নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ড: না, এই ছবিটি নাবালক আসামীর ছবি নয়
ছবির লোকটি বিনয় শর্মা, যে নাবালক আসামী নয় এই ঘটনার একজন প্রাপ্তবয়স্ক ধর্ষক।
২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী বিনয় শর্মার একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় এই বলে ভাইরাল হয়েছে যে, এটি অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ধর্ষকের ছবি, যে পুলিশের সুরক্ষায় রয়েছে।
নীল রঙের জিন্স এবং শাদা টি-শার্ট পরা বিনয় শর্মার পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার এই ছবিটি ফেসবুক এবং টুইটারে ভাইরাল হয়েছে এই দাবি সহ যে, এটি অপ্রাপ্তবয়স্ক ধর্ষকটির ছবি, যাকে সে সময় সংবাদ-রিপোর্টে মহম্মদ আফরোজ ওরফে রাজু বলে শনাক্ত করা হয়েছিল।
ভাইরাল পোস্টে দেওয়া ধর্ষণকাণ্ডের বিবরণটি বেশ বিশদ। সেখানে লেখা হয়েছে,
"এই হচ্ছে মহম্মদ আফরোজ। সে সময় দিল্লির জঘন্যতম নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত ১৮ বছরের কমবয়সী কিশোর! দেশের আইন তাকে সে সময় বেকসুর খালাশ দেয়, যেহেতু সে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। নির্ভয়ায় জবানবন্দি ও তার বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী এ-ই ছিল ধর্ষণকাণ্ডে সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বর ব্যক্তি। নির্ভয়ার যৌনাঙ্গে এই ব্যক্তিই লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়। এখন সে নিয়মিত জিম-এ যায় এবং শরীরচর্চা করে। উপরের ছবিটি দেখলেই আপনারা সেটা বুঝতে পারবেন। আর দেশের পুলিশ একজন তারকার মতো তাকে সর্বক্ষণ সুরক্ষা দেয়। করদাতাদের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে একজন ধর্ষককে সুরক্ষা দিতে!"
পোস্টগুলি এমন সময় ভাইরাল হয়েছে, যখন অন্যতম ধর্ষণকারী অক্ষয় ঠাকুর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা করার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিনয় শর্মা রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে তার পাঠানো ক্ষমাভিক্ষার আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে এই যুক্তিতে যে, তার সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই আবেদনটি পাঠানো হয়েছে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট অন্য দুই ধর্ষণকারী মুকেশ সিং ও পবন গুপ্তার অনুরূপ আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
বুম ফোটোগ্রাফটি খোঁজ করে দেখেছে, বেশ কয়েকটি সংবাদ-রিপোর্টে এটি বিনয় শর্মার ছবি বলেই ছাপা হয়েছে। তা ছাড়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর ছবিটি কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তিন বছর সাজা ভোগ করার পরেও তারই নিরাপত্তার কথা ভেবে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ-ওয়েবসাইট বিনয় শর্মার ছবিটি ছেপেছিল তার মার্জনা ভিক্ষার আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার খবর প্রসঙ্গে l দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর মতে, শর্মার আইনজীবী এ পি সিং রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো ক্ষমার আর্জিটা প্রত্যাহার করে নেন। এই ইংরাজি দৈনিকের প্রতিবেদনে শর্মার ওই একই ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
দ্য হিন্দু পত্রিকার সাংবাদিক ওই প্রতিবেদনের যে স্ক্রিনশট নিয়েছেন, তাতেও বিনয় শর্মার ওই ছবিটিই রয়েছে, যা ভাইরাল পোস্টে দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির এক চলন্ত বাসের মধ্যে যে ৬ জন মিলে ২৩ বছরের তরুণী প্যারামেডিক্যাল কোর্সের পড়ুয়াকে গণধর্ষণ ও হত্যা করে, অপ্রাপ্তবয়স্ক বিনয় শর্মাও অপরাধীদের মধ্যে একজন। অপরাধের নৃশংসতা সারা দেশকে আলোড়িত করে তোলে এবং ধর্ষিত ও নিহত তরুণীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবি ওঠে।
অভিযুক্তরা সকলেই দোষী সাব্যস্ত হয় এবং ২০১৩ সালেই দিল্লির একটি আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে প্রধান অভিযুক্ত রামসিং জেল-হাজতেই মারা যায়। ইতিমধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীটি অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি মাথায় নিয়ে দিল্লিরই মজনু কা টিলা শেল্টার হোমে তিন বছর কাটিয়ে দেয়। এই লঘু দণ্ড অনেককেই ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং দেশজুড়ে প্রতিবাদও হতে থাকে। সেই প্রেক্ষিতেই অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিচারের আইনটি ২০১৫ সালে সংশোধিত হয়। ২০১৬ সালে হিন্দুস্তান টাইমস রিপোর্ট করে যে সে দক্ষিণ ভারতের এক স্থানে রাঁধুনির কাজ করছে। তার পর থেকে তার আর কোনও হদিশ নেই।
২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর দ্য হিন্দু রিপোর্ট করে যে, বাকি চারজন অপরাধীকেই (বিনয় শর্মা, পবন গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর ও মুকেশ সিং) দিল্লির তিহার জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আর তা থেকেই জল্পনা শুরু হয় যে, এবার বোধহয় ওদের ফাঁসি হতে চলেছে। কিন্তু বুম এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি।