কাশ্মীরে বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের নয়া মোড় স্বীকার করল সৌরা’র অস্থিরতা
ভারতের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক স্বীকার করে শ্রীনগরের সৌরাতে বিক্ষোভ হয়েছিল ৯ অগস্ট। সেখানে কোনও গুলি চালানো হয়নি। বুমের একটি মুক্ত সূত্রে অনুসন্ধান যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যেমের কভারেজকে সমর্থন করে।
ভারতের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার টুইট করে স্বীকার করেছেন শ্রীনগরের সৌরা’য় ৯ অগস্ট ২০১৯ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছিল। সরকারের তরফে একদিন পরে একথা স্বীকার করা হয়, যখন ওই ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই সরকারী বিভিন্ন দপ্তর এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে।
বিবিসি, রয়টর্স ও আলজাজিরা সহ অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তিরস্কারের সম্মুখীন হয়, উপত্যকার ওই বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে তুলে ধরার জন্য। ৫ অগস্ট ৩৭০ ধারা ও ৩৫-এ ধারা রদের ফলে ওই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ৯ অগস্ট সামিল হয় উপত্যকা।
মন্ত্রালয়ের যাচাইকরা টুইটার হ্যান্ডেল @পিআইবিহোমঅ্যাফায়ার্স শুক্রবার(৯ অগস্ট,২০১৯) টুইটে লেখে স্থানীয় মসজিদে প্রর্থনার পর মানুষদের ফেরার পথে ‘দুর্বৃত্তরা’ তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে অস্থিরতার সূত্রপাত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র আরও বলেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রন ও সংযম বজায় রেখে বুলেট ছোঁড়া থেকে বিরত থাকে।
যদিও ওই টুইটিতে বলা নেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলতে (পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী) কারা ওই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন এবং কাঁদানে গ্যাস অথবা পেলেট বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা।
শুক্রবার (৯ অগস্ট, ২০১৯) কারফিউ শিথিল করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছিল।
জম্মুর পাশাপাশি উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশে ইন্টারনেট ও দূরভাষ সংযোগ ছিল কার্যত বিচ্ছিন্ন।
ইকোনমিক্স টাইমস প্রতিবেদনে লেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় ওই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অসম্পাদিত ফুটেজ তলব করেছে বিবিসি ও আলজাজিরা কাছ থেকে।
১০ অগস্ট, ২০১৯ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ টুইট করে, ‘‘জনগণ উপত্যকায় গুলি চালানোর ঘটনার ব্যাপারে ভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্য প্রণদিত খবরে বিশ্বাস করবেন না।’’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৬ দিন ধরে একটিও গুলি চালায়নি।’’
ওই একই দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের মুখপাত্র জানান দশ হাজার মানুষের শ্রীনগরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ব্যাপারে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অসত্য ও মনগড়া।
রয়টার্স
৯ অগস্ট রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় পুলিশ শ্রীনগরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে কাঁদানে গ্যাস ও পেলেট ব্যবহার করে। (কাশ্মীরের নয়া অবস্থা নিয়ে হাজার বিক্ষোভকারীরা দমন উপেক্ষা করে)
‘‘একজন পুলিশ জানিয়েছে, শ্রীনগরের সৌরা এলাকায় চার জনের বেশি জমায়েতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে, আইন ভেঙে সংখ্যায় অনেক লোকজন সমবেত হয়েছিল।’’ রয়টর্স তার প্রতিবেদনে বলে।
