আমেরিকায় হাইতি উদ্বাস্তু শিবিরের ছবি ছড়ালো কলকাতার ডিটেনশন কেন্দ্র বলে
বুম যাচাই করে দেখেছে আমেরিকায় হাইতি উদবাস্তুদের ডিটেনশন ক্যম্পের এই ছবিটি ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।
আমেরিকাতে আশ্রয় চাওয়া হাইতি উদ্বাস্তুদের নৌ শিবিরে আটক রাখার পুরনো ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সেটি পশ্চিমবঙ্গে নির্মীয়মান ডিটেনশন ক্যাম্পের ছবি। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে সার সার অস্থায়ী তাবু দেখা যাচ্ছে।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ‘‘দিদিমণির হাত ধরে চলছে বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ। তা-ও আবার উত্তর চব্বিশ পরগনার রাজারহাটের নিউটাউনে। বঙ্গবাসী বুঝুন কে বিজেপি কে তৃনমুল। যেখানে ঘাস, সেখানেই গরু।’’
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে খুঁজে পেয়েছে মূল ছবিটি। ছবিটি পশ্চিমবঙ্গে নির্মীয়মান কোনও ডিটেনশন ক্যাম্পের ছবি নয়।
গেটি ইমেজ-এ এই ছবিটি আপলোড করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে ১ জানুয়ারি। 'দ্য লাইফ' সিরিজের এই ছবিটি তুলেছিলেন উইলিয়াম এফ ক্যাম্পবেল। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,
‘‘হাইতি উদ্বাস্তুদের আমেরিকার উপকূল বাহিনী আটক করে। আমেরিকায় শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে চাওয়া হাইতি উদ্বাস্তুদের সমুদ্র থেকে উপকূল বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, আমেরিকার নৌ বেস ক্যাম্পে। আটক করা হয় আমেরিকার কোর্টের প্রত্যাবর্তন রায় বিচারধীন থাকায়।
গেটি ইমেজেস-এ ছবিটি দেখা যাবে এখানে। উইলিয়াম এফ ক্যাম্পবেল-এর 'দ্য লাইফ' সিরিজের হাইতি শরনার্থীদের আমেরিকার বেস ক্যাম্পে আটক রাখার আরও দুটি ছবি দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
নিউটাউন ও বনগাঁতে তৈরি হওয়া এনআরসির ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির ব্যাপার নিয়ে রাজ্য কারামন্ত্রী উজ্জল বিশ্বাস গণমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছেন, ওই ক্যাম্পদুটি তৈরি করা হচ্ছে বিদেশি নাগরিক বন্দিদের জন্য যারা এদেশে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওই বন্দিদের আলাদা রাখার জায়গা তৈরি করা হচ্ছে।
প্রথম ডিটেনশন সেন্টার তৈরির জন্য নিউ টাউনে শুধুমাত্র জমি চূড়ান্ত হয়েছে। আর দ্বিতীয় সেন্টারটি তৈরির জন্য বনগাঁয় জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তবে সেটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কোনও সরকারি ভবনকে অস্থায়ী ডিটেনশন সেন্টারের রূপ দিয়ে বিদেশী বন্দিদের রাখা হবে।
২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি নির্দেশিকার কথা উল্লেখ করেছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী। এই নির্দেশিকায় অনুপ্রবেশকারী এবং সাজার মেয়াদ শেষের পরে বিদেশের নাগরিকদের প্রত্যবর্তনের আগে তাদের রাখার জন্য প্রতিটি রাজ্যে অন্তত একটি ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কথা বলা হয়েছে। এব্যাপারে টেলিগ্রাফ ও এইসময়ের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে ও এখানে।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান এনআরসি লাগু করার বিপক্ষে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি রাজ্যসভায় বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশেই এনআরসি চালু করবে। পাশাপাশি তিনি বলেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যেম বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে এদেশে আসা ‘হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রীস্টান’ ধর্মাবলম্বীদেরর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।