ফ্যাক্ট চেক
না, ভাইরাল ক্লিপের এই ব্যক্তি হিমালয় ড্রাগ কোম্পানির মালিক নন
বুম দেখে নাকি আহমেদ নাদভি নামে একটি ফেসবুক পেজ ওই ভাইরাল ভিডিওটির উৎস। ওই নামে একাধিক পেজ ভিডিওটি শেয়ার করেছে।
বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, প্রশাসনিক পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও অন্যান্য পেশাদারি ক্ষেত্রের ওপর দখল কায়েম করার জন্য মুসলমান সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিকে সওয়াল করতে দেখা যাচ্ছে একটি ভিডিওতে। সেই সঙ্গে ক্যাপশনে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, ওই ব্যক্তি হলেন হিমালয় ড্রাগ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।
হিমালয় ড্রাগ কম্পানি সম্পর্কে আগে একবার তথ্য যাচাই করার সময়, বুম দেখে যে, সেটির প্রতিষ্ঠাতা মোহম্মদ মানাল ১৯৮৬ সালে মারা যান। আমরা দেখি, বর্তমান ভিডিওটির উৎস হল নাকি আহমেদ নাডউই নামের একটি ফেসবুক পেজ।
ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে এমন এক সময় যখন সুদর্শন টিভি-র ১০ পর্বের অনুষ্ঠান 'ইউপিএসসি জিহাদ'-এর বাকি এপিসোডগুলি সম্প্রচার করতে দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিমকোর্ট।
ক্লিপটিতে ওই ব্যক্তিকে বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। ৪ মিনিট ধরে তিনি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, তাঁরা যেন লেখাপড়া শিখে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, আইটি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ করে নিয়ে সেগুলিতে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।
তরুণদের প্রতি আবেদন করে তিনি বলেন যে, তাঁরা যেন সব ক্ষেত্রেই চাকরি পা্ওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে অন্যরা মুসলমানদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় যে ক্যাপশান সহ ভাইরাল হয়েছে, তা হল: "ভারতের হিমালয়া ড্রাগ কোম্পানি সম্পর্কে আমরা সবাই গর্বিত। কিন্তু তার মালিক মহম্মদ মানালের মনোভাব দেখুন। তাঁদের জিনিস ব্যবহার করার আগে দু'বার ভাবুন #Bycotthimayaproducts #makestrongbharat #awakehindus'"
নীচে ভিডিওটি দেখুন; আর্কাইভ সংস্করণ দেখুন এখানে।
যাচাইয়ের জন্য, ওই একই ভিডিও আমাদের হেল্পলাইন নম্বরেও আসে।
ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে দেখা যায়, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তে, 'দ্য সিয়াসত ডেইলি'-তে প্রকাশিত একটি লেখার সঙ্গে ওই ক্লিপটির একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়। লেখাটিতে ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয় উনি একজন আইনজীবী।
যেহেতু ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে ঝরঝরে উর্দু বলতে শোনা যায়, এবং বাবরি মসজিদের কথা উল্লেখ করেন, আমরা 'বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা সম্পর্কে কথা বলছেন একজন আইনজীবী', এই বাক্যটি উর্দুতে অনুবাদ করে ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড সার্চ করি।
(উর্দুতে: مسلمان وکیل بابری مسجد انہدام پر گفتگو کررہے ہیں)
আমরা দেখি ওই একই ভিডিও, 'নাকি আহমেদ নাডউই পেজ' নামের একটি ফেসবুক পেজে সেটি ৬ অগস্ট আপলোড করা হয়। তার সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা ও তার জায়গায় রাম মন্দিরের নির্মাণ, ভারতের ইতিহাসে একটি সন্ধিক্ষণ এবং এ ব্যাপারে মুসলমানদের গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।"
(উর্দুতে: ابری مسجد کا انہدام اوراسکی جگہ پر رام مندر کا قیام تاریخ ہند کا ایک ایسا موڑ ہے جس کے بارے میں مسلمانوں کو سنجیدگی سے غور کرنا ہوگا!)
অযোধ্যায় ২ অগস্ট ২০২০-তে রাম মন্দিরের ভূমি পুজো হওয়ার পরের দিনই, এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
আসল ভিডিওটি ১২ মিনিটের। ভাইরাল অংশটি শুরু হয়, ৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের মাথায়।
বুম দেখে, নাকি আহমেদ নাদভি নামে একাধিক ফেসবুক পেজ আছে। ওই একই নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে, যেখানে বেশ কিছু ভিডিওতে মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত নানা বিষয়ের ওপর বক্তব্য রেখেছেন ওই ব্যক্তি।
ওই নামের একটি 'লিঙ্কডইন' প্রোফাইলে, ভাইরাল ভিডিওতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, সেই ব্যক্তিরই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ওই প্রোফাইলে বলা হয়েছে, নাকি আহমেদ নাডউই বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থিত মাদেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।
প্রোফাইলটি নীচে দেখুন।
'হিমালয়' অ্যাঙ্গেল
হিমালয় ড্রাগ কম্পানি সম্পর্কে ভুয়ো খবর বুম আগেও নস্যাৎ করেছে।
আগে একবার তথ্য যাচাই করার সময়, ওই কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে আমরা জানতে পারি যে, হিমালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ মানাল ১৯৮৬ সালে প্রয়াত হন।
তাছাড়া, মহম্মদ মানাল ও ভাইরাল ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের ছবি আমরা মিলিয়ে দেখি। দেখা যায়, তাঁদের মুখের চেহারায় কোনও মিল নেই।
কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি সত্যিই নাকি আহমেদ নাডউই কিনা তা আমরা যাচাই করে দেখতে পারিনি, যদিও যে প্রোফাইলগুলি থেকে ভাইরাল ক্লিপটি শেয়ার করা হয়েছে, সেগুলিতে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
আমরা হিমালয় ড্রাগ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মহম্মদ মানালের ছেলে মেরাজ মানালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে পারলে, আমরা এই প্রতিবেদন আপডেট করব।
Claim : হিমালয় ড্রাগের প্রতিষ্ঠাতা/ কর্ণধার একটি প্ররোচনামূলক ভাষন দিয়েছেন
Claimed By : Social Media
Fact Check : False
Next Story