বিভ্রান্তিকর দাবিতে ফের ভাইরাল চারজন মহিলার জিপে বসে থাকা ছবির কোলাজ
বুম যাচাই করে দেখে ৫৬ বছরের ব্যবধানে তোলা ছবি দুটির মহিলাদের কেউই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।
Claim
চারজন মহিলার বন্দুক হাতে জিপে বসে থাকার পুরনো সাদা-কালো এক ছবির সাথে একই ভঙ্গিমায় ওই মহিলাদের বহু বছর পরে জিপে বসার রঙিন ছবি সম্প্রতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সেনানী দাবিতে আবারও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভাইরাল সেই ছবিটি পোস্ট করে তার ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "চার বান্ধবী, সবাই মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি গাড়িতে বসে ছবি তুলেছিলেন চারজন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে সেই একই গাড়িতে, একই জায়গায় আবার মিলিত হয়েছিলেন, একই ভঙ্গিতে। শ্রদ্ধা ও ভালবাসা"। পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। ২০২৩ সালে অনুরূপ দাবিতে ছবিটি ভাইরাল হলে বুম সেসময় তার তথ্য যাচাই করেছিল।
FactCheck
বুম অনুসন্ধানের সময় দেখে ছবিটি ২০১৩ সালে 'বাংলাদেশ ওল্ড ফটো আর্কাইভ' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। ছবিটির ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, “মহিলারা গ্রামে বেড়াতে গিয়ে বন্দুক হাতে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছেন (১৯৬৫)”। জনৈক রেনান আহমেদকে ছবিটির কৃতিত্ত্ব দিয়ে তাকে ওই পোস্টে ‘ট্যাগ’ও করা হয়। অতঃপর, আমরা রেনান আহমেদের বিভিন্ন পোস্ট ঘেঁটে দেখতে পাই, চার মহিলার ওই সাদা-কালো ছবিটি ২০২০ সালের একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পোস্টে শেয়ার করা হয়েছিল। সেখানে আহমেদ জানান, সাদা-কালো ছবিটি ১৯৬১ সালেই তোলা হয়েছিল। এর থেকে থেকেই স্পষ্ট হয়, মুক্তিযুদ্ধের ১০ বছর আগে সেই ছবি তোলা হয়েছিল। এছাড়া, নিউজ বাংলা-২৪ এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে রোকেয়া আহমেদের পুত্রবধূ রিফাত আহমেদ নিশ্চিত করে বলেন, ছবির মহিলাদের একজনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। রিফাত বলেন, "আমার স্বামীর ঠাকুর্দা আলাউদ্দিন আহমেদ প্রতি বছরই দু বার করে পরিবারের সকলকে নিয়ে পিকনিকে যেতেন। এই ছবিটা সম্ভবত খুলনায় তোলা। শিকার-টিকার হয়ে যাওয়ার পর, রান্নাবান্না হয়ে গেলে তিনি মহিলাদের বসে এমন ভাবে পোজ দিতে বলতেন, যেন তারা শিকারে যাচ্ছে।” তার ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে দুই পরিবারের পুরনো ছবিগুলি বের করে পুনর্মুদ্রণ করা হয় বলে রিফাত জানান। তিনি আরও বলেন, “সকলেই ছবিগুলি দেখে খুব আনন্দ পায় এবং অনেকে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়ে। আর তখনই আমরা ২০১৭ সালের আগে ও পরে—এই ভাবে দুটি মুহূর্তকে ধরার চেষ্টা করি। ছবিতে যে চারজনকে দেখা যাচ্ছে, তারা হলেন—আয়েশা আহমেদ, রোকেয়া আহমেদ, রশিদা আহমেদ এবং শাহানারা আহমেদ।”