করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বেরিয়ে গেছে দাবিটি মিথ্যে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাক্সিন এখনও নেই আর অন্তত ১৮ মাসের আগে তা বাজারে আসার সম্ভাবনাও নেই।
ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু দাবিটি বিভ্রান্তিকর, কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক এখনও নেই এবং তা বাজারে আসতে অন্তত ১৮ মাস সময় লাগবে।
গত সপ্তাহে, বুমের কাছে একাধিক বার্তা আসে যেখানে দাবি করা হয় যে, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যান দিয়েগোর একটি গবেষণাগার করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক বার করে ফেলেছে।
দাবিগুলিকে মোটামুটি এই ভাবে ভাগ করা যেতে পারে:
১. ইজরায়েলের একটি ল্যাবরেটারিতে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক বার করা হয়েছে।
২. তিন ঘন্টার মধ্যে স্যান দিয়েগোর একটি ল্যাবরেটারি কোভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিন বার করে ফেলে।
বুম তথ্য যাচাই করে দেখাবে যে কেন এই দাবিগুলি মিথ্যে।
তথ্য যাচাই
ভ্যাক্সিন তৈরি করার জন্য বেশ কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এমনকি সক্ষম ভাইরাসের ক্ষতি করার সময় কমিয়ে আনতে হয় তবে প্রতিষেধকটি শরীরের পক্ষে সহনশীল হয়।
দাবি: ইজরায়েল ভ্যাক্সিন তৈরি করে ফেলেছে
তথ্য: ইজরায়েলের মিগাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরি করার কাজ তারা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফেসবুক পোস্টে "করোনাভাইরাস ভ্যাক্সিন" লেখা একটি শিশির ছবি বিভ্রান্তিকর। সেটি একটি ফোটো সংগ্রাহক ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছ।
ইজরায়েলের মিগাল (MIGAL) রিসার্চ ইনস্টিটিউট পাখিকে আক্রান্ত করে যে করোনাভাইরাস সেই 'ইনফেকসিয়াস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস'-এর ভ্যাক্সিন তৈরি করে। সেই প্রতিষেধক মুরগিদের দেওয়া হয়, মানবাদেহের উপযোগী নয়।
মিগাল দেখেছে যে, মুরগির করোনাভাইরাস আর মানুষকে আক্রমণ করে যে কোভিড-১৮ ভাইরাস, তাদের জিনের মধ্যে বিস্তর মিল আছে। এবং ওই দুই ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটনার ক্ষেত্রে একই উপায় অবলম্বন করে। তার ফলে মানুষের পক্ষে উপযুক্ত প্রতিষেধক খুব তাড়াতাড়ি তৈরি করা যাবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
মেগাল জানিয়েছে যে, তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা ওই ভ্যাক্সিন তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে। তারপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য দিতে হবে আরও তিন মাস। তারপরও আরও বেশ কিছু সময় লাগবে ভ্যাক্সিনটিকে মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখতে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে সেটিকে বিশ্ব বাজারে নিয়ে আসতে। তাই ভ্যাক্সিনটি এখন প্রস্তুতির প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে।
দাবি: স্যান দিয়েগোর একটি ল্যাবেরেটারি ভ্যক্সিন তেরি করেছে
তথ্য: চিনা বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির নমুনা দিলে, স্যান দিয়েগোর ওই ল্যাব তিন ঘন্টার মধ্যে একটি অ্যালগরিদিম তৈরি করে ফেলে।
সোরেন্টো ভ্যালিতে অবস্থিত ইনোভিও ফারমাসিউটিক্যালস আগে জিকা ভাইরাস, মিডিল ইস্ট রেস্পিরেটারি সিন্ড্রোম (এমইআরএস) ও ইবোলা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরি করেছে।
"আমরা একটা অ্যালগরিদিম তৈরি করেছি। আর সেই অ্যালগরিদিমের মধ্যে আমরা ডিএনএ ক্রমটি বসিয়ে দিই। তার ফলে, ওই কম সময়ের মধ্যেই ভ্যাক্সিনের গঠনটি আমরা পেয়ে যাই" বলেন ওই কম্পানির ডিরেক্টর ডঃ ট্রেভর স্মিথ। তাঁর কথা উদ্ধৃত করে খবরটি দেয় স্যান দিয়েগোর সংবাদ মাধ্যম সিবিএসবি নিউজ।
অ্যালগরিদিমটি হল ভ্যাকসিনের গঠনের রূপরেখা, আসল ভ্যাক্সিন নয়। ভ্যাক্সিন তৈরি করতে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর নানান অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ইঁদুর আর গিনিপিগের ওপর ভ্যাক্সিনটির পরীক্ষা চলছে। এর পর পরীক্ষা চলবে মানুষের ওপর। কিন্তু মানুষের ওপর পরীক্ষা করার ছাড়পত্র এখনও দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ।
মানুষের ওপর পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরতে হয়। এবং কার্যকরী হচ্ছে প্রমাণিত হলে তবেই তা জনসাধারণের মধ্যে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
এব্যাপারে গবেষণা চলছে, কিন্তু ভ্যাক্সিনগুলি তৈরি হতে এখনও সময় লাগবে।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, এই মুহূর্তে কোভিড-১৯-এর সরাসরি কোনও চিকিৎসা নেই। যাঁরা সেরে উঠছেন, তাঁদের শরীরের অটুট প্রতিরোধ শক্তির জোরেই তা সম্ভব হচ্ছে। রোগীদের সারিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশ নানান ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছে।
ইন্ডিয়ান কাউনসিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এসএমএস হসপিটালে ভর্তি এক ইতালীয় দম্পতির ওপর এইচআইভি-র ওষুধ প্রয়োগ করার অনুমতি দেয় রাজস্থান সরকারকে। শ্বাসকষ্ট জনিত অসুবিধায় ভুগছিলেন ওই দম্পতি; ওই সংক্রমণ প্রশমনে তাই সংশ্লিষ্ট ড্রাগগুলি তাদের খাওয়ান হয়েছিল।
"লোপিনাভির আর রিটনাভির খাওয়ানর সিদ্ধান্ত স্থানীয় ভাবে নেওয়া হয়। তারা এটিকে ভয়ানক এক অসুখ মনে করে ওই ওষুধগুলি খাওয়ান। তবে এ থেকে আমাদের কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবে না। কারণ, একজন মাত্র রোগীর ওপর পরীক্ষা সব তথ্য সামনে নিয়ে আসে না। তার জন্য চাই পরিকল্পিত গবেষণা," আইসিএমআর-এর মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের ডিরেক্টর রমন গঙ্গাখেদকর এ কথা বলেন সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে।
আশার কথা, এই ড্রাগগুলি ব্যবহারের পর তাদের দেহে আরও দুবার কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয় যার ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে, এখবর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাজস্থানের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিব রহিত কুমার সিং।
আরও পড়ুন: হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে? একটি তথ্য যাচাই