করাচিতে ২০১৫ সালে তাপপ্রবাহে মৃতদের ছবিকে বালাকোটের প্রমাণ হিসেবে ভাইরাল
ওই পুরনো ছবি ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট অভিযানের প্রমাণ হিসেবে ভাইরাল হয়েছে
মিথ্যে ক্যাপশন সমেত ২০১৫ সালের বেশ কিছু ছবি হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে। বলা হয়েছে পাকিস্তানের বালাকোটে জৈশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরের ওপর ভারতীয় বায়ুসেনার আক্রমণের পর মৃত জঙ্গিদের দেখা যাচ্ছে ওই ছবিতে।
করাচিতে ২০১৫ সালের ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহে মৃত মানুষের দেহ দেখা যাচ্ছে ওই ছবিতে, কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়াতে সেটিকেই “বালাকোট আক্রমণের প্রমাণ” বলে শেয়ার করা হচ্ছে।
ছবিগুলি শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকেও। সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “পাকিস্তানের বালাকোটে…ভারতীয় বিমান হানায় ৩৫৮ জঙ্গি মৃত…और भी सबूत चाहिए किसी को। जय जवान जय भारत। (আরও প্রমাণ কি চায় কেউ? জয় জওয়ান জয় ভারত!)
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন, আর তার আরকাইভ সংস্করণের জন্য এখানে ।
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯ তারিখে বিমান হানার পর, বুম একাধিক পুরনো ছবি আর ভিডিও খন্ডন করেছে। সেগুলি ওই অভিযানের থেকে নেওয়া বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। আরও জানতে পড়ুন ‘পুরনো ছবি যেগুলি আইএএফ-এর বিমান হানায় মৃত জঙ্গিদের বলে চালানোর অপচেষ্টা হয়েছিল’।
তথ্য যাচাই
প্রতিটি ছবি যাচাই করে দেখতে, বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, সবকটি ছবিই পুরনো। তিনটি ভাইরাল ছবি ছিল ২০১৫ সালের, আর একটি ২০১৩ সালের। যে ছবিটিতে কয়েকজন লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে এক গণকবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, সেটি ফটো সরবরাহ এজেন্সি গেট্টি ইমেজেস-এর ছবি, যেটি ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় ছাপা হয়েছিল। গেট্টির কথা অনুযায়ী, ছবিগুলি তোলা হয়েছিল ২০১৫ সালে। সে বছর এক মারাত্মক তাপপ্রবাহে করাচি সহ পাকিস্তানের নানা প্রান্তে প্রায় ১,০০০ মানুষ প্রাণ হারান।
গেট্টির ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছিল: “জুন ২৬, ২০১৫; পাকিস্তানের এধি সেবামূলক সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা তাপপ্রবাহে মৃত মানুষের অসনাক্ত দেহ কবর দিচ্ছেন করাচির এক গোরস্থানে। পাকিস্তানের সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলির কর্মীরা, ২৬ জুন গত কয়েক দশকের মধ্যে করাচির সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহে মৃত ব্যক্তিদের ৫০ জনের জন্য গণকবরের ব্যবস্থা করে। তাঁদের দেহ সনাক্ত করেনি কেউ। কয়েক দিনের দগ্ধ করার মতো তাপমাত্রায়, ১,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা যান দক্ষিণ পাকিস্তানে। তার মধ্যে সুবিস্তৃত করাচি শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
“করাচি তাপপ্রবাহ”—ওই দুটি শব্দ ব্যবহার করে গেট্টিতে সার্চ করলে আরও একটি ছবি উঠে আসে। ওই একই ঘটনার ছবি সেটিও। তাতে তাপপ্রবাহে মৃত ব্যক্তিদের দেহগুলি করাচির এক মর্গে থাকতে দেখা যায়।
এই ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, “জুন ২২, ২০১৫; এক পাকিস্তানি স্বেচ্ছাসেবক তাপপ্রবাহে মৃত এক ব্যক্তির দেহে সনাক্তকরণের কাগজ লাগাচ্ছেন এধি মর্গের হিমঘরে। পাশে রাখা আছে আরও অনেক দেহ। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলছেন, পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি এবং দক্ষিণ সিন্ধ প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ১২২ জন মারা গেছেন। দক্ষিণের ওই বন্দর শহরে ২০ জুন তাপমাত্রা ওঠে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১১ ডিগ্রি ফ্যারেনহাইট)। সেটা ছিল ১৯৭৯ সালে, জুন মাসে ওই শহরের সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের একটু কম।”
তৃতীয় ছবিটিতে একজনকে একটি দেহ মর্গের হিমঘরে রাখতে দেখা যাচ্ছে। ‘টাইম.কম’ ওই ছবিটি ব্যবহার করেছিল ওই তাপপ্রবাহের ওপর এক প্রতিবেদনে। ছবিটির জন্য ইউরোপিয়ান প্রেস ফটো এজেন্সিকে ক্রেডিট দেওয়া হয় ওই লেখায়।
ইপিএ-র ওয়েবসাইট সার্চ করলে ২০১৫ সালের ওই ছবিটি পাওয়া যায়। তার ক্যাপশনে বলা হয়: “উদ্ধারকারীরা তাপপ্রবাহে মৃতদের দেহ পাকিস্তানের করাচির এক মর্গে নিয়ে যাচ্ছেন ২২ জুন, ২০১৫ তারিখে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, ওই তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫০ গিয়ে দাঁড়ায় ২২ জুন তারিখে। দক্ষিণের বন্দর শহর করাচিতে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সপ্তাহের শেষে সেখানে তাপমাত্র ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। সোমবারেও তা কমার কোনও আশা নেই, বলেন স্বাস্থ্য আধিকারিক ইজাজ আফজল।” চতুর্থ ছবিটিতে কিছু লোককে একটি গণকবর ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ২০১৩ সালের। পাকিস্তানের শহর কোয়েট্টায় এক বিস্ফোরণের পর সেটি তোলা হয়। ওই একই ধরনের ছবি পাওয়া যায় ফটো সরবরাহকারী সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ওয়েবসাইটে।
ছবিটি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে আপলোড করা হয়েছিল। সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়: “শনিবার পাকিস্তানের কোয়েট্টায় বোমা বিস্ফোরণে হতাহতদের জন্য কবর প্রস্তুত করছেন কিছু পাকিস্তানি, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। এক বোমা আক্রমণে বহু মানুষ মারা যাওয়ার পরের দিন, ওই রবিবারে, বিক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দরা, শিয়া মুসলমানদের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দাবি করেন। ঘটানাটি সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন সুরক্ষা সংস্থাগুলি তাদের কাজ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।”