
বুম, লোকনীতির জাতীয় সমন্বযকারী সন্দীপ শাস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “সমীক্ষাটি ভুয়ো । এটা খুবই স্পষ্ট যে সমীক্ষাটি পুরোপুরি বানানো এবং এমন একজন সেটা করেছে, যে নমুনা বাছাই কিংবা সমীক্ষার কিছুই বোঝে না । যে সমীক্ষা বিজেপি-কংগ্রেসের জন্য শূন্য শতাংশ ধার্য করে, সেটা কোনও তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়নি । তথ্য এখানে বানানো হয়েছে ।” শাস্ত্রী আরও বলেন, লোকনীতির করা সমীক্ষার সঙ্গে যে কোনও ভুয়ো সমীক্ষার তুলনা করলেই সেটা স্পষ্ট হবে । “আমরা বিশদে জনসংখ্যা ও তা থেকে সংগৃহীত নমুনার আকার-আয়তন ব্যাখ্যা করি, আমদার সমীক্ষা রচনার ভাষাও সম্পূর্ণ অন্যরকম ।”
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে লোকনীতি-সিএসডিএস জানিয়েছে—“কিছু সোশাল মিডিয়া এবং সংবাদপত্র অন্ধ্রপ্রদেশের নির্বাচনের সমীক্ষা আমাদের নামে চালাচ্ছে, যাতে কে কত আসন পাবে এবং কে কত ভোট পাবে, সেই হিসাবও দেওয়া হচ্ছে । লোকনীতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চায় যে, এরকম কোনও সমীক্ষা আমরা করিনি, এ ধরনের কোনও সমীক্ষার সঙ্গে আমরা যুক্তও নই এবং আমাদের নাম করে প্রকাশ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সমীক্ষার যে সব ফলাফল চাউর করা হচ্ছে, সে সবই ভুয়ো এবং অভিসন্ধিমূলক ।”
পুরো বিবৃতিটি নীচে পড়ুনঃ