দেশছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রাজবংশীদের: ভাইরাল হল ভুয়ো সংবাদপত্রের শিরোনাম
২২ নভেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ সংবাদপত্রের প্রথম পাতার মূল শিরোনাম ও ছবি বদল করে তৈরি করা হয়েছে ওই ভুয়ো খবর।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি বাংলা সংবাদপত্রের ভুয়ো ছবিতে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষজন নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা করছেন। ভাইরাল হওয়া ওই ছবিটিতে উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রথম পাতার ভুয়ো শিরোনামে লেখা হয়েছে, ''দেশছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রাজবংশীদের।'' শিরোনামের নীচে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি দেওয়া হয়েছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে চলা এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করে।
ন্যাশানাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জি হল ভারতীয় নাগরিকদের নথি। ১৯৫১ সালে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের মধ্যে কেবলমাত্র অসম জেলায় এটি সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যরাত পর্যন্ত যাদের অসম রাজ্যে ভোটার কার্ড আছে কিংবা যারা ওই সময়ের মধ্যে ভারতের অন্য রাজ্য থেকে ওই রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন তাদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের অন্য রাজ্যে আগে বসবাসের স্থায়ী প্রমানপত্র পেশ করতে হবে। বিস্তরিত পড়া যাবে এখানে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ অধিবাসীর নাম ওই তালিকায় বাদ পড়েছে।
রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিগত সপ্তাহে চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বলেছেন, সারা দেশজুড়ে এনআরসি চালু করা হবে। প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত ইসলাম ধর্ম ব্যাতিরেকে অন্যান্য ধর্মের শরনার্থীদের নগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গেই ভুয়ো খবর ছড়াতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার পরে কচ রাজবংশী জনজাতির মানুষজন বিভিন্ন রাজ্যে ও দেশে ছড়িয়ে পড়েন। তাই এনআরসির নথি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে রাজবংশীদের। কচ রাজবংশী ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু ভাষার জনজাতি। প্রধানত এরাজ্যের উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, মালাদা, মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রধানত রাজবংশী মানুষের বাস। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষ রয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, অসম, মেঘালয় রাজ্যেও রয়েছেন এই ভাষাভাষীর মানুষ। বিস্তারিত জানুন এখানে।
বুম যাচাই করে দেখেছে ২২ নভেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ সংবাদপত্রের প্রথম পাতার মূল শিরোনাম ও ছবি বদল করে তৈরি করা হয়েছে ওই ভুয়ো খবর।
মূল সংবাদপত্রটিতে শিরোনাম লেখা হয়েছিল, "রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বলতে দপ্তর খুলুন।" আর যে জায়গায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ওই জায়গায় ছিল রাজ্যপাল জগদীপ ধানখড়ের প্রতঃভ্রমন করার ছবি।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিষয় নিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ন্ত্রিত রাজ্য মন্ত্রীসভার বাদানুবাদ হয়েই চলেছে। সে প্রসঙ্গেই রাজ্যপাল টুইট করেন।
.@MamataOfficial.@Sujan_Speak. Ministers one after the other have orchestrated unpalatable outbursts in public domain about the Governor. I doubtlessly take all these have sanction of the the HCM and this is worrisome for me and others who believe in Democracy and Constitution.
— Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 21, 2019
.@MamataOfficial.@SomenMitraINC. @derekobrienmp.@Sujan_Speak. Relations between HCM and Gov is more in statesmanship nature. Pained at its transgression in public domain on two distinct occasions by HCM with no follow up communication. Constitution Day is bound to stir +ly.
— Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 21, 2019
এই ব্যাপার নিয়েই প্রকাশিত হয়েছিল প্রতিবেদনটি। উত্তরবঙ্গ সংবাদের শিলিগুড়ি সংস্করণের মূল সংবাদপত্রটির পিডিএফ সংস্করণ দেখা যাবে এখানে।
রাজ্যপালের সংবিধানিক পদ ও তার এক্তিয়ার নিয়ে রাজ্যসভায় সরব হন সুখেন্দু শেখর রায়। তার আগের দিন সর্বদলীয় বৈঠকে অমিত শাহের কাছে রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবসেও মুখ্যমন্ত্রী ও রজ্যপালকে তাদের বক্তব্যের মধ্যে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায়।