উন্নাওয়ে পুলিশের মহিলা প্রতিবাদীকে নিগ্রহের ছবি ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল
বুম দেখে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদে পুলিশের নিগ্রহের ছবি এটি।
![উন্নাওয়ে পুলিশের মহিলা প্রতিবাদীকে নিগ্রহের ছবি ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল উন্নাওয়ে পুলিশের মহিলা প্রতিবাদীকে নিগ্রহের ছবি ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2020/10/20/932467-delhi-police-misbehaving-with-muslim-girl.webp)
২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে ধর্ষণের প্রতিবাদের সময়ে এক পুলিশকর্মীর একজন প্রতিবাদীকে নারীকে রাস্তায় ফেলে নিগ্রহের মুহূর্তের ছবিকে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ওই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে এটি দিল্লিতে পুলিশের এক মুসলিম তরুনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সাম্প্রতিক ঘটনা।
ফেসবুকে 'বার্তাবাহক নেট' নামে বর্তমানে অস্তিত্বহীন ওয়েবপোর্টালের একটি খবরের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনের শিরনামে লেখা রয়েছে, "দিল্লিতে মুসলিম তরুনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া এক ভারতীয় পুলিশের ভয়াবহ দৃশ্য।"
প্রতিবেদনের ছবিতে দেখা যাচ্ছে সালওয়ার কামিজ পড়া এক যুবতী রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে আছেন এবং খাকি উর্দি পড়া এক পুলিশকর্মী সেই যুবতীর উপর উপর হয়ে পড়ছেন। ছবিটি দেখলে অবশ্য বোঝা যায় না ওই পুলিশকর্মী মহিলা না পুরুষ।
এই স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনেও লেখা হয়েছে, "দিল্লিতে মুসলিম তরুনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া এক ভারতীয় পুলিশের ভয়াবহ দৃশ্য"
বুম একই ক্যাপশনে সার্চ করে ফেসবুকে ২০২০ সালের ৭ মার্চ শেয়ার করা একটি পোস্ট খুঁজে পায় যেখানে 'বার্তাবাহক ডট নেট' এই পোর্টালের প্রতিবেদনটি রয়েছে।
বুম ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরেও অন্যান্য ছবির সাথে এই ভাইরাল ছবির তথ্য যাচাই করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তখন ওই ছবিগুলিকে অসমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় মহিলাদের সাথে আসাম পুলিশের দুর্ব্যবহারের দৃশ্য বলে ভাইরাল করা হয়েছিল।
ফ্রি প্রেস জার্নালের ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ছাত্রদল ন্যাশনল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার-এর ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের দৃশ্য এটি। ওই ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে গণধর্ষণের শিকার হওয়া এক মহিলার বাড়িতে বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের পরিদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন।
সে সময় ওই দলে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী কমল রাণী বরুন ( অগস্ট মাসে করোনাভাইরাসে প্রয়াত), স্বামী প্রসাদ মৌর্য এবং বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক রোহিণী সিংহ ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এই ছবি সহ আরও দুইটি ছবি টুইট করেন এবং ক্যাপশনে লেখেন, "এই ছবিগুলি উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে সংজ্ঞায়িত করে, ধর্ষণের অভিযুক্তের সামনে নতমস্তকে আছে অথচ ধর্ষণের প্রতিবাদকারীদের প্রহার করছে। এভাবেই রাজ্যটি তার মহিলাদের সঙ্গে আচরণ করে।"
কাঞ্চন শ্রীবাস্তব নামের আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ এই ছবিটি টুইট করেন এবং প্রতিবাদী মহিলাকে একজন কংগ্রেস কর্মী হিসেবে দাবি করেন।
বুম ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ পোস্ট করা আরেকটি টুইট খুঁজে পায় যেখানে স্পষ্টতই দেখা যায় পুরুষ নয় ওই পুলিশকর্মী একজন মহিলা।
উন্নাওয়ের সিন্দুপুর গ্রামের ২৩ বছর বয়সী গণধর্ষণের শিকার হওয়া এক মহিলাকে এক বছরের মধ্যেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। রায় বরেলিতে আদালতে যাওয়ার পথে তাঁকে আক্রমণ করে ৫ যুবক। পরে দিল্লিতে সফদরজং হাসপাতালে মারা যান তিনি। বিস্তারিত পড়ুন ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে।