ভুলবশত ডেয়ারি উদ্যোক্তাকে হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের নির্যাতিতা বলা হয়েছে
বুম দেখে, ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাকে পুরস্কার নিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের শিকার নন।
মিথ্যে দাবি সমেত এক মহিলা ব্যবসায়ীর ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে তাকে পুরস্কার নিতে দেখা যাচ্ছে, আর সেই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে, তিনি হলেন হায়দরাবাদের সেই ২৬ বছর বয়সী পশু চিকিৎসক, যাকে নভেম্বর ২০১৯-এ ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার এমন কোনও মহিলার নাম প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।
কিন্তু এখন হিন্দি ক্যাপশন সহ ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন একটি ভাইরাল ভিডিওয় অন্য এক ব্যক্তিকে ওই নির্যাতিতা বলে দেখানো হচ্ছে।
ওই চার মিনিটের ভিডিওতে ঘোষককে বলতে শোনা যাচ্ছে, "তেলেঙ্গানা থেকে শ্রীমতী আল্লোলা দিব্যা রেড্ডি।" মহিলা যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন, সেই পোডিয়ামে ভারত সরকারের সিল দেখা যাচ্ছে আর পেছনে লেখা 'ইউনিয়ন মিনিস্ট্রি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফার্মার্স ওয়েলফেয়ার' (কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষি কল্যাণ মন্ত্রক)।
हैदराबाद कांड में दिव्या रेड्डी का देवलोकगमन होना केवल एक डॉ. का अंत नही बल्कि शासन द्वारा पुरस्कृत एक वेटेरनरी साइंटिस्ट और रीसर्चर हवस के भेट चढ़ गया। यह पूरी दुनिया के लिए महान क्षति है।👇🏿
Posted by श्री राधा कृष्णा गौ-शाला/गोकुल धाम मंदिर कुआँथल on Sunday, December 8, 2019
এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
শেয়ার-করা ভিডিওর ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "হায়দরাবাদে দিব্যা রেড্ডির মৃত্যুতে কেবল একজন ডাক্তারের জীবন শেষ হয়ে গেল তাই নয়, বরং যৌন লালসার শিকার হতে হল সরকারি পুরস্কার প্রাপ্ত এক পশু-বিজ্ঞানী ও গবেষককে। বিশ্বের কাছে এ এক অকল্পনীয় ক্ষতি।"
(হিন্দিতে লেখা হয়: हैदराबाद कांड में दिव्या रेड्डी का देवलोकगमन होना केवल एक डॉ. का अंत नही बल्कि शासन द्वारा पुरस्कृत एक वेटेरनरी साइंटिस्ट और रीसर्चर हवस के भेट चढ़ गया। यह पूरी दुनिया के लिए महान क्षति है)
২৮ নভেম্বর, হায়দরাবাদের কাছে, ২৬ বছরের এক পশু চিকিৎসককে চার ব্যক্তি গণধর্ষণ করে, তাঁকে হত্যা করে এবং তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। পরের দিন তাঁর আগুনে পোড়া দেহ পাওয়া যায়। তারপরই সাইবারাবাদ পুলিশ চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। ৬ ডিসেম্বর ২০১৯, পুলিশ জানায় যে, চার অভিযুক্ত এক এনকাউন্টারে প্রাণ হারিয়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যার ওই বীভৎস ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। সেই সঙ্গে, ভারতে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বড় করে সামনে আনে।
ক্যাপশনটি দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
আমরা দেখি, ভিডিওতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি হায়দরাবাদের ধর্ষণকান্ডের নির্যাতিতা নন। ভাইরাল ক্লিপটিতে মহিলাকে দিব্যা আল্লোলা রেড্ডি হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে শোনা যাচ্ছে।
'দিব্যা আল্লোলা রেড্ডি' দিয়ে সার্চ করলে, আমরা ৪.২৫ মিনিটের একটি ভিডিওর সন্ধান পাই। সেটি ইউটিউবের ক্লিমম নামের এক চ্যানেলে ২ জুন ২০১৮'য় আপলোড করা হয়েছিল। ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সেটি হুবহু মিলে যায়। সেটির বিবরণে বলা হয়, "'ন্যাশনাল গোপাল রত্ন অ্যাওয়ার্ড ২০১৮' (জাতীয় গোপাল রত্ন পুরস্কার ২১০১৮) পাওয়ার পর আল্লোলা দিব্যা রেড্ডি বক্তৃতা দিচ্ছেন'।
ভাইরাল ভিডিওটির ১৪ সেকেন্ডের পর থেকে একই দৃশ্য দেখা যায়।
রেড্ডি হলেন হায়দরাবাদে ক্লিমম নামের একটি খামারের প্রতিষ্ঠাতা। সেখানে ভারতের নিজস্ব প্রজাতির গরু থেকে দুধ উৎপাদন করা হয়। সুস্বাস্থ্যের প্রসার ঘটানোও এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য।
তার নাম দিয়ে গুগুলে সার্চ করলে, তার এবং তার প্রতিষ্ঠানের ওপর বেশ কিছু লেখা পাই আমরা। নীচের লেখাটি 'ডেকান ক্রনিক্যালে ১০ এপ্রিল ২০১৯'এ ছাপা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে উনি ভারত সরকারের কাছ থেকে ন্যাশনাল গোপাল রত্ন পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২ জুন ২০১৮'র ভিডিওটির বিবরণের সঙ্গে তুলনা করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ভাইরাল ভিডিওটি ওই একই অনুষ্ঠানের।
দিব্যা আল্লোলা রেড্ডির যে পরিচিতি ডেকান ক্রনিক্যালে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে হায়দরাবাদের গণধর্ষণের নির্যাতিতার কোনও মিল নেই। যেমন, নিহত মহিলার বয়স ছিল ২৬ আর ডেকান ক্রনিক্যালে বলা হয়, দিব্যা আল্লোলা রেড্ডির বয়স হল ৩৫।
তাছাড়া, ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়ে থাকলেও, নির্যাতিতার নাম দিব্যা নয়। নির্যাতিতা বিয়েও করেননি। অথচ, দিব্যা আল্লোলা রেড্ডি তার ভাষণে বলেন তার স্বামীর নাম গৌতম রেড্ডি।
ক্লিমম আসল ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করেছে।
Watch Allola Divya Reddy speak on winning the National Gopal Ratna Award 2018. She talks about her movement for...
Posted by Klimom Wellness & Farms on Saturday, June 2, 2018
ভাইরাল-হওয়া দাবিটি 'অল্ট নিউজ' আগে খণ্ডন করেছে।