এনআরএস মেডিকেল কলেজে আক্রান্ত পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ভুয়ো পোস্ট
অস্ত্রপ্রচারের পর পরিবহ-র শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এখন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া টুইটে দাবি করা হয়েছে, নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে আক্রান্ত ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে।
১২ জুন ৫:০৩ সময়ে হিন্দিতে পোস্ট করা এরকম একটি টুইটে লেখা হয়েছে, ''কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে ৮৫ বছর বয়সী মহম্মদ শাহিদকে খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় সোমবার সকালে ভর্তি করা হয়। ওনার বমি, পেটে ব্যাথা ও পায়খানা হচ্ছিল। চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যায়। তার পরে ডাক্তার মুখার্জী ও যশ টেকবানী কে পেটায়। ডঃ মুখার্জীর মৃত্যু ও যশ কোমায় আচ্ছন্ন। ও বিকাশ ছুটছে।'' টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে দাবি করা এরকম আরেকটি ভুয়ো টুইট দেওয়া হল। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
যা ঘটেছিল
সোমবার চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে ওই মেডিকেল কলেজে ৭৫ বয়সী রোগী মহম্মদ সাইদের মৃত্যু হলে ৫:৪৫ নাগাদ কয়েকজন ইন্টার্নের সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকজনের বচসা শুরু হয়। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তারের বয়ান অনুযায়ী, ১০:৪৫ নাগাদ ট্রাক ভর্তি ২০০ জনের একদল বহিরাগত ডাক্তারদের ওপর চড়াও হয়। সেসময় পাথরের আঘাতে মাথার খুলিতে গুরুতর চোট পান জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায় ও যশ টেকওয়ানি।
খুলিতে টোল পরে গুরুতর আঘাত পাওয়া পরিবহকে মল্লিকবাজারস্থিত ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অস্ত্রপ্রচার হয়। অন্যদিকে যশ ভর্তি রয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে।
অস্ত্রপ্রচারের পর পরিবহ-র শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এখন। সংক্রমনের আশঙ্কা থাকায় বিশেষ তত্বাবধানে রাখা হয়েছে তাকে। খিঁচুনি রুখতে দেওয়া হয়েছে জীবন দায়ী ওষুধ। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হল।
বুম একটি ভিডিও সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে সেখানে পরিবহ'কে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
যা চলেছে
এদিকে রাজ্যের ইন্টার্নদের কর্মবিরতির জেরে চিকিৎসাব্যবাস্থা সঙ্কটে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ, পরিবহকে দেখতে যাওয়া, ডাক্তারদের সঙ্গে ঘটে চলা আক্রমন রুখতে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস ও এই ঘটনা নিয়ে তার বিবৃতি প্রভৃতি চার দফা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেয়।
সারা রাজ্যে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে কর্মবিরতির জেরে জরুরি ও আউটডোর চিকিৎসা পরিসেবা কার্যত বন্ধ ছিল গত তিনদিন। তাদের দাবি বিঘ্নিত হয় জরুরি চিকিৎসা পরিসেবা। দুর-দূরান্তের মুমূর্ষ রোগীরা জরুরি চিকিৎসা পরিসেবা না পেয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
ভর্তি রুগীদের পরিসেবা নিয়েও আতঙ্কিত রুগীর আত্মীয়রা। বিক্ষোভের জেরে শুরু হয় ভাঙচুর। স্থেথোস্কোপের বদলে কোনও কোনও মেডিকেল কলেজে ডাক্তারদের হাতে উঠেছে লাঠি। শঙ্খ ঘোষ ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এবং আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে লেখেন খোলা চিঠি; সব পক্ষকে আলোচনায় বসে প্রশাসনকে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে সঙ্কট নিরসনে তৎপরতার আবেদন জানান।
শুক্রবার এ পর্যন্ত যা ঘটেছে
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী দুপরে এসএসকেএম হাসপাতালে পরিদর্শনে যান। তিনি প্রতিবাদরত ডাক্তারদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। চিকিৎসায় চারঘন্টার মধ্যে যোগ না দিলে আইনি পদক্ষেপ নেবার কথা বলেন। তদন্ত কমিটি করে রোগী গাফিলতির ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এসএসকেএম-এ বলা বক্তব্য "এরা জুনিয়র না বহিরগত" নিয়ে এনআরএসের জেনারেল বডি (জিবি)-র বৈঠক করার পর আন্দোলনকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে নিঃশর্ত ক্ষমার দাবি তোলে। বিকেলে আন্দলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে দেখা করেন।
এনআরএস কান্ডের জেরে রাজ্যজুড়ে গণ ইস্তফার প্রস্তুতি নিয়েছে ডাক্তাররা। নিরাপত্তার দাবিতে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন কামারহাটি সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজের সাতজন চিকিৎসক। তারা রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ গুলিতেও ডাক্তারদের ইস্তফাপত্র জমা দেওযার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন। দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের জন্য পরিসেবা অব্যহত রাখার আবেদন জানান। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্য বর্ধন রুগীর পরিজনদের সংযত হওয়ার আবেদন জানান। চিকিৎসকদের পরিসেবা সচল করতে আবেদন জানান। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেন।
ইতিমধ্যে তৃণমূল সাংসদ দেব এবং পার্থ চট্যোপাধ্যায় ডাক্তারদের কাছে আবেদন করেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্যে।
এখনও পর্যন্ত এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি। গতকাল সন্ধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। ইস্তফা দিয়েছেন সহকারী অধ্যক্ষ সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ও।
আজ আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, মীরাতুন নাহার, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি মিশ্র সহ বুদ্ধিজীবিদের একাংশ দেখা করেন।
স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অচলাবস্থা কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসার আবেদন জানানোর পাশাপাশি, আন্দোলনকারীদের পরিসেবা সচল করার অনুরোধ জানানো হয়।
আন্দোলনের আঁচ পৌছেছে ভিন রাজ্যেও। দিল্লীর এইমস, উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির অধীন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সায়েন্সেস (আইএমএস), ছত্তীসগঢ়ের রাইপুরে বি আর আম্বেডকর হাসাপাতাল প্রভৃতি হাসপাতালে চিকিৎসকরা পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কার্যত অচল জরুরি ও আউটডোর পরিসেবা। ক্যাম্পাসের ভিতরেই মাথায় প্রতীকী ব্যান্ডেজ বেঁধে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অনেক চিকিৎসক।
মহারাষ্ট্রের হাসপাতালগুলির আউটডোর-সহ অধিকাংশ পরিষেবা কার্যত বন্ধ। এক দিনের কর্মবিরতি পালন করছে সেখানের কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠন। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে বলে সংগঠনের দাবি।
অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া এবং চিকিৎসকরাও এনআরএসের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এখানে পরিষেবায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
এসএসকেএম ও রাজ্যের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের জরুরি ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে আংশিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়েছে।