'ভালোবাসা' নামের এই লেখাটি নবনীতা দেবসেনের নয়
বুমকে সাহিত্যিক কন্যা অন্তরা দেবসেন জানিয়েছেন লেখাটির বাক্যাংশ/পংক্তির সঙ্গে নবনীতা দেবসেনের লেখার কোনও মিল নেই।
সোশাল মিডিয়ায় 'ভালোবাসা' নামে একটি লেখা প্রয়াত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের লেখা বলে ছড়ানো হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবসের আবহে এই লেখা ঝড়ের গতিতে শেয়ার করা হয়েছে আরও ফেসবুক পাতায়। দেখা যায় ফেসবুকে 'ভালোবাসা' নামের এই লেখা নবনীতা দেবসেনের 'কবিতা' বলে ভাইরাল হয়েছে।
এই লেখার ভাষা যে নবনীতা দেবসেনের নয় সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত একথা বুমকে জানিয়েছেন নবনীতা দেবসেনের কন্যা অন্তরা দেবসেন। ''অবশ্য কেউ যদি তাঁর কোনও কোনও লেখা থেকে ভাব সংগ্রহ করে লেখে তা অবশ্য আমার জানা নেই, কিন্তু এই লেখার ভাষা আমার চেনা নয়," আরও জানান তিনি।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন (৭৭০০৯০৬১১১) নম্বরে এক পাঠক রচয়িতা সম্পর্কে তথ্যের সত্যতা জানতে চেয়ে বার্তা পাঠালে ভাইরাল লেখাটি আমাদের নজরে আসে।
লেখাটির কয়েকটি বাক্য হল—
''*ভালবাসা* নবনীতা দেবসেন। ভালবাসা হল - বাড়ি ফিরতে দেরি হলে যখন মা বলে, "কী হল, আজ অনেক দেরি হয়ে গেল!" ভালবাসা হল - কাজের থেকে ফিরলে বাবা যখন প্রশ্ন করে, "আজ কি খুব খাটাখাটুনি গেল?" ভালবাসা হল - বৌদি যখন বলে, "কি রে, মেয়ে দেখছি তোর জন্য।...নিরাপত্তা, বন্ধন, বিশ্বাস আর একটু যত্নের নামই ভালবাসা।''
এই একই লেখাটি বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র তাঁর ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেছেন। এই লেখার সঙ্গে আপলোড করা ছবিতে লিখেছেন 'উইথ লাভ ইনকিলাব। ঘৃণার রাজনীতি নয়, জিতবে ভালবাসা''
ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বুম সবচেয়ে পুরনো নবনীতা দেবসেনের নাম সহ ফেসবুক পোস্টের হদিস পায়। এই একই লেখাকে ফরোয়ার্ড মেসেজ হিসেবেও পোস্ট করেছেন কেউ কেউ। এরকরমের পোস্টে স্বভাবতই লেখা নেই নবনীতা দেবসেনের নাম।
বুম সত্যতা জানতে সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের দিল্লি নিবাসী কন্যা অন্তরা দেবসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বুমকে জানান, 'কবিতার ভাষা দেখে মায়ের লেখা মনে হচ্ছে না। 'ভালোবাসা' নামে এই ধরণের কোনও লেখা মা লেখেননি। 'ভালোবাসা' সিরিজের নবনীতা দেবসেনের লেখা কমপক্ষে এক ডজনের বেশি কবিতা আছে। তার মধ্যে কিছু পাওয়া যাবে তার শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলনে। সেগুলি যথার্থ অর্থ ও ভাষাগত ভাবে জটিল, ভাইরাল হওয়া লেখাটির চেয়ে।''
অন্তরা দেবসেন শুক্রবার থেকে অনেক বার্তা পেয়েছেন নবনীতা দেবসেনের অনুরাগীদের থেকে। প্রাথমিকভাবে লেখাটি পড়ে তাঁদের মানেও সন্দেহ দানা বাঁধায় আনেকেই তাঁকে মেসেজ করেন।
বুমের পক্ষে কবিতার মূল রচয়িতা কে তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নবনীতা দেবসেন কেমন ভাবতেন ভালোবাসা নিয়ে? বুমের পক্ষে ২০১৯ সালে 'প্রেম দিবস'-এর প্রাক্কালে ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ভালবাসা নিয়ে তাঁর 'ভালো-বাসার বারান্দা' কালামের লেখা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। লেখাটি পড়া যাবে এখানে।
নবনীতা দেবসেন ঋতুপর্ণ ঘোষের সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'রোববার'-এর জন্মলগ্ন থেকে 'ভালো-বাসার বারান্দা' নামে কলাম লেখার সুবাদে অনেক নবীন প্রজন্মের পাঠকের কাছে সমাদ্রিত হন। হাভার্ড ও প্রেসিডেন্সী ছাত্রী নবনীতা যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যে বিভাগের শিক্ষিকা ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি পুরাণ, নারীদের ক্ষমতায়ন, ভ্রমন, শিশু সাহিত্য নিয়ে লেখালেখিতে স্বচ্ছন্দ্য বিচরণ ছিল তাঁর। ভারতের নানা প্রান্ত এমনকি বিশ্ব সাহিত্যচর্যার সুলুক সন্ধান জানতেন তিনি।
মেয়েদের লেখা-লেখির পৃষ্ঠপোষকতা ও চর্চার জন্য গড়ে তোলেন 'সই' নামে বিশেষ সংগঠন। গত বছর নভেম্বর মাসে পদ্মশ্রী ও আকাদেমি প্রাপক লেখিকা প্রয়াত হয়েছেন।