মিথ্যে: চিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ২০,০০০ রুগীকে মারতে কোর্টের অনুমতি চেয়েছে
ভাইরাল লেখাটির উৎস এবি-টিসি.কম নামের এক ওয়েবসাইট যার গুজব এবং ভুয়ো খবর প্রকাশ করার ইতিহাস আছে।
একটি রিপোর্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০,০০০ ব্যক্তিকে মেরে ফেলার অনুমতি চেয়ে কোর্টের কাছে আবেদন করেছে চিন। খবরটির উৎস এমন একটি ওয়েবসাইট যেটি মিথ্যে খবর ছাপার জন্য কুখ্যাত।
খবরটি প্রকাশ করেছে এবি-টিসি নামের এক ওয়েবসাইট। 'সিটি নিউজ' নামেও সেটি পরিচিত। খবরে দাবি করা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে, চিনের উচ্চতম আদালত শুক্রবার ওই ভাইরাসে আক্রান্ত ২০,০০০ রোগীকে মেরে ফেলার অনুমতি দিতে পারে।
ওয়েবসাইটটি কোনও চিনা সরকারি সূত্র উল্লেখ করেনি। অথচ দাবি করেছে যে, চিন একটি নথিতে বলেছে, "মুষ্টিমেয় কিছু আক্রান্ত রোগী যদি স্বাস্থ্য কর্মীদের ও ১০০ কোটি মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে আত্মত্যাগ না করেন, তাহলে চিন তার সব নাগরিকদের হারাবে"।
লেখাটির সত্যতা জানতে চেয়ে পাঠকরা লেখাটি বুমের হেল্পলাইনে পাঠান।
অন্যান্য সোশাল মিডিয়াতেও এই খবরটি ভাইরাল হয়েছে। (ক্লিক করিন এখানে)
শুক্রবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, খবরটি ইন্টারনেটে দ্রুত ছড়াতে থাকে। সন্দেহ করা হয় যে, চিন মৃতের আসল সংখ্যা জানাচ্ছে না।
কিন্তু এবি-টিসি'র দাবি সমর্থন করছে, তেমন একটিও নির্ভরযোগ্য সংবাদ ওয়েবসাইটে দেখতে পাইনি আমরা। তাই ওই ওয়েবসাইটটিই খবরটির উৎস বলে মনে করা হচ্ছে।
এবি-টিসি: শুরুটাই সন্দেহজনক
এবি-টিসি (সিটি নিউজ) কারা চালান, তার কোনও বিবরণ নেই ওয়েবসাইটটিতে। তাতে যে সব লেখা বেরয়, সেগুলির লেখকদের নামও থাকে না। লেখকদের কেবল 'স্থানীয় সংবাদদাতা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে হুইজ-এ অনুসন্ধান করে বুম। দেখা যায়, সেটি চিনের গুয়াংডঙে নথিভুক্ত হয় ২০১৯ সাালের জুন মাসে। অর্থাৎ, মাত্র সাত মাস আগে।
গুয়াংডঙে নথিভুক্ত হলেও, ওয়েবসাইটটির বিষয়বস্তু ইংরেজিতে লেখা হয়। তাছাড়া ওয়েবসাইটটি আমেরিকা কেন্দ্রিক এবং মার্কিন পাঠকদের কাছে পৌঁছনই সেটির লক্ষ্য।
ওয়েবসাইটটি যে সন্দেহজনক তার কিছু লক্ষণও চোখে পড়ে। যেমন, পাঠককে ক্লিক করতে প্ররোচিত করার মতো নানা লিঙ্ক দেওয়া আছে তাতে।
ওয়েবসাইটটি আগে কেউ যাচাই করে দেখেছে কিনা, তা জানতে আমরা কয়েকটি কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি ('এবি-টিসি.কম' এবং 'হোক্স' বা 'ফ্যাক্ট চেক')। তার ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যযাচাই ওয়েবসাইট 'স্নোপস' ও 'লিড স্টোরিজ'-এর রিপোর্ট সামনে আসে।
স্নোপস খবরটি খারিজ করে বলে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ওই রকম কোনও কেসের উল্লেখ নেই।
তথ্যযাচাই ওয়েবসাইট লিড স্টোরি এবি-টিসির মিথ্যে খবরের একটা তালিকাও প্রকাশ করে।
করোনাভাইরাস: মহামারি ও ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে লড়াই
সংক্রমণের কথা চিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রথম জানায় ডিসেম্বর ২০১৯-এ। চিনের দাবি যে, ভাইরাসটির উৎস উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার। তবে প্রকৃত উৎসস্থলটি কোথায় তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসকে আন্তর্জাতিক স্তরে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক বলে ঘোষণা করে।
বুম এই সংক্রান্ত নানা মিথ্যে খবর খারিজ করেছে। তার মধ্যে আছে এই ভাইরাসের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নানা পদ্ধতি, এই সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি, এই ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে ভুয়ো খবর এবং মিথ্যে খবরে চিনের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে জড়ানোর চেষ্টা। প্রতিবেদনগুলি দেখুন এখানে।