মতুয়া জনগোষ্ঠীর “বড়মা”-র একটি পুরনো ছবি প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করে নিয়ে ভাইরাল
টুইটে যে ফোটোগ্রাফটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বহু পুরনো এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঠাকুরনগরে সভা করতে যাওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই ।
মতুয়া জনগোষ্ঠীর বড়মা বীণাপাণি দেবীকে তাঁর পুত্রবধূ তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ থেকে নির্বাচিত বিধায়ক মমতাবালা ঠাকুর নিগ্রহ করেছেন, এই মর্মে একটি টুইট ভাইরাল হয়েছে। টুইটটি বিভ্রান্তিকর । টুইটে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বহু পুরনো এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঠাকুরনগরে সভা করতে যাওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই । টুইটে বড়মার বিধ্বস্ত, আহত যে ছবিটি প্রকাশিত, তা থেকে যেন এই ধারণা দেবার চেষ্টা হয়েছে যে শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠাকুরনগরে সভা করার পর এটি তোলা হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী বড়মা বীণাপাণি দেবীর সঙ্গেও দেখা করেন তাঁর বাসস্থানে গিয়ে ।
টুইটের ক্যাপশনটি এ রকমঃ “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মতুয়াদের গুরুমা বীণাপাণি দেবীর সঙ্গে দেখা করতে যান, যাঁকে তাঁর পুত্রবধূ তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মমতাবালা ঠাকুর বেদম প্রহার করেছেন ।” টুইটটির লক্ষ্য স্পষ্টতই মমতাবালা ঠাকুরকে জনচক্ষে এই বলে হেয় করা যে, তিনি তাঁর শাশুড়ি বড়মাকে দুচক্ষে দেখতে পারেন না ।
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন । টুইটটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। নীচে স্ক্রিনশট দেখুন।
টুইটটির মাধ্যমে একটা ভুল ধারণা সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছে । আমরা ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখেছি, এটি ২০১৬ সালে তোলা একটি পুরনো ছবি । সে সময় খবর বেরিয়েছিল, ৯৭ বছর বয়স্ক বড়মা বীণাপাণি দেবী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন । সেই সঙ্গেই বীণাপাণি দেবীর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বৌদি মমতাবালার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন যে মমতাবালা নাকি শাশুড়ি বীণাপাণি দেবীকে মারধর করেছেন । এই অভিযোগ তিনি নিকটবর্তী গাইঘাটা থানায় লিখিতভাবে দায়েরও করেন । যদিও আঘাতের আসল কারণ জানা যায়নি।
বুম মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন ছবিটি পুরনো এবং ২০১৬ সালের । কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মঞ্জুলকৃষ্ণের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেন । তিনি বলেন—“ছবিটি পুরনো এবং এখন ভাইরাল করা হচ্ছে । ২০১৬ সালে আমার শাশুড়ি একটা নিচু খাট থেকে পড়ে গিয়ে বিষম চোট পান। তাঁর বয়সের কথা ভেবে আমরা একটা নিচু খাটেই তাঁর শোবার ব্যবস্থা করেছিলাম । ঘুমের মধ্যে পড়ে গিয়ে চোট পাওয়ায় তাঁকে আমরা সঙ্গে-সঙ্গে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি এবং সেখানে ডাক্তার এস নস্করের অধীনে তাঁর চিকিৎসা হয় । পরে আমার দেওর মঞ্জুলকৃষ্ণ এ জন্য আমার বিরুদ্ধে গাইঘাটা থানায় ডায়েরি করে ।”
বুম গাইঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে মামলাটি পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে বানচাল হয়ে গেছে । নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসার জানান, মামলাটি পুরনো এবং তার সপক্ষে তেমন কোনও প্রমাণই অভিযোগকারী দাখিল করতে পারেনি ।
মতুয়া জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে
মতুয়া আন্দোলন একটি ধর্ম-সংস্কার আন্দোলন যা শুরু হয়েছিল সাবেক পূর্ববঙ্গে । দেশভাগের পর মতুয়াদের বিপুল অংশই উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ঠাকুরনগরে এসে ডেরা বাঁধে । তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ের পিছনে মতুয়া মহাসংঘের ভূমিকা নির্ণায়ক । ২০১১ সালের নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির বিপুল নির্বাচনী সাফল্যের পিছনেও মতুয়া জমগোষ্ঠীর সমর্থনের ক্রিয়া ছিল ।
বড়মা বীণাপাণি দেবীর অবর্তমানে মতুয়া মহাসংঘের নেতৃত্ব কার উপর বর্তাবে, তা নিয়ে স্বভাবতই সংঘের কর্মকর্তা ও বড়মার পরিবারের মধ্যে মতান্তর রয়েছে । ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়া মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে বীণাপাণি দেবী তাঁর উত্তরাধিকারী বলে মানতে অস্বীকার করেছেন । তিনি প্রকাশ্যেই পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুরকে সমর্থন করেছেন এবং তাঁর আশীর্বাদ নিয়েই মমতাবালা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন । সংবাদে প্রকাশ বীণাপাণি দেবী মমতাবালাকেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে দেখতে আগ্রহী এবং
নানান সুত্র থেকে জানা গেছে যে মঞ্জুলকৃষ্ণ চান মহাসংঘের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ হোক।