ভারত কৃত্রিম উপগ্রহকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নামানোর ক্ষমতা অর্জন করেছেঃ মিশন শক্তি বিষয়ে পাঁচটি জ্ঞাতব্য
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ২৭ মার্চের ভাষণের মূল কথাগুলি বুম সারসংক্ষেপ করেছে, যেখানে তিনি কৃত্রিম উপগ্রহ নামানোর নতুন ক্ষমতা অর্জনের কথা ঘোষণা করেছেন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন—ভারত ভূ-সমলয় কক্ষে আবর্তনশীল কৃত্রিম উপগ্রহ গুলি করে নামানোর ক্ষমতা অর্জনে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়ে উঠেছে ।
সাধারণ নির্বাচন শুরুর তিন সপ্তাহও বাকি নেই, এমন সময়ে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন মারফত প্রচারিত তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর দাবি—“এই সাফল্য এ ব্যাপারে বিশ্বের প্রথণ তিনটি রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চিনের ঠিক পরেই চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারতকে প্রতিষ্ঠা করেছে ।”
তাঁর ভাষণের মূল ৫টি বিষয়ঃ
১)ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জীবন্ত উপগ্রহ নামাতে পেরেছেন
ভারতীয় বিজ্ঞানীরা উপগ্রহ-রোধী ক্ষেপণাস্ত্র (এ-স্যাট) প্রয়োগ করে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উপরের ভূ-সমলয় কক্ষে একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে ধ্বংস করে দিয়েছেন । বিদেশ মন্ত্রক প্রকাশিত এক প্রশ্নোত্তরমালায় জানানো হয়েছে, পরীক্ষামূলক এই অভিযানটি নিম্ন আবহমণ্ডলে চালানো হয়, যাতে মহাকাশে এই ধ্বংসকাণ্ডের কোনও জঞ্জাল ভাসমান অবস্থায় না থাকে । যাবতীয় ধ্বংসোত্তর আবর্জনা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে পৃথিবীর মাটিতে নেমে আসবে ।
২) মিশন শক্তিঃ একটি সম্পূর্ণ দেশজ প্রয়াস
অভিযানটির নাম দেওয়া হয়—“মিশন শক্তি” । পরিচালনা করেন প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) বিজ্ঞানীরা, মাত্র তিন মিনিট স্থায়ী একটি পরীক্ষায় ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে সম্পন্ন বলে দাবি করেছেন এবং অত্যন্ত জটিল এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত উচ্চ গতিতে নিখুঁত লক্ষ্যে সফল করার জন্য ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন ।
৩) ভারত একটি মহাকাশ-শক্তি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন—“আজ ভারত মহাকাশেও একটি শক্তি হিসাবে নিজের নাম নথিভুক্ত করে নিল । এতদিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চিন, এই তিনটি রাষ্ট্রই এই কৃতিত্বের দাবিদার ছিল । এবার ভারত হল চতুর্থ শক্তি ।”
এই কৃতিত্বকে ভারতের চলমান মহাকাশ গবেষণা প্রকল্পের সাফল্যের প্রতীক হিসাবেই সরকার তুলে ধরতে চায় ।
প্রসঙ্গত, ভারতের মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচির সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন কী ভাবে কৃষি, বিপর্যয় মোকাবিলা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং স্থল-জল-অন্তঃরীক্ষে চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট উপগ্রহ ইতিমধ্যেই ভারত ভূ-সমলয় কক্ষে সফলভাবে স্থাপন করতে পেরেছে ।
৪) প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এর সঙ্গে জড়িত
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস—কৃত্রিম উপগ্রহ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে নামিয়ে দেবার এই নবার্জিত ক্ষমতা একান্তভাবেই প্রতিরক্ষার জন্য এবং এটা দেশের নিরাপত্তাকে আরও নিশ্ছিদ্র করবে । তিনি বলেন—“আমি বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই যে ভারত তার এই ক্ষমতা অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে না, এটা তার নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় ।”
এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “এই পরীক্ষামূলক অভিযানটি চালানো হয় এটা যাচাই করে নিতে যে, মহাকাশে তার নিজস্ব সম্পদগুলি সুরক্ষিত করার ক্ষমতা ভারতের আছে কিনা । কেননা বহিঃমহাকাশে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করার দায়িত্বও ভারত সরকারেরই ।”
৫) কার উপগ্রহ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে নামানো হলো?
তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলেননি যে, জ্যান্ত উপগ্রহটি কোন দেশের, কেবল বলেছেন, সেটি জীবন্ত ছিল এবং খুব নিচু ভূ-সমলয় কক্ষপথে অবস্থান করছিল ।
তবে বিদেশ মন্ত্রক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নামানো উপগ্রহটি ভারতেরই এবং এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ যেখানে তিনি বলছেন যে, এই অভিযনে ভারত আন্তর্জাতিক মহাকাশ চুক্তির কোনও শর্ত লঙ্ঘন করেনি ।