সেহরি খাওয়ানোয় হিন্দু মহিলাকে মার আরএসএস কর্মীদের, ছড়ালো সম্পর্কহীন ছবি
ভদ্রমহিলার এক মেয়েকে সেহরি দেওয়ার ছবিটি জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগের। অন্যদিকে কোলাজের আহত মহিলার ছবিটি গুজরাতের।
সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনার দুটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় একসঙ্গে শেয়ার করে দাবুি করা হয়েছে এক মুসলিম তরুণীকে সেহরি খাওয়ানোর 'অপরাধে' এক হিন্দু মহিলাকে মারধর করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্যরা।
একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণী খাচ্ছেন এবং তাঁর পিছনে এক জন ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য ছবিটিতে এক জন আহত ভদ্রমহিলাকে দেখা যাচ্ছে; তাঁর নাক দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আহত ভদ্রমহিলার নাকে হলুদ লাগানো হয়েছে। ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে ছবিদুটি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মুসলমান মেয়েটিকে সেহরি খাওয়ানোর জন্যই ভদ্রমহিলা হিন্দুত্ববাদীদের রোষের শিকার হন। ইসলামিক রীতিতে রমজান মাসে সূর্যোদয়ের আগে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সেহরি বলা হয়। উপবাস শুরু করার আগে নানা পদের এই খাবার খাওয়া হয়।
বুম অনুসন্ধান করে দেখে যে কোলাজে যে দুটি ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের পারস্পরিক কোনও সম্পর্ক নেই এবং দুটি ছবিতে আলাদা দুজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল হওয়া পোস্টে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "সম্প্রতি আরএসএস গুন্ডারা কাশ্মীরের মুসলিম তরুণীকে সেহরি খাওয়ানোর অপরাধে এক হিন্দু নারীকে আক্রমণ করে। ভারত এখন আরএসএস-এর দখলে। সংবাদমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পুরোপুরি তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ ভাবে যদি চলতে থাকে তবে এ দেশে কি শান্তি থাকবে?"
ফেসবুকে পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুক বিভিন্ন পেজ ও টুইটারের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তথ্য যাচাই
ভদ্রমহিলার সেহরি দেওয়ার ছবি
বুম ছবিটিতে রিভার্স সার্চ করে এবং দেখতে পায় একটি টুইটার হ্যান্ডেল এই একই ছবি ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল শেয়ার করেছিল। ছবিটির উপর ২৫ এপ্রিল ২০২০, সকাল ৩টে ৪১ মিনিটের টাইমস্ট্যাম্প আছে। ঘটনাক্রমে ২৫ এপ্রিল ছিল পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন (ইসলামিক রীতিতে উপবাসের মাস)। ছবিটি প্রেদুমন গোজার পাঠানো বলে জানা যায়।
বুম ফেসবুকে গোজার প্রফাইলের খোঁজ করে এবং এই নামের এক জনের সন্ধান পায়। প্রোফাইল থেকে জানা যায় গোজা জম্মুর অনন্তনাগের বাসিন্দা।
আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে অনন্তনাগের বাসিন্দা কাশ্মীরি পন্ডিত প্রেদুমন গোজার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বুমকে জানান, "এটা সেহরি পরিবেশন করার একটি সাধারণ ছবি। এখানে যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, সে আমার বন্ধুর মেয়ে। সে পড়াশোনার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকে। লকডাউন চলার ফলে রমজানে বাবা মায়ের কাছে যেতে পারেনি।" তবে ছবিতে যে ভদ্রমহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি গোজার স্ত্রী কি না, তা গোজা স্পষ্ট ভাবে জানাননি।
আহত মহিলার ছবি
যে ছবিটিতে এক আহত মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, সেটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির একটি টুইট দেখতে পাই।
টুইটটিতে চারটি ছবির একটি সেট দেখা যায়। এই টুইটটি আসলে সাংবাদিক রানা আয়ুবের করা একটি পোস্টের উত্তর ছিল।
এই পোস্টে টুইটার ব্যবহারকারী লেখেন: #খাম্বাত গুজরাতে ওরা সংখ্যাগরিষ্ঠের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে এবং একতরফা হিংসা ছড়াচ্ছে। এ রকম ঘটনার জন্য তোমাদের মত লোকেরা দায়ী। আমরা জানি তোমরা এর প্রতিক্রিয়া ঘটার জন্য অপেক্ষা করছ, যাতে তোমরা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারো।"
#Khambhat Gujrat
— Manish हिन्दु 🦁 (@manishwar29) February 24, 2020
they are testing the patience of majority and initiating the one sided violence
people like u are responsible for such incident
we knew u r waiting for moment when reactions take place to capitalise ur agenda .
pic.twitter.com/j2kkagH6z5
এই টুইটের সূত্র ধরে বুম 'খাম্বাত', 'গুজরাত', 'হিংসা', 'হাসপাতাল' জাতীয় শব্দ দিয়ে ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করে। একটি নিউজ বুলেটিনের ছবির একটি অংশে একজন ভদ্রমহিলার ছবি দেখা যায় যার সঙ্গে ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবির ভদ্রমহিলার সঙ্গে সাদৃশ্য আছে।
টিভি৯ গুজরাতিতে আপলোড করা ভিডিওটি বুম দেখে। ওই ভদ্রমহিলাকে ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের পর দেখতে পাওয়া যায়। আমরা এই ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট নিয়ে ভাইরাল হওয়া পোস্টের ভদ্রমহিলার সঙ্গে মেলাই এবং অনেক সাদৃশ্য দেখতে পাই।
নীচে দুটি ছবির সাদৃশ্য দেখতে পাবেন।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি গুজরাতের খাম্বাত শহরে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। খাম্বাতের আকবরপুরা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে এই দাঙ্গা ছড়ায়।