করোনাভাইরাসের লক্ষণ, জরুরি ফোন নম্বর এবং প্রতিষেধক সম্পর্কে যে ৫টি বিষয় জানা জরুরি
বুম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল, হেল্পলাইন নম্বর এবং করোনাভাইরাসের টিকা সম্পর্কে পাঁচটি জ্ঞাতব্য বিষয়ের তালিকা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনাভাইরাস জনিত কোভিড-১৯-কে আন্তর্জাতিক অতি-মারী বলে ঘোষণা করার কয়েকদিনের মধ্যেই ভারত সরকার শনিবার ৮৯ জনের দেহে এই জীবাণুর সংক্রমণের কথা জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হিসাবে কেরালাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ১৯ জন এই রোগে আক্রান্ত। ভিসা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদেশিদের ভারতে আগমন ও যাতায়াতের উপর স্বেচ্ছা-নিয়ন্ত্রণ চালু করার পরে এই পরিসংখ্যান সামনে এসেছে।
ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্র রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে মিলে সচেষ্ট হয়েছে। সারা দেশে ৫২টি পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বরও প্রচার করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে বুম পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে।
১) পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত পরামর্শ:
কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি অবলম্বন করতে বলেছে।
তাদের নির্দেশিকাটি পড়ে নিতে পারেন এখানে।
২) কখন স্বেচ্ছা-অন্তরীণ থাকবেন
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক স্বেচ্ছা-অন্তরীণে যাওয়ার নিম্নলিখিত শর্তগুলি জারি করেছে:
ক) কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে একই বাড়িতে থাকা লোকজন
খ) বিমান-যাত্রার সময় বা অন্য কোনও ভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজন
যে সব দেশে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ খুব বেশি হয়েছে, সেই সব দেশে যাতায়াত করা লোকেদেরও স্বেচ্ছা-অন্তরীণে থাকার কথা মন্ত্রক একটি প্রেস-বিবৃতি মারফত জানায় ১০ মার্চ। তাতে বলা হয়, যারা চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, ইতালি, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন প্রভৃতি দেশে যাওয়া-আসা করেছেন, তাঁরা ভারতে পৌঁছনর পরেই ১৪ দিন স্বেচ্ছা-অন্তরীণে থাকবেন। আর সেই সময়পর্বে তাঁরা যেন বাড়িতে থেকেই অফিসের কাজকর্ম চালাতে পারেন,তাঁদের নিয়োগকর্তাদেরই সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এই নির্দেশিকাটি দেখুন এখানে।
৩) কোথায় খবর দিতে হবে
কোভিড-১৯-এর লক্ষণগুলি অর্থাৎ গলা-ব্যথা, জ্বর, কাশি, সর্দি ও গায়ে-হাতে যন্ত্রণা দেখা দিলে কিংবা কোনও চিকিৎসক পরামর্শ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হেল্পলাইনের নম্বরগুলি হল: ১৮০০ ৩১৩ ২২২/০৩৩ ২৩৪১ ২৬০০
এ জন্য নীচে দেওয়া ড্যাশবোর্ডটির সাহায্য নিতে পারেন।
৪) পরীক্ষা করার জন্য কোথায় যেতে হবে
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে কিংবা কোভিড-১৯ আক্রান্ত পূর্বোক্ত দেশগুলি থেকে ভারতে এলে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) নির্ধারিত ৫২টি পরীক্ষাকেন্দ্রের যে-কোনও একটিতে যেতে হবে।
ওই হাসপাতাল ও পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেখুন এখানে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে নাইসেড, বেলেঘাটা ও এসএসকেএম হাসপাতাল। এছাড়া বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে প্রস্তুত করা হয়েছে পৃথক আইসোলেশান বিভাগ। (এ রাজ্যের করোনা সম্পর্কিত সব তথ্য জানতে নজর রাখুন স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে)
৫) কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক টিকা কি তৈরি হওয়ার মুখে
বুম এর আগে অন্তত দুটি দেশের কথা জানিয়েছে, যারা এই প্রতিষেধক বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে—ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইজরায়েলের গবেষণা সংস্থা মিগাল (MIGAL) জানিয়েছে, তারা ৩ সপ্তাহের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বানিয়ে ফেলবে, কিন্তু সেটিকে সারা বিশ্ব জুড়ে প্রয়োগ করতে গেলে সরকারি অনুমোদন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অপরিহার্য। তার পরেই সেটি মানুষের শরীর প্রবেশ করিয়ে ফলাফল পরীক্ষা করা সম্ভব, যার জন্য আরও তিন মাস সময় দরকার। অর্থাৎ প্রতিষেধক তৈরির ব্যাপারটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই।
সান দিয়েগোর ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যাল্স প্রতিষেধক টিকার একটি অ্যালগোরিদম তৈরি করেছে এবং টিকাটি ইঁদুর ও গিনিপিগের উপর পরীক্ষা করেছে, কিন্তু মানবশরীরে তার প্রতিক্রিয়া পরখ করতে গেলে মার্কিন এফডিএ-র আগাম অনুমতি দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাদের একটি পোস্টারে জানিয়েছে, এই ভাইরাসের কোনও চিকিৎসা নেই।
তবে ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পর্ষদ (আইসিএমআর) রাজস্থান সরকারকে অনুমতি দিয়েছে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা এক ইতালীয় দম্পতির উপর পরীক্ষামূলকভাবে এইচআইভি প্রতিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করে দেখতে।