লকডাউনে পুরী সৈকতে হরিণ? ছড়ানো হল ফরাসি চিত্রনির্মাতার পুরনো ভিডিও
বুম যাচাই করে দেখেছে মূল ভিডিওটি ২০১৫ সাল থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে যা ফরাসি চিত্রনির্মাতা অ্যান্থনি মার্টিন ক্যামেরাবন্দী করেন।
লকডাউন চলাকালীন পুরীর সমুদ্র সৈকতে একটি হরিণ আপন মনে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে—এই ভুয়ো দাবি সহ একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সাধারণত পুরী তটে হরিণ দেখা যায় না। পুরী থেকে কোনারক যাওয়ার পথে তাদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে তাদের পুরীতে দেখা যাচ্ছে।
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে—ভিডিওটি অন্তত চার বছর পুরনো যা ক্যামেরাবন্দী করেন ফরাসি এক চিত্রনির্মাতা এবং লকডাউন চলাকালীন এই ধরণের ঘটনা পুরীর সৈকতে ঘটেনি।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে আর একটি বাদামি রঙের হরিণ বেলাভূমিতে এদিক থেকে ওদিকে দৌড়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। ভিডিওটিতে হরিণ ছাড়া আর কোন মানুষ বা না-মানুষীদের গতিবিধি নজরে আসছে না।
ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে বাংলা-ইংরেজি ক্যাপশন মিশিয়ে লেখা হয়েছে, ''জন শূন্যহীন পুরির সমুদ্র সৈকতে এক হরিনের মন খুলে নৃত্য। সাধারণত এদের পুরীতে এদের দেখা মেলেনা। এদের সাধরণত দেখা যায় যখন একজন পুরী থেকে কোনারক যায়। লকডাউনের পরে, একটি হরিন (বালির হরিন) পুরীর সৈকতে পাওয়া গেল। নৃত্যটা উপভোগ করুন।''
(মূল পোস্টটি: "জন শূন্যহীন পুরির সমুদ্র সৈকতে এক হরিনের মন খুলে নৃত্য॥
Normally they are not seen in Puri Beach. They are commonly found when one goes to Konark from puri. After lockdown, A deer (sand deer) is found in the puri beach. Enjoy the dance.")
ফেসবুকে ভিডিওটি একই ক্যাপশনে সহ ভাইরাল হয়েছে।
ফেসবুকের সাথে সাথে টুইটারেও ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, ভাইরাল হওয়া একটি টুইটের ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা আছে, "যেহেতু মানুষ ঘরে বন্দি, তাই প্রাণীরা এই সুযোগকে যথাযথ উপভোগ করছে। পুরী-কোনারক ম্যারিন ড্রাইভের রাস্তায় চন্দ্রবাঘা সমুদ্র তটের কোন একটা জায়গা থেকে নেওয়া।"
(মূল ইংরেজিতে ক্যাপশন, "As humans are caged at home, animals are thoroughly enjoying the opportunity! Somewhere on the sea beach near Chandrabhaga, along the Puri-Konark marine drive road in Odisha.")
As humans are caged at home, animals are thoroughly enjoying the opportunity! Somewhere on the sea beach near Chandrabhaga, along the Puri-Konark marine drive road in Odisha. pic.twitter.com/MA0VOo9ALF
— Nitin A. Gokhale (@nitingokhale) April 7, 2020
ওড়িশার এক বনদপ্তরের আধিকারিককেও ভুয়ো দাবি সহ ভিডিওটি টুইটটি করতে দেখা গেছে, যেখানে তিনি ফরাসী নৌ-বাহিনীর প্রাক্তন আধিকারিক জ্যা কুস্তো' (Jacques YvesCousteau) কে উদ্ধৃতি করে নীচে লিখেছেন—ঘরের ভেতরে মানুষ ও খালি সমুদ্রতট এই হরিণকে স্বর্গীয় অনুভুতি দিচ্ছে।
(মূল ইংরেজিতে ক্যাপশন, "'The sea, once it casts it spell, will hold one in its net forever' With human indoors, an empty beach make this deer wonder into the soul of the paradise.")
The sea, once it casts it spell,
— Susanta Nanda IFS (@susantananda3) April 3, 2020
Will hold one in its net for ever🙏
With human indoors, an empty beach make this deer wonder into the soul of the paradise. pic.twitter.com/ynU64aZdzr
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ লকডাউন ভাঙায় পাকিস্তান পুলিশের দাওয়াইকে ভারতের ঘটনা বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া ভিডিওকে ইনভিডের মাধ্যমে কী ফ্রেমে ভাগ করে ইন্টারনেটে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এই ভিডিওর অনেকগুলো সুত্র খুঁজে পায়। বুম জানতে পারে ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে ২০১৫ সালের ১০ ই নভেম্বর থেকে। ভিডিওটি শুট করেছিলেন ফরাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যান্থনি মার্টিন। মূল ভিডিও সহ পোস্টটি নীচে দেখুন।
চিত্র নির্মাতা অ্যান্থনি মার্টিন ওই ফেসবুক পোস্টে জানান তিনি ৩ বছর ধরে একটি দীর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ করছেন। সেখানে এরকম একটি হরিণের লাফানোর দৃশ্যের প্রয়োজন ছিল। চলচ্চিত্রটি তৈরির পিছনে জড়িত কলাকুশলীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি ওই পোস্টে।
২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ইউটিউবে আপলোড হওয়া "বাম্বি দ্য ট্রু স্টোরি"র প্রিমিয়ার ভিডিওতেও রয়েছে হরিণ লাফানোর এই দৃশ্যটি।
অ্যান্থনি মার্টিনের এই ভিডিওটি নিয়ে 'দ্য ডোডো' ওয়েবসাইটেও ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।