এক মুসলমান ধর্মগুরুর উগ্র সাম্প্রদায়িক ভাষণকে সাম্প্রতিক বলে চালানো হচ্ছে
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯ সালের, গণপ্রহারে তবরেজ আনসারি মৃত্যুর পর ওই ধর্মগুরু ভাষণটি দেন।
তবরেজ আনসারির হত্যার পর, একজন মুসলমান ধর্মগুরু নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায় এমন একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণটিকে সাম্প্রতিক বলে চালানো হচ্ছে। শাহিন বাগে এক বন্দুকবাজ আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানোর জন্য শূন্যে গুলি ছুঁড়লে, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনার পর থেকেই, সেই ধর্মগুরুর ভাষণের ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ২০১৯-এর ভিডিওটি শেয়ার করেন। এবং ওই ধর্মগুরুর ভাষণের অংশ উদ্ধৃত করে ক্যাপশনে লেখেন, "ওরা বাঁচতে চায়, আর আমাদের সন্তানেরা মরতে প্রস্তুত। বিপজ্জনক খুবই বিপজ্জনক...দেরি হয়ে যাওয়ার আগে জেগে উঠুন!"
"वो जीना चाहते है और हमारे बच्चे मरने को तैयार है"
— Sambit Patra (@sambitswaraj) February 3, 2020
Dangerous very Dangerous..
Wake Up before it's too late!! pic.twitter.com/g8bstexmnW
গীতিকা স্বামী ভিডিওটি পোস্ট করেন। সেই সঙ্গে দাবি করা হয়, "দিল্লির মৌলানার খোলা হুমকি। হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ উস্কে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কেন মনে করছি যে, ওই ধরনের জ্বালাময়ী ভাষণ অল্পবয়সীদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। #জামিয়ায় গুলি চালানো #হিন্দু নেতা লক্ষবস্তু #সোমবারের ভাবনা #জামিয়ায় গুলি"
Open threat by Delhi Maulana instigating violence and communal hatred against Hindus,
— Geetika Swami (@SwamiGeetika) February 3, 2020
What makes us think that these fiery speeches have no effect on vulnerable young minds? #JamiaShooting #HinduLeadersOnTarget #MondayThoughts #JamiaFiring pic.twitter.com/6dEWvEAKjk
এর পরই, 'স্বরাজ্য'-এর ভাষ্যকার শেফালি বৈদ্য স্বামীর টুইটটি উদ্ধৃত করে নিজে টুইট করেন। লেখেন, "এ নিয়ে সমালোচনা কই?"
Where is the outrage on this? pic.twitter.com/F5uMVR4wjR
— Shefali Vaidya. (@ShefVaidya) February 3, 2020
দিল্লিতে ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। তারই মধ্যে ওই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বন্দুক প্রদর্শনের চারটি ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে। তার মধ্যে তিনটিতে গুলি ছোঁড়া হয়েছে।
কুড়ি বছরেরও কম বয়সী এক যুবক জামিয়ায় গুলি ছোঁড়ার দু'দিন পর, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, অন্য এক ব্যক্তি গুলি ছোড়ে শাহিন বাগকে লক্ষ করে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শাহিন বাগের বিক্ষোভ মঞ্চ। গুলি চালানোর সময় বন্দুকবাজ চিৎকার করে বলে, "আমাদের দেশে কেবল হিন্দুদের আধিপত্য থাকবে"। এখানে ও এখানে পড়ুন। ৮ জানুয়ারি ২০২০ তে বিধানসভা নির্বাচন হবে দিল্লিতে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম বেছে নিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। দেখা যায়, ভিডিওটি জুন ২০১৯-এ ইউটিউবে আপলোড করা হয়।
ভিডিওগুলি এখানে ও এখানে দেখা যাবে। আমার ভিডিওটির একটা বড় সংস্করণও পাই। তাতে উলেমা-ই-হিন্দের দেহরাদুন জেলা সভাপতি মুফতি রইস, ১৯ জুন ২০১৯ গণপ্রহারে তাব্রিজ আনসারির মৃত্যুর পর, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
আমরা বড় ভিডিওটি শুনি। তার অংশ বিশেষ দেওয়া হল নীচে।
সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে একজন রিপোর্টারের প্রশ্নের উত্তরে, রইস বলেন: "তবরেজের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি উঠে এসেছে। মুসলমান বাচ্চারা তাদের মত প্রকাশ করেছে। অনেক আগেই তা করা উচিৎ ছিল... এটা একটা স্ফুলিঙ্গ যা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে। দিল্লিকে নাড়িয়ে দেবে। তার কারণ, গণপিটুনির ঘটনা একটা বা দু'টো নয়… শ'য়ে শ'য়ে ঘটেছে। এটা একটা চক্রান্ত। গেরুয়া শিবিরের চক্রান্ত। এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়… চক্রান্তকারীরা জেনে রেখো, মুসলমানরা জেগেছে।"
উনি আরও বলেন, "অত্যাচারের বিরুদ্ধে...এই গণপিটুনির…মুসলমানদের ছেলেপিলে আছে। মুসলমানরাও শক্তিশালী। আমাদের অস্ত্র আছে এবং আমরা তা ব্যবহার করতে জানি। কিন্তু মুসলমানরা শান্তিপ্রিয়, তারা দেশে উন্নয়ন চায়…আমরা হিন্দু-মুসলমান ভ্রাতৃত্ব কায়েম করতে চাই…কিন্তু আমরাও যদি একই কাজ করি, তাহলে এদেশে আমরা ওদের জীবন কঠিন করে তুলব। ওরা আমাদের ওপর যে অত্যাচার করছে তার বিরুদ্ধে আমরা যদি আমাদের সন্তানদের উস্কে দিই, তাহলে ওরা তাদের চেয়েও শক্তিশালী প্রমাণিত হবে। আমরা হলাম সেই ব্যক্তির বংশধর যে কুব্বাত আল সাখরায় দাঁড়িয়ে ইহুদিদের বলে ছিলেন, তোমাদের মধ্যে দশজন প্রাণে বাঁচতে চায়, আর আমাদের মধ্যে তারা প্রাণ দিতে প্রস্তুত…"
ভিডিওটির ভূমিকা থেকে কি-ওয়ার্ড নিয়ে সার্চ করলে, ওই ঘটনা সংক্রান্ত কয়েকটি রিপোর্ট উঠে আসে।
হিন্দি দৈনিক 'জাগরণ'-এর রিপোর্টে বলা হয়, "গণপ্রহারে তবরেজ আনসারির মৃত্যুর প্রতিবাদে, ২৭ জুন [২০১৯] মুসলিম সেবা সংগঠন কালেক্টরেটে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। মুসলমান সম্প্রদায় থেকে বিরাট সংখ্যক মানুষ প্রতিবাদে যোগ দেন।"
পুলিশের বক্তব্য উদ্ধৃত করে রিপোর্টে আরও বলা হয়, "আজাদ কলোনির বাসিন্দা মুফতি রইস কোর্ট কম্পাউন্ডের একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তার উত্তেজক ভাষণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করে। ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর, অনেক সংগঠন কেস করার কথা ভাবে।"
'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র খবর অনুযায়ী, ওই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ(১)(বি) ও ৫০৫-২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।