ডেটল কি আগে থেকেই করোনাভাইরাস প্রাদূর্ভাবের কথা জানতো? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে ডেটলে সাঁটা লেবেলে করোনাভাইরাসের অন্য পুরনো স্টেইনের উল্লেখ রয়েছে, চিনে যে নয়া (novel) করোনাভাইরাসের (২০১৯এন-কোভ) মহামারী দেখা দিয়েছে, তার উল্লেখ নেই।
জীবাণুনাশক ডেটলের গায়ে সাঁটা লেবেলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তার কার্যকারিতার উল্লেখের একটি ছবি ভাইরাল করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন নেটিজেন সেই ছবি পোস্ট করে অনলাইনে জানতে চেয়েছেন, কী করে ডেটল কোম্পানি আগে থেকেই জানতে পেরেছিল করোনাভাইরাসের কথা, যেটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাদূর্ভূত হয়েছে? দাবিটি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিমূলক।
করোনাভাইরাস একটি বৃহৎ ভাইরাস পরিবার সম্পর্কে ব্যবহৃত একটা সামগ্রিক পরিভাষা, যেটা স্তন্যপায়ী এবং মানুষদের সংক্রামিত করে। চিনের উহান প্রদেশে যে ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ইতিমধ্যেই ১,০১৬ জনের বেশি মানুষের প্রাণ সংহার করেছে। ( বর্তমান তথ্য দেখুন জনহপকিন্সে)
উপরন্তু বুম ডেটল প্রস্তুতকারক বহুজাতিক সংস্থা ব্রিটেনের রেকেট বেনকিসার-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যারা জানিয়েছে যে, ডেটল-কে এখনও তারা এই নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে পরীক্ষা করার সুযোগ পায়নি, যেহেতু এই ভাইরাসটির নমুনা তারা এখনও সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি। তবে তাদের ধারণা এই নয়া করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক রূপেও ডেটল কার্যকরী হতে পারে।
ডেটল একটি অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ, যেটি ত্বকের জীবাণু নাশে এবং যে-কোনও ধরনের ব্যাকটিরিয়া কিংবা বীজাণু মারার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ডেটলের লেবেলে লেখা "মানুষের করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলে" এবং "মানুষের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর" এই কথাগুলি ভাইরাল হওয়া ছবিতে বড়ো করে তুলে ধরা হয়েছে। ছবির সঙ্গে ক্যাপশন: "২০১৯ সালের অক্টোবরে করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের আগেই এটা তৈরি হয়েছে। কী করে ডেটল আগাম জানতে পারলো এই ভাইরাসের কথা?"
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সারা বিশ্ব জুড়েই ফেসবুকে বিষয়টা ভাইরাল হয়েছে। বুম-ও তার হোয়াটস্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে এই বার্তাটি পেয়েছে, যেখানে এর সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ এসেছে।মিথ্যা: ব্রয়লার মুরগিতে করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে
তথ্য যাচাই
করোনাভাইরাস একটি বিশেষ ভাইরাস পরিবার, যা মানুষ ও স্তন্যপায়ীদের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণ বায়ুবাহিত অর্থাৎ নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়েই এটা শরীরে প্রবেশ করে। সাম্প্রতিক এন-কোভ ভাইরাসটি এক নতুন ধরনের করোনাভাইরাস, যার জিনগত কাঠামো অন্যান্য করোনাভাইরাসেরই মতো, কিন্তু যার উত্স এখনও অজানাl গবেষকরা অনলাইনে এই ভাইরাসটির জিনগত কাঠামোর চিত্র তুলে ধরেছেন।
একটি ই-মেল বিবৃতিতে ডেটল কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের এই ওষুধ অন্যান্য সব করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শতকরা ৯৯ ভাগ কার্যকরl কিন্তু নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হবে, বলা কঠিন, কারণ তারা এখনও সেটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেনি।
"করোনাভাইরাস ২০১৯ এন-কোভ একটি নতুন ধরনের ভাইরাস, তাই এটির ক্ষেত্রে এখনও ডেটলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে আমরা আমাদের সহযোগীদের সঙ্গে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি, এই ভাইরাসটির নমুনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আমাদের নাগালে এনে দিলেই আমরা সেটির বিরুদ্ধে ডেটলের কার্যকারিতা যাচাই করে দেখতে পারব। ইতিপূর্বে করোনাভাইরাসের যে সব ধরন আমাদের নাগালে এসেছে (এসএআরএস-কোভ, এমইআরএস-কোভ কিংবা মানুষের করোনাভাইরাস), সেগুলির সঙ্গে ২০১৯এন-কোভ-এর যে জিনগত কাঠামোর সাদৃশ্য রয়েছে, তাতে আমরা মনে করছি, এটির বিরুদ্ধেও ডেটল কার্যকর প্রতিপন্ন হবে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যে নীতিনির্দেশ জারি করেছে, তাতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, বিশেষ করে সাবান কিংবা অ্যালকোহল ভিত্তিক কোনও জীবাণুনাশক দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার কথা বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকার ভিত্তিতে যে সব দেশে ডেটল বিক্রি হয়, সেখানে কোম্পানি সচেতনতা বাড়াবার উদ্দেশ্যে একটি পোস্টার তৈরি করেছে।