হিন্দু সন্ন্যাসীর মৃত্যুতে সাস্প্রদায়িকতার যোগ ওড়ালো সুলতানপুর পুলিশ
বুম সুলতানপুরের পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার যোগ খারিজ করে দেন।
এক তরুণ হিন্দু সন্ন্যাসীর মৃত্যুর নেপথ্যে সাম্প্রদায়িকতার হাত আছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, সুলতানপুরের দুই পুলিশ আধিকারিক তা উড়িয়ে দিয়েছেন। ছাতৌনা কালান গ্রামে ওই সন্ন্যাসীর মৃত্যুকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই বর্ণনা করেন তাঁরা।
(সাবধনতা, এই প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিবরণ আছে)
৩০ জুলাই ২০২০ তারিখে, একটি মন্দির চত্বরে গাছের ডাল থেকে সত্যেন্দ্র আনন্দ সরস্বতী নামের এক তরুণ সন্ন্যাসীর ঝুলন্ত দেহের মর্মান্তিক ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। হিন্দিতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তাঁর বয়স হয়েছিল ২২ বছর।
ওই বিচলিত করার মতো ছবিটি শেয়ার করার সময়, অনেক টুইটার ব্যবহারকারী দাবি করেন যে, ওই সন্ন্যাসীকে মুসলিমরা হত্যা করেছে। পবিত্র শ্রাবণ মাসে তাঁর পুজোর কাজে বাধা দিচ্ছিলেন ওই ব্যক্তিরা।
ছবিগুলি বিচলিত করার মতো বলে বুম টুইটগুলি এখানে অন্তর্ভুক্ত করেনি। টুইটগুলি আর্কাইভ করা আছে এখানে, এখানে ও এখানে।
ইংরেজিতে লেখা একটি টুইটে দাবি করা হয়, "সুলতানপুরে, সত্যেন্দ্র আনন্দ সরস্বতী নামের এক সন্ন্যাসীর দেহ গাছ থেকে ঝুলতে দেখা যায়। মিরাটের পর এবার সুলতানপুরে। এই সন্ন্যাসীকে মেরে ফেলা হয়, কারণ উনি সব আচার অনুষ্ঠান মেনে, মন্দিরে পুজো করছিলেন। শান্তিবাহিনীর তা ভাল লাগেনি!"
একই সুরে, অন্য একটি টুইটে বলা হয়, শ্রাবণের পুজোর আয়োজন করার আগের দিন স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে সন্ন্যাসীর কথাকাটাকাটি হতে দেখা যায়। টুইটটি ৪,৪০০ বারেরও বেশি রিটুইট করা হয়।
একই মিথ্যে দাবি সমেত ছবিটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ছুরি মারার ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালকরা মুসলিম নয়: দিল্লি পুলিশ
তথ্য যাচাই
কয়েকটি কি-ওয়ার্ড দিয়ে বুম সার্চ করে। তার ফলে, 'দৈনিক ভাস্কর' ও 'নব ভারতটাইমস'-এর মতো দু'টি বড় কাগজে এই বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট সামনে আসে। ওই প্রতিবেদনগুলি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
নব ভারত টাইমস-এর রিপোর্টে বলা হয় যে, সন্ন্যাসীর মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন, সেটাই ছিল মানুষের আলোচনার বিষয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার কোনও উল্লেখ ছিল না তাতে।
"স্থানীয় মানুষজন এটাই আলোচনা করছিলেন যে সন্ন্যাসীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাকি উনি আত্মহত্যা করেছেন? স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন যে, বাল যোগী আনন্দ সরস্বতী কয়েক বছর আগে হিমাচলপ্রদেশ থেকে এসে, চান্দা পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত ছাতৌনা গ্রামে এসে থাকতে শুরু করেন," নব ভারত টাইমস তার প্রতিবেদনে জানায়।
ওই রিপোর্টের সূত্র ধরে আমরা সুলতানপুরের পুলিশ সুপার হরি মীনার সঙ্গে যোগাযোগ করি।
"না, এটা মুসলমান বা অন্য কারও দ্বারা খুনের ঘটনা নয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা." মীনা বলেন বুমকে।
এরপর আমরা লাম্বুয়ার সার্কেলের সার্কেল অফিসার, ডেপুটি পুলিশ সুপার লাল সিং চৌধুরির সঙ্গেও কথা বলি। উনি নিশ্চিত করেন যে ভাইরাল ছবিটি ওই মৃত ব্যক্তিরই ছবি।
"যে মন্দিরে উনি মারা যান ও আরও দু'টি মন্দিরে আমি সম্প্রতি যাই। স্পষ্টতই এটা একটা আত্মহত্যার ঘটনা। যদি কেউ অন্য কিছু দাবি করে থাকেন, তবে তা মিথ্যে ও ভিত্তিহীন," বলেন চৌধুরি।
আগের দিন স্থানীয়দের সঙ্গে সন্ন্যাসীর কোনও বচসা হয়েছিল কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে. চৌধুরি বলেন "মারামারি বা ঝগড়া সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।"
চৌধুরি দাবি করেন যে, মৃত ব্যক্তি মারিজুয়ানার মত মাদক দ্রব্য সেবন করতেন। বুম অবশ্য এই অভিযোগ স্বাধীনভাবে খতিয়ে দেখেনি।
আরও পড়ুন: ডঃ কাফিল খান জামিন পেলেন বলে শেয়ার হল পুরনো ভিডিও