মিথ্যে দাবিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিলের সাথে জুড়ল রোহিঙ্গা পরিবারের ছবি
বুম যাচাই করে দেখে ২০১৭ সালে তোলা ছবিটি বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত এক রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের।
ছবিটিতে বাংলাদেশের (Bangladesh) একটি শরণার্থী শিবিরে (Refugee Camp) এক বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ছবিটিকে মিথ্যে করে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলের (Population Control Bills) সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি আইন চালু করার প্রস্তাব এনেছে। তাতে, যে সব দম্পতির তিন বা তার বেশি সন্তান হবে, সেই সব দম্পতির বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ওই প্রস্তাবিত আইনে কিছু পরিরর্তন চেয়ে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য আইন কমিশনকে চিঠি লিখেছে।
ছবিতে হুইল চেয়ারে বসা এক ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। প্রশান্ত প্যাটেল উমরাও নামের এক ব্যক্তি ছবিটি শেয়ার করেছেন। আগেও, সাম্প্রদায়িকভাবে উস্কানিমূলক মিথ্যে খবর প্রচার করার জন্য তাঁকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। উমরাও হিন্দিতে এক কুরুচিকর ক্যাপশন লেখেন, যার মানে দাঁড়ায়, "হাঁটতে না পারলেও, উনি ৮টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু তাদের খাদ্য ও চাকরির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের।"
ছবিটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: "जब इसकी 2 टांगें काम नहीं कर रही तब इसनें *** के दम पर 8 बच्चे कर दिए!" पर इनको राशन-रोजगार देना सरकार की जिम्मेदारी है?)
প্যাটেলের টুইটের ওপর মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, ছবিটিকে উত্তরপ্রদেশের প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টগুলি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও এখানে।
যদিও ছবির ক্যাপশনটিতে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি, তবুও দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ব পেজ থেকে সেটি শেয়ার করা হয়েছে এবং প্রস্তাবিত বিলটির বক্তব্যের সঙ্গে ছবিটিকে এক করে দেখা হচ্ছে।
অন্যান্য ব্যবহারকারীরাও ছবিটি টুইটার ও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
আরও পড়ুন: ২০১৭ সালের মে দিবসে কিউবায় পদযাত্রার ছবি ছড়াল সাম্প্রতিক প্রতিবাদ বলে
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে দেখা যায় যে, সেটি বাংলাদেশের কক্সবাজারে একটি রোহিঙ্গা (Rohingyas Refugees) শরণার্থী শিবিরে তোলা।
ছবিটি স্পেনের বারসিলোনার ফোটোগ্রাফি সংক্রান্ত পত্রিকা 'ডোধো'য় প্রকাশিত হয়েছিল। ছবিটির বিবরণে বলা হয়, "মোহম্মদ আলমগির, ৪০, ও তাঁর পরিবারের ছবি। পোলিওয় আক্রান্ত হয়ে উনি প্রতিবন্ধী হয়ে যান। সম্প্রতি তাঁর দেশ মায়ানমারে হিংসার ঘটনা থেকে বাঁচতে উনি ও ওনার পরিবার সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের কুটুপালঙ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন।"
আন্তর্জাতিক স্টক ছবির ওয়েবসাইট গেট্টি ইমেজেস-এ ছবিটি রয়েছে। ৬ মার্চ, ২০১৭ ছবিটি তোলেন প্রবাল রশিদ।
আলোকচিত্রী ও চিত্রসাংবাদিক প্রবাল রশিদ ২০১৭ সালের মে মাসে সংস্করণের ফাইনালে উঠেছিলেন। 'রোহিঙ্গাস: এ পিপল উইদাউট এ হোম' (রোহিঙ্গা: গৃহহীন এক জনগোষ্ঠী) – এই শিরোনামের এক ছবির সংকলনে স্থান পেয়েছিল ওই ছবিটি। বিশ্বের উঠতি আলোকচিত্রীদের জন্য 'বায়েনিয়াল গ্রান্ট'-এর ভাতাতে তৈরি হয় ওই ছবির সংকলন। বায়েনিয়াল অফ ফাইন আর্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফোটোগ্রাফি'র কিউরেটার অনুদান প্রাপকদের নির্বাচন করেন।
প্রবাল রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি বলেন, ছবিটি তাঁরই তোলা। "৬ মার্চ, ২০১৭ তে আমি ছবিটি তুলি। তার কয়েক মাস পরেই মোহম্মদ আলমগির কুটুপালঙ শরণার্থী শিবিরে মারা যান।"
কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত কুটুপালঙ হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সেখানে প্রায় ৮,৮০,০০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন (ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর হিসেব অনুযায়ী)। রোহিঙ্গারা হলেন একটি নিপীড়িত সম্প্রদায়। ২০১৭ সালে মায়ানমারে জাতি সংঘর্ষ শুরু হলে, তাঁরা সে দেশ থেকে পালিয়ে আসেন।