মাস্ক কি ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে? একটি তথ্য যাচাই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে সম্প্রতি যে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে, মাস্ক দিয়ে তার সম্পূর্ণ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
সম্প্রতি মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ মহিন্দ্রা একটি টুইট করেছেন, যাতে তিনি দাবি করেছেন যে তিনি এমন একটি মাস্ক উপহার পেয়েছেন যা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। এই দাবি একেবারেই মিথ্যে। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন তাঁর এই টুইটের সমালোচনা করেছেন, কারণ কোনও মাস্ক এই ধরনের ভাইরাস মারতে পারে, তার কোনও প্রমাণ এখনও নেই।
মহিন্দ্রার টুইটে একটি এন-৯৫ মাস্কের ছবি ছিল। মাস্কটি উপহার দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর এক বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের একটি ধরন কোভিড ১৯ ঘিরে ইদানীং প্রবল উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৫৮টি দেশ আক্রান্ত, এবং এর ফলে বহু মানুষ নিয়মিত মাস্ক পরছেন। এবং তাতে যাঁরা মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। মাস্কের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে মাস্ক কোনও ভাইরাস মারতে পারে না। যাঁদের মধ্যে অসুস্থতার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, অথবা যাঁরা অসুস্থদের সেবাযত্ন করছেন, একমাত্র তাঁদেরই এই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
এই মাস্ককে পরিষ্কার করা যায়, এটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং এটি 'ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে', টুইটারে এই কথা লিখে তোপের মুখে পড়েছেন আনন্দ মহিন্দ্রা। লিভিংগার্ড নামের এক সংস্থা এই মাস্ক তৈরি করছে। সংস্থার অন্যতম বোর্ড সদস্য অশোক কুরিয়েন এই "দূষণ প্রতিরোধকারী" এন-৯৫ মাস্ক মহিন্দ্রাকে উপহার দিয়েছেন।
🙏🏽🙏🏽🙏🏽 to my friend Ashok Kurien, who sent me the best gift for these times! Proud to learn that an Indian inventor's Swiss company has come out with these washable,reusable masks that destroy viruses. They're stepping up production in India. https://t.co/uZv23cAM7j pic.twitter.com/YFawmDhvcY
— anand mahindra (@anandmahindra) March 13, 2020
মহিন্দ্রা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়, তাঁকে এ রকম সংবাদ প্রচার না করতে অনুরোধ করেন টুইটার ব্যবহারকারীরা।
Mr. Mahindra No mask that we know of can "destroy the virus" as you have written in your post. Kindly correct this ASAP since you are a public personality. All masks only assist in personal protection from air borne infection.
— M (@pseudo_sapiens) March 13, 2020
তথ্য যাচাই
এই মাস্ক ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে বলে মহিন্দ্রা যে দাবি করেছেন তার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মত অনুসারে, মাস্কের মুখ্য উদ্দেশ হল জীবাণুকে মাস্কের ফিল্টার দিয়ে ঢুকতে না দেওয়া। মহিন্দ্রাকে যে মুখোশ দেওয়া হয়েছে, বুম সেটিকে ভাল করে লক্ষ্য করে এবং দেখতে পায় যে সেটি এন৯৫ মাস্ক, লিভিংগার্ড-এর তৈরি। এই সংস্থা বায়ুদূষণ প্রতিরোধকারী মাস্ক তৈরি করে। যেহেতু সেই মাস্কগুলি বিভিন্ন বায়ুকণার মাপ অনুসারে তৈরি, তাই সেগুলি বিভিন্ন গোত্রের দূষণকারী পদার্থ প্রতিরোধে কার্যকর।
ওয়েবসাইটে পরিষ্কার ভাবে বলা আছে এই মুখোশ ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক ফিল্টার আটকাতে সাহায্য করে এখানে ভাইরাসের প্রসঙ্গে কিছু বলা নেই।
তাদের মেডিক্যাল টেক্সটাইলে এই কোম্পানীটি স্ক্রাব এবং কাপড় তৈরী করে কিন্তু মাস্কের ব্যাপারে সেখানে কোনও উল্লেখ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে যে কোনও সুস্থ মানুষের এই মাস্ক পরার প্রয়োজন তখনই হতে পারে, যখন তিনি কোনও কোভিড-১৯ আক্রান্তের দেখভাল করছেন। যে সব মানুষের সর্দি, কাশি বা হাঁচি হচ্ছে, তাঁরা এই মাস্ক পরতে পারেন। মাস্ক ভাইরাস মারতে পারে, এ রকম কোনও প্রমাণ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে যে মাস্ক তখনই কার্যকর হবে, যখন সেই মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড রাব বা সাবান এবং জল দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোওয়া হবে। যাঁরা মাস্ক পরছেন, মাস্ক কী ভাবে পরতে হয়, এবং কী ভাবে ফেলতে হয়, সেটাও তাঁদের জানা প্রয়োজন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত।
কোভিড-১৯ বিভিন্ন জিনিসের উপর পড়ে থাকা ড্রপলেট থেকে ছড়ায়। যদি মাস্ক না পরা কোনও অসুস্থ মানুষ কারও কাছাকাছি হাঁচেন বা কাশেন, তা হলে ওই ড্রপলেট যিনি মাস্ক পরে আছেন, তাঁর মুখোশের উপরও পড়তে পারে। তার পর ওই ব্যক্তি যদি ওই মাস্কে হাত দেন এবং সেইসঙ্গে নিজের মুখে হাত দেন ভাইরাসটি ওই ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বহু সংবাদসংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মানুষ প্রচুর মাস্ক কেনার ফলে কী ভাবে এই মাস্কের দাম বেড়ে চলেছে। ইকনমিক টাইমস জানিয়েছে, যে সার্জিকাল মাস্কের দাম ছিল ১০ টাকা, সেগুলি ৪০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এন-৯৫ মাস্ক, যেগুলির দাম ১৫০ টাকা, সেগুলি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই মাস্ক আর স্যানিটাইজার মজুত করছেন।
পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারত সরকার এগুলিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে।