শরীর স্বাস্থ্য
ভারতে কোভিড-১৯ পুনরায় সংক্রমণের নজির সীমিত: হু'র ভারতীয় প্রতিনিধি
বুম কোভিড-১৯ পুনরায় সংক্রমণের ব্যাপারে বুঝতে ভারতে হু'র নব নিযুক্ত প্রতিনিধি ডাঃ রডেরিকো অফ্রিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
২৪ অগস্ট ২০২০, হংকং থেকে প্রথম কোভিড-১৯ পুনরায় সংক্রমণের তথ্যনির্ভর খবর আসে। তার ফলে, নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে এসেছে। বিজ্ঞনীরা ৩৩ বছর বয়সী এক রোগীর জিনম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করার পরই অসুখটিকে কোভিড-১৯'র পুনরায় সংক্রমণ বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু বিশ্বের নানা সংবাদ মাধ্যম পরিভাষাটিকে খুব আলগাভাবে ব্যবহার করছে।
এসএআরএস-কভ-২ বা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর আবারও পজিটিভ প্রমাণিত হতে পারেন যে কোনও ব্যক্তি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু বলেছে যে, পরীক্ষা করে দেখতে হবে সংক্রমণটি আবার নতুন করে হল, নাকি আগের সংক্রমণের রেশ থেকেই অসুখটি আবার দেখা দিল। যদি কোনও ব্যক্তি আবার অসুস্থ হন এবং দেখা যায় এবার তিনি নভেল করোনাভাইরাসের এক নতুন প্রজাতির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তবেই সেটিকে পুনঃসংক্রমণ বলে চিহ্নিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আরও বলেছেন যে, ভাইরাসটির চরিত্র পরিবর্তনের ফলে পুনঃসংক্রমণ ঘটতে পারে। কিন্তু তার কারণে, কোভিড-১৯'র বিরুদ্ধে যে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলেছে তা ব্যাহত হবে না।
পুনরায় সংক্রমণ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু'র চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য ভারতে নিযুক্ত ওই সংস্থার প্রতিনিধি ডাঃ রডেরিকো অফ্রিন-এর সঙ্গে কথা বলে বুম। আগের প্রতিনিধি ডাঃ হেঙ্ক বেকেডেম অবসর নিলে, ডাঃ অফ্রিন সম্প্রতি এখানে কার্যভার গ্রহণ করেন। এর আগে উনি ১১টি দেশ সম্বলিত হু'র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের রিজিওনাল এমার্জেন্সির ডিরেক্টর ছিলেন।
ডাঃ অফ্রিন 'রেকারেন্স' বা পুনরায় দেখা দেওয়া ও 'রিইনফেক্সান' বা পুনরায় সংক্রমণ মধ্যে পার্থক্যটা বুঝিয়ে বলেন। তিনি এও বলেন যে, মানুষ এসএআরএস-কভ-২'র দ্বারা নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন, এই দাবি সমর্থন করার মতো প্রমাণ নেই। ওনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে যে, পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে হু বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং সে বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
পুনঃসংক্রমণ কি? পুনঃসংক্রমণের সংজ্ঞা এবং তার নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে কি হু কোনও নির্দেশাবলি ঘোষণা করেছে?
ডাঃ অফ্রিন: কোনও ব্যক্তি যদি সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন কিন্তু অসুখটি আবার ফিরে আসে, তা হলে আমরা রোগের ওই ফিরে আসাকে 'রেকারেন্স' বলে থাকি। পুনঃসংক্রমণের ফলেও রেকারেন্স হতে পারে। সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তি আবার সংক্রমিত হতে পারেন কিনা, এ বিষয়ে তথ্য এখনও পর্যন্ত খুবই সীমিত।
অসুখটি পুনরায় দেখা দিলে, সেটিকে পুনঃসংক্রণ বলার আগে গবেষণা ও ভাইরাসটির জিনের গঠন বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছন ও গাইডলাইন দেওয়ার আগে, ওই ধরনের কেসগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। ভাইরাসটি সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা ও অতিমারিটির গতিপ্রকৃতিও এখনও বেশ গতিশীল। তাই যা-যা করলে ভাইরাসটিকে ঠেকান যায় বলে আমরা জানি, সেই সবই করে যাওয়া উচিৎ। যেমন, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। এমনকি যাঁরা সেরে উঠেছেন, তাঁদেরও এই সাবধানতাগুলি অবলম্বন করা উচিৎ।
পুনঃসংক্রমণের পেছনে বিজ্ঞানটা কি?
ডাঃ অফ্রিন: গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা কোভিড-১৯ দ্বারা হাল্কা ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন, যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তাঁদের কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি, বা যাঁরা বেশ ঘোরতর ভাবে সংক্রমিত হয়েও ভাল হয়ে উঠেছেন, তাঁদের শরীরে একটা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই প্রতিরোধ কতটা শক্তিশালী বা তা কত দিন স্থায়ী হবে, তা এখনও জানা যায়নি। মানুষকে সংক্রমিত করে এমন অন্যান্য করোনাভারইরাস বা বিভিন্ন অন্য অসুখের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার ক্ষমতা আসতে আসতে কমে যায় এবং পুনঃসংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
কি করে পুনঃসংক্রমণ ঘটে?
ডাঃ অফ্রিন: অনেক সংক্রামক অসুখের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একবার সংক্রমিত হয়ে ভাল হয়ে ওঠার পর কেউ যদি আবার সেই জীবাণুর সম্মুখীন হয়, তাহলে নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় যদি তাঁর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিহীন হয়ে গিয়ে থাকে বা যদি প্রথমবার সংক্রমিত হওয়ার সময় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তেমন ভাবে না গড়ে উঠে থাকে।
তবে কোভিড-১৯'র ক্ষেত্রে পুনঃসংক্রমণ আদৌ হয় কিনা এবং হলে, কি ভাবে হয়, তা বোঝার জন্য এখনও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
বিশ্বের কোন কোন দেশ পুনঃসংক্রমণের কথা জানিয়েছে? এবং, হু-এর মতে, ভারতে কি পুনঃসংক্রমণের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে?
ডাঃ অফ্রিন: বিষয়টা এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই বিশ্বে বা ভারতে এমনটা ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানেই জিন সিকোয়েন্সিং করে পুনঃসংক্রমণ চিহ্নিত করতে হবে। সেই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য এবং সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরের প্রতিরোধ শক্তি ও সেই শক্তি কত দিন স্থায়ী হচ্ছে, এই দুই তথ্যের আলোয় আমরা বিষয়টি আরও ভালো বুঝতে পারব। এই ভাইরাসটি ও তার বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা এখনও জানছি।
পুনঃসংক্রমণ ঠেকাতে কি করা উচিৎ?
ডাঃ অফ্রিন: প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা গড়ে ওঠে ও তা কত দিন স্থায়ী হয়, তা আমরা এখনও পুরোপুরি জানতে পারিনি। তাই যাঁরা সেরে উঠেছেন তাঁদেরও সাবধানতার জন্য মাস্ক পরা. হাত ধোয়া ও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিৎ।
Next Story