অনামী পুলিশ অধিকারিক বলেন দশ হাজার প্রতিবাদী সমবেত হয়েছিল।
বুম স্বাধীনভাবে ওই মিছিলের আকার যাচাই করতে না পারেলও ছবি ও ভিডিওতে বেশ বড় আকারের ভীড়ই লক্ষ করা যায়।
বিবিসি
এক্ষেত্রে বিবিসিও কাশ্মীরের কভারেজ নিয়ে তোপের মুখে পড়ে। হইচইয়ের অলিন্দে একটি ভিডিও যেটি টুইট করেন বিবিসির দক্ষিন এশিয়া মুখ্য ব্যুরো।
২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের বিক্ষোভের ভিডিও শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের দৃশ্য ও আড়াল খুঁজতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। নেপথ্যে শোনা যায় গুলি চালানোর শব্দ। কোনও নিরাপত্তা অধিকারিককে অবশ্য ফ্রেমে দেখতে পাওয়া যায়না। কিছু বিক্ষোভকারী হাতে লাঠি নিয়ে উদয় হয়। এটা স্পষ্ট নয় কে গুলি চালানোর জন্য দায়ী।
ভিডিওটিতে আরও দেখা যায় সংখ্যায় বেশ অনেক প্রতিবাদী পদযাত্রা করে বাজার চত্বর দিয়ে যায়।
অন্য একটি দৃশ্যে দেখা যায় প্রতিবাদীর একটি সাদা ব্যানার ধরে আছে। যেখানে লেখা ‘‘৩৭০ ধারার বিলুপ্তি আমাদের জন্য গ্রহনযোগ্য নয় জম্মু কাশ্মীর।’’
তবে, ভারত সরকারের সমর্থকরা ওই একই ভিডিও থেকে অংশ নিয়ে তুলে ধরে বলছেন এটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তোলা ভিডিও। তার স্বপক্ষে দাবি করছেন, প্রতিবাদীরা পাকিস্তানের পতাকা, স্বাধীন কাশ্মীরের পতাকা, এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ-এ-মহাম্মদ এবং মৃত জঙ্গী জাকির মুসার পোস্টার নিয়ে আছে।
অতঃপর সংশ্লিষ্ট সংস্থা তার কাশ্মীর কভারেজের পক্ষে সওয়াল করে।
আলজাজিরা
কাতারি গণমাধ্যম আলজাজিরাও কাশ্মীর নিয়ে তাদের রিপোর্টং নিয়ে রোষানলে পড়ে। ৯ অগস্ট ওই সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে শ্রীনগরে ভারতীয় সেনা পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে।
আলজাজিরার দিল্লির সংবাদদাতা বলেন বিক্ষোভকারীরা সরাসরি গুলি, কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার আস্তারনের ইস্পাত গুলির সম্মুখীন হয়। (ভিডিওটি নীচে দেখুন)
এই লিঙ্কের দৃশ্যেও বিবিসির ভিডিওটির সঙ্গে সদৃশ্যে রয়েছে।
বুম ভিডিওগুলির ব্যাপারে দুদিন আগে বিবিসি এবং আলজাজিরার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময়ে পর্যন্ত কোনও প্রত্যুত্তর পায়নি।
যদিও, বুম মুক্ত সূত্রের তথ্য ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে দুটি সংবাদমাধ্যমের বিক্ষোভের ভিডিওগুলির ভৌগলিক-স্থান খুঁজে পেয়েছে এবং যাচাই করেছে দৃশ্যগুলি পুরনো নয়।
বুম অ্যাসোসিয়েট প্রেস(এপি)-এর ফটো আর্কাইভে ৯ অগস্ট, ২০১৯ তোলা ছবির ফ্রেমের সঙ্গে বিবিসি ও আলজাজিরার ভিডিও মিলে যেতে দেখে।
বিবিসির ভিডিওর স্ক্রিনশট।
এপি’র আর্কাইভের অন্য একটি ছবি দেখায় একই দোকানের কোন যা আলজাজিরার ভিডিওতে দৃশ্যমান।
প্রতিবাদের ভৌগলিক স্থান
কোথায় ভিডিওগুলি তোলা হয়েছে তার স্থান যাচাই করতে উল্লেখযোগ্য এবং স্বতন্ত্র জায়গাগুলি আমরা দেখেছিলাম।
বুম পেয়েছে একটি মসজিদের অংশ (সবুজ গম্বুজ, দুটো সাদা ও সবুজ মিনার) যা বিবিসি এবং আলজাজিরার ভিডিওতে দৃষ্টিগোচর হয়।
আমরা প্রথমে শ্রীনগরের সৌরার মসজিদ দেখি যা দেখতে একই রকম যা হুবহু শ্রীনগর, সৌরার আনচারের জেনাব সাহেব মসজিদের সঙ্গে মেলে।
আমরা গুগুল ম্যাপে ওই মসজিদটাকে খুঁজে পায়।
নীচের মসজিদের ছবিটি ২০১৯ সালের মে মাসে এক ব্যবহারকারী আপলোড করে।
ওই মসজিদটির এক ঝলক অন্য একটি আলজাজিরার ভিডিওতে দেখা যেতে পারে। যা ইউটিউবে ১০ অগস্ট আপলোড করা হয়েছিল। (২৭ সেকেন্ড জায়গায় দেখুন) এটা অবশ্য স্পষ্ট নয় কবে ওই ভিডিওটি তোলা হয়েছিল